আজকে আমরা উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে আলোচনা করবো।

Table of Contents
উত্তরাধিকার আইন
উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি যারা ভোগ করার অধিকারী তারাই উত্তরাধিকার। বাংলাদেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করে। এখানে কেবল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ উত্তরাধিকার আইন নিয়ে আলোচনা করা হলো
মুসলিম উত্তরাধিকার আইন (সুন্নী)
বাংলাদেশে ‘মুসলিম পরিবারিক আইন, ১৯৬১ অনুযায়ী বিয়ে, দেনমোহর, তালাক, হেবা, ওয়াকফ, উইল, খোরপোষ, অভিভাকত্ব উত্তরাধিকার ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
মুসলিম আইনের উৎস
(ক) আল-কোরআন, (খ) হাদীস বা সুন্নাহ, (গ) ইজমা, এবং (ঘ) কিয়াস আল-কোরআন হচ্ছে মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের মূল উৎস। পবিত্র কোরআনের সূরা আল নিসার ১১, ১২ ও ১৭৬ নং আয়াতে মুসলিম ফারায়েজ সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে। এ ছাড়া হাদিস, ইজমা ও কিয়াস মুসলিম আইনের অন্যতম উৎস।
উত্তরাধিকারযোগ্য সম্পত্তি
কোন মুসলমানের মৃত্যুর পর তার ত্যাজ্য সম্পত্তি থেকে (ক) মৃত্যুশয্যাকালীন ও দাফন-কাফন খরচ (খ) মৃত্যুর তিন মাস পূর্ব পর্যন্ত সেবা-শুশ্রূষার খরচ, (গ) ঋণ পরিশোধ, (খ) উইল/দান পরিশোধের পর যে সম্পত্তি থাকে তাই তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত হবে।
উত্তরাধিকার বা ওয়ারিশ
মুসলিম আইনে ওয়ারিশ তিন ধরনের
(১) অংশীদারঃ
পবিত্র কোরআনে যাদের অংশ নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে তারাই অংশীদার। যেমন-পিতা, মাতা, দাদা, দাদী, স্বামী/স্ত্রী (৫ জন)।
(২) রেসিডুয়ারী (আসাবা)/পরিত্যক্ত অংশভোগীঃ
এরা নির্ধারিত অংশ পায় না। অংশীদারদের মধ্যে নির্ধারিত অংশ দেয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি এরা পাবে। যেমন পুত্র, ভাই, চাচাত ভাই, ভাইয়ের পুত্র (৪ জন)।
(৩) দূর সম্পর্কের আত্মীয়ঃ
উপরোক্ত দু’ধরনের কোনটিরই অন্তর্ভুক্ত নয় অথচ রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়। যেমন ভাগ্নি, ভাতিজি, চাচাত বোন (৩ জন) = মোট ১২ জন উত্তরাধিকার।

মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে সম্পদ বণ্টন (ফারায়েজ) নীতি
১। কোন মুসলমানের মৃত্যুর সাথে সাথেই তার সম্পত্তির স্বত্ব ওয়ারিশদের উপর বর্তায়
২। মৃতের রেখে যাওয়া মোট সম্পত্তিতে পূর্বে সনাতন পদ্ধতিতে ১৬ আনা বা ১ ধরে বন্টন করা হতো, আধুনিককালে ১০০০ ধরে বণ্টন করা হয় ।
৩। সমপর্যায়ের নারী পুরুষের অর্ধেক পাবে। অর্থাৎ প্রত্যেক পুত্র কন্যার দ্বিগু পাবে (ব্যতিক্রম পিতা, মাতা)।
৪ । নিকটবর্তীয় কারণে দূরবর্তী সম্পত্তি পাবে না। যেমন— পিতা বেঁচে থাকলে দাদা পাবে না।
৫। মৃত্যুকালে যার দ্বারা সম্পর্কযুক্ত তিনি বেঁচে থাকলে পরবর্তী সম্পর্কযুক্ত ব্যকি পাবে না। যেমন— পিতা থাকলে ভাই পাবে না।
৬। পুত্র না থাকলে কন্যা একজন হলে ১/২ বা ৫০০ অংশ পাবে, একাধিক হলে ২/৩ বা ৬৬৭ (সকল একত্রে) অংশ পাবে (মোট সম্পত্তি ১০০০ ধরে)।
৭ । স্বামীর সন্তান বর্তমানে স্ত্রী ১/৮ – অংশ বা ১২৫ অংশ পাবে, স্বামী নিঃসন্তান হলে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির ১/৪ বা ২৫০ অংশ পাবে (স্ত্রী একাধিক হলে সব একত্রে ঐ পরিমাণই পাবে)।
৮। স্ত্রীর সন্তান থাকলে স্বামী ১/৪ – বা ১২৫ অংশ পাবে, স্ত্রী নিঃসন্তান হলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/২ – বা ৫০০ অংশ পাবে।
৯। সন্তান থাকলে পিতা ১৬৭ (১/৬) অংশ, সন্তান না থাকলে পিতা অপর শরীকের প্রাপ্য দেওয়ার পর বাকি অংশ পাবে।
১০ । সন্তান থাকলে মাতা ১৬৭ অংশ সন্তান না থাকলে ৩৩৩ বা ১/৩ অংশ পাবে। (দুই বা ততোধিক ভাইবোন থাকলে মাতার অংশ বৃদ্ধি পাবে না)
১১। স্বামী/স্ত্রী বেঁচে থাকলে স্বামী বা স্ত্রীর অংশ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে মাতা তার ১৬৭ অংশ পাবে।
১২। পুত্র বা পিতার বর্তমানে ভাই/বোন ওয়ারিশ হয় না।
১৩। পিতা, পুত্র, কন্যা বা ভাই/বোন না থাকলে দূরবর্তী আত্মীয়গণ সম্পত্তি পাবে।
১৪ । মৃত ব্যক্তি নিঃসন্তান হলে পিতা ৬৬৭ অংশ মাতা ৩৩৩ অংশ পাবে ।
১৫। পিতা, মাতা ও সন্তান না থাকলে বোন থাকলে সে ৫০০ অংশ পাবে, বোন একাধিক হলে একত্রে ৬৬৭ অংশ, ভাই ও বোন থাকলে, ভাই বোনের দ্বিগুণ পাবে।
১৬। নিঃসন্তান বোনের সম্পত্তি ভাই পাবে।
১৭। প্রাথমিক উত্তরাধিকারী ৫ জন, যথা (ক) সন্তান (খ) পিতা (গ) মাতা (ঘ) স্বামী এবং (ঙ) স্ত্রী— এরা কখনো বঞ্চিত হবে না।
১৮। গৰ্ভস্থ সন্তান জীবিত গণ্যে উত্তরাধিকারী হবে। তাই গর্ভের সন্তানকে পুত্র গণ্য করে বা তার জন্মের পরে সম্পদ বণ্টন করতে হবে।
১৯। প্রাপ্য সম্পত্তির আনুপাতিক হারে মৃতের দেনা (যদি থাকে) ওয়ারিশদের পরিশোধ করতে হবে।
২০। নপুংসক সন্তানকে মেয়ে গণ্যে সম্পদ বন্টন করতে হবে।
২১। যার সম্পত্তি বণ্টিত হচ্ছে তার মৃত্যুর পূর্বে তার কোন পুত্র/কন্যা মারা গেলে মৃত পুত্র/কন্যার কোন সন্তান বর্তমান থাকলে সে সন্তান ঐ পরিমাণ সম্পত্তি পাবে যা ) তার/তাদের পিতা/মাতা জীবিত থাকলে পেত । (৪ ধারা মুঃ পাঃ আঃ ৬১)
২২। মৃতের পুত্র, পিতা, পৌত্র জীবিত থাকলে বোন সম্পত্তি পাবে না।
২৩। সহোদর ভাই বৈমাত্রেয় ভাইদের আগে ওয়ারিশ হবে।
২৪ । বৈপিত্রেয় ভাই একজন হলে ১৬৭ অংশ, একাধিক হলে একত্রে ৩৩৩ অংশ পাবে।
২৫। মৃত ব্যক্তির পুত্র/কন্যা, পৌত্র, বা দাদা বর্তমান থাকলে বৈপিত্রেয় বৈমাত্রেয় ভাই/বোন কোন সম্পত্তি পাবে না।
২৬। কোন উত্তরাধিকারী সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে যদি (ক) যার সম্পত্তি তাকে হত্যা করে, অথবা (খ) ভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করে।
২৭। মা’র সম্পত্তিতে কন্যা পিতার সম্পত্তির ন্যায় অংশ পাবে।

ফারায়েজ অনুযায়ী ১২ জন অংশীদার যেভাবে সম্পত্তি পাবে
১। পিতা :
(ক) মৃতের পুত্র/পুত্রের পুত্র বা তার নিম্নে কেহ থাকলে পিতা পাবে ১৬৭ অংশ ।
(খ) পুত্র না থাকলে কন্যা বা তার নিম্নের কেউ থাকলে পিতা ১৬৭ অংশ এবং আসাবা হিসাবে সম্পত্তি পাবে।
(গ) মৃতের পুত্র, কন্যা বা তার নিম্নে কেউ না থাকলে পিতা আসাবা/রেসিডুয়ারী হবে।
২। দাদাঃ
দাদা উপরে বর্ণিত ‘পিতার ন্যায় সম্পত্তির অংশ পাবে, তবে পিতা জীবিত থাকলে দাদা কোন সম্পত্তি পাবে না। পিতার অবর্তমানেই কেবল পিতার উল্লিখিত তিন অবস্থায় দাদা সম্পত্তি পাবে।
ব্যতিক্রমঃ
(ক) পিতা থাকলে দাদী অংশ পাবে না, কিন্তু পিতা না থাকলে এবং দাদা থাকলে দাদার সঙ্গে দাদী অংশ পাবে।
(খ) মাতা, পিতা এবং স্বামী/স্ত্রী রেখে কেউ মারা গেলে স্বামীর বা স্ত্রীর অংশ দেওয়ার পর বাকি সম্পত্তির ৩৩৩ মাতা এবং ৬৬৭ অংশ আসাবা হিসেবে পিতা পাবে।
৩। স্বামীঃ
(ক) সন্তান বা সন্তানের বা তার নিম্নে কেউ না থাকলে ৫০০ অংশ।
(খ) সস্তান বা সন্তানের সন্তান থাকলে পাবে ২৫০ অংশ।
৪। স্ত্রীঃ
(ক) সন্তান/সন্তানের পুত্র/যতই নিম্নতম হোক না থাকলে পাবে ২৫০অংশ।
(খ) সন্তান বা সন্তানের সন্তান থাকলে পাবে ১২৫ অংশ।
৫। মাতাঃ
(ক) সন্তান/সন্তানের পুত্র/তার নিম্নের কেহ থাকলে ভাই/বোন এর দু’জনই থাকলে মাতা পাবে ১৬৭ অংশ।
(খ) ‘ক’ দফায় উল্লিখিত ওয়ারিশগণ না থাকলে মাতা পূর্ণ সম্পত্তির ৩৩৩ অংশ পাবে।
(গ) পিতা এবং স্বামী/স্ত্রী বর্তমান থাকলে, স্বামী বা স্ত্রীকে দেয়ার পর মাতা পাবে বাকি সম্পত্তির ৩৩৩ অংশ।
৬। দাদী/নানীঃ
পিতা/মাতা না থাকলে দাদী/নানী ১৬৭ অংশ পাবে।
৭। কন্যাঃ
(ক) পুত্র না থাকলে কন্যা পাবে ৫০০ অংশ।
(খ) পুত্র থাকলে কন্যা পুত্রের অর্ধেক পাবে।
(গ) দুই বা ততোধিক কন্যা থাকলে একত্রে পারে ৬৬৭ অংশ ।
৮। পুত্রের কন্যাঃ
(ক) পুত্র/কন্যা, পুত্রের পুত্র/কন্যা না থাকলে ৬৬৭ অংশ
(খ) মূত্রের এক কন্যা থাকলে পুত্রের কন্যা ১৬৭ অংশ পাবে।

৯। বৈপিত্রেয় ভাইঃ
সন্তান/সন্তানের সন্তান, পিতা/দানা না থাকলে ১৬৭ অংশ একাধিক হলে একত্রে ৩৩৩ অংশ পাবে।
১০। বৈপিত্রেয় বোনঃ
বৈপিত্রের ভাইয়ের ন্যায় পাবে।
১১। বোনঃ
(ক) নিজের সন্তান/সন্তানের পুত্র/পিতা/দাদা/ভাই না থাকলে ৫০০ অংশ, একাধিক হলে একরে ৬৬৭ অংশ পাবে।
(খ) বোন সহোদর ভাইয়ের অর্ধেক পাবে।
(গ) মৃতের পুত্র/পুরের পুত্র/পিতা/দাদা থাকলে বোন কোন অংশ পাবে না।
১২। বৈমাত্রেয় বোনঃ
(ক) সস্তান/সন্তানের পুত্র/পিতা/দাদা/ভাই বোন/বৈমাত্রেয় ভাই না থাকলে ৫০০ অংশ, একাধিক বৈমাত্রেয় বোন হলে পাবে ৬৬৭ অংশ।
(খ) বৈমাত্রেয় ভাই থাকলে বৈমাত্রেয় বোন তার সঙ্গে আসাবা হবে।
(গ) একজন সহোদর বোন থাকলে বৈমাত্রেয় বোন ১৬৭ অংশ পাবে কিন্তু একাধিক সহোদর বোন থাকলে বৈমাত্রেয় বোন পাবে না।
(ঘ) মৃতের কন্যা/পুত্রের কন্যা থাকলে বৈমাত্রেয় বোন আসাবা হবে এবং অংশ পাবে।
রেসিডুয়ারী বা আসাব হিসেবে যারা সম্পত্তির অংশ পেতে পারে তাদের নামের তালিকা নিম্নরূপ :
(১) বংশধরঃ
(ক) পুত্র (খ) পুত্রের পুত্র।
(২) পূর্ববর্তী বংশধরঃ
(ক) পিতা (খ) দাদা।
(৩) পিতার বংশধরঃ
(ক) ভাই (খ) বোন (গ) বৈমাত্রেয় বোন (ঘ) বৈমাত্রেয় তাই (ঙ) ভাইয়ের ছেলে (চ) বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ছেলে (ছ) বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ছেলের ছেলে (জ) ভাইয়ের ছেলের ছেলে।
(৪) দাদার বংশধরঃ
(ক) চাচা (খ) বৈমাত্রেয় চাচা (গ) চাচার ছেলে (ঘ) বৈমাত্রেয় চাচার ছেলে (ঙ) চাচার ছেলের ছেলে (চ) বৈমাত্রেয় চাচার ছেলের ছেলে (ছ) আরো দূরবর্তী বংশধর।
আউল নীতি (হ্রাসকরণ)ঃ
মুসলিম সুন্নী আইনের বিধান মতে সম্পত্তির অংশীদারদের অংশ বণ্টন করে দেওয়ার পর যদি দেখা যায় যে বণ্টিত অংশের সমষ্টি মোট সম্পত্তির এককের চেয়ে বেশি। তখন বণ্টিত অংশ আনুপাতিক হারে কমিয়ে দেয়ার নিয়মকে বলে আউল নীতি ।
রাদ্দ (ফেরত নীতি)ঃ
অংশীদারদের অংশ দেয়ার পর সম্পত্তি উদ্বৃত্ত থাকলে তা আনুপাতিক হারে অংশীদারদের মধ্যে পুনরায় বণ্টন করার নিয়মকে বলে রাদ্দ বা ফেরত নীতি ।
নিম্নে আউল এবং রাদ্দের ভিত্তিতে সম্পত্তি আনুপাতিক হারে হ্রাস ও বৃদ্ধি করার কিছু সহজ পদ্ধতি তুলে ধরা হল
আউল নীতিতে সম্পত্তি আনুপাতিক হারে হ্রাস করার নিয়ম
(১) মোট সম্পত্তি ১।
(২) সকল ওয়ারিশের প্রাপ্য অংশ যোগ (লসাগু) করে।
(৩) (কোন ওয়ারিশের নির্ধারিত অংশ) / (অংশসমূহের সমষ্টি) = কোন ওয়ারিশের প্রাপ্য অংশ।
উদাহরণঃ স্ত্রী + ২ বোন + ২ বৈঃ পিঃ বোন + মাতা
সাধারণ নিয়মে ১/৪+২/৩+১/৩+১/৬ =(৩+৮+৪+২)/১২ = ১৭/১২
আউল নীতি অনুসারে স্ত্রী পাবে = (১/৪)/(১৭/১২) = (১/৪)*(১২/১৭) = ৩/১৭ অংশ
অনুরূপভাবে ২ বোন পাবে = (২/৩)/(১৭/১২) = (২/৩)*(১২/১৭) = ৮/১৭ অংশ
অনুরূপভাবে ২ বৈঃ পিঃ বোন পাবেন = (১/৩)/(১৭/১২) = (১/৩)*(১২/১৭) = ৪/১৭ অংশ।
মাতা পাবে = (১/৬)/(১৭/১২) = (১/৬)*(১২/১৭) = ২/১৭ অংশ।
অতএব দেখা যাচ্ছে আনুপাতিক হারে সকলের অংশ কমে বন্টিত অংশ বাস্তবের সঙ্গে
(৩/১৭ +৮/১৭+৪/১৭+২/১৭) সমান হয়েছে।
এভাবে শুধু অংশ নয় মোট সম্পত্তির পরিমাণও বের করা যায়। এক্ষেত্রে মোট সম্পত্তি যদি ১৭ একর ধরা হয় তবে স্ত্রী পাবে ১৭ এর ৩/১৭ = ৩ একর।
২ বোন একত্রে পাবে ১৭ এর ৮/১৭ = ৮ একর।
২ বৈঃ পিঃ বোন পাবে ১৭ এর ৪/১৭ = ৪ একর।
মাতা পাবে ১৭ এর ২/১৭ = ২ একর ।
রাদ্দ নীতিতে উদ্বৃত্ত সম্পত্তি বণ্টন পদ্ধতিঃ
(১) মোট সম্পত্তি ১
(২) প্রত্যেকের প্রাপ্য অংশ যোগ করে = লসা
(৩) ১ – (সকল ওয়ারিশের সম্পত্তির সমষ্টি) = মোট উদ্বৃত্ত সম্পত্তি
( ৪ ) ( কোন ওয়ারিশের নির্ধারিত অংশ) + (আসাবা প্রাপ্ত ওয়ারিশের অংশের সমষ্টি) × (মোট উদ্বৃত্ত সম্পত্তি) = কোন ওয়ারিশের প্রাপ্য বর্ধিত অংশ।
(৫) (কোন ওয়ারিশের নির্ধারিত অংশ) + (ওয়ারিশের প্রাপ্ত বর্ধিত অংশ) = ওয়ারিশের প্রাপ্ত মোট সম্পত্তি।

উদাহরণঃ
স্বামী + কন্যা + মাতা
১/৪+১/২+১/৬
= (৩+৬+২)/১২
= ১১/১২ (২ নং সূত্র মতে)
সম্পত্তি উদ্বৃত্ত থাকে = ১-১১/১২
= (১২-১১)/১২
= ১/১২ অংশ (৩নং সুত্র)
স্বামী আসাবা পাবে না। অতএব পাবে কেবল কন্যা ও মাতা (মুসলিম আইনানুযায়ী)
১/২ + ১/৬ = (৩+১)/৬ = ৪/৬ = ২/৩অংশ (আসাবা প্রাপ্য ওয়ারিশদের অংশের মোট)
কন্যা অতিরিক্ত পাবে =(১/২)/(২/৩)*(১/১২)
= (১/২)*(২/৩)*(১/১২)*(১/১২)
= ১/১৬ অংশ (৪ নং সূত্র)
মাতা অতিরিক্ত পাবে = (১/৬)/(২/৩)*(১/১২)
= (১/৬)*(২/৩)*(১/১২)*(১/১২)
= ৪৮ অংশ
সুতরাং কন্যা মোট সম্পত্তি পাবে = ১/২ + ১/১৬ = (৮+১)/১৬
=৯/১৬ অংশ (৫ নং সূত্র
এবং মাতা মোট সম্পত্তি পাবে = ১/৬ + ১/৪৮
= (৮+১)/৪৮
=৯/৪৮ অংশ পাবে।
অর্থাৎ স্বামী = ১/৪ অংশ,
কন্যা = ৯/১৬ অংশ,
মাতা = ৯/৪৮ অংশ পাবে।
ফারায়েজের কতিপয় উদাহরণঃ
১। ওয়ারিশ = ভাই + বোন + কন্যা
=(১/৩) + (১/৬) + (১/২)
২। ওয়ারিশ = পুত্র + কন্যা + বোন
= (১/২) + (১/৪) + ০
৩। ওয়ারিশ = পিতা+দাদা +মাতা + দাদী + কন্যা + পুত্রের কন্যা
= (১/৩) + ০ + (১/৬) + ০ + (১/২) + (১/৬)
৪। ওয়ারিশ = মাতা + দাদী + নানী + চাচা
= (১/৩) + ০ + ০ + (২/৩)
৫। ওয়ারিশ = ভাই + কন্যা + পৌত্রী
=(১/৩) + (১/২) + (১/৬) (১৯৬১ এর ১৫ জুলাই এর পূর্বে)
= ০ + (১/৩) + (২/৩) (১৫ জুলাই ৬১ হতে নির্ধারিত)
৬। ওয়ারিশ = কন্যা + মাতা + বোন
= (১/২) + (১/৬) + (১/৩)
৭। ওয়ারিশ = মাতা + পিতা + স্ত্রী
=(১/৪) + (১/২) + (১/৪)
৮। ওয়ারিশ = কন্যা + ভাই + ভাই (সহোদর)
=(১/২) + (১/৪) + (১/৪)
৯। ওয়ারিশ = কন্যা + ভাই + মাতা + বোন
=(১/২) + (২/৯) + (১/৬) + (১/৯)
১০। ওয়ারিশ = বোন+চাচা =(১/২) + (১/২) (চাচা আসাবা হিসাবে পাবে)।
১১। ওয়ারিশ = মাতা + কন্যা
=(১/৪) + (৩/৪)
১২। ওয়ারিশ = মাতা + পুত্র
=(১/৬) + (৫/৬)
১৩। ওয়ারিশ = স্ত্রী + পুত্র/কন্যা
=(১/৮) + (৭/৮)
১৪। ওয়ারিশ = মাতা + ভাই + বোন + কন্যা
=(১/৬) + (২/৯) + (১/৯) + (১/২)
১৫। ওয়ারিশ = মাতা + পিতা + ভাই – বোন
=(১/৬) + (৫/৬) + ০ + ০
১৬। ওয়ারিশ = স্ত্রী + পুত্র + কন্যা
=(১/৮) + (৭/১২) + (৭/২৪)
১৭। ওয়ারিশ = স্ত্রী + ভাই + বোন
=(১/৪) + (১/২) + (১/৪)
১৮। ওয়ারিশ = মাতা + কন্যা + বোন
=(১/২) + (১/৬) + (১/৩)
১৯। ওয়ারিশ = কন্যা + বৈমাত্রেয় ভাই + চাচা
=(১/৬) + (১/২) + (১/৩)
২০। ওয়ারিশ = কন্যা + স্ত্রী + ভাই + বোন
=(১/২) + (১/৮) + (১/৪) + (১/৮)
২১। ওয়ারিশ = পিতা + মাতা + স্ত্ৰী + ভাই
=(১/২) + (১/৪) + (১/৪) + ০
২২। ওয়ারিশ = স্বামী + মাতা + বোন + চাচা
প্রাথমিক অংশ =(১/২) + (১/৩) + (১/২) + ০ (মোট সম্পত্তি হতে বেশি)
আউলনীতি অনুসারে =(৩/৮) + (২/৮) + (৩/৮) + ০
২৩। ওয়ারিশ = স্বামী + কন্যা + পিতা + মাতা
প্রাথমিক অংশ = (১/৪) + (১/২) + (১/৬) + (১/৬)
আউলনীতি অনুসারে =(১/১৩) + (৬/১৩) + (২/১৩) + (২/১৩)
২৪। ওয়ারিশ = স্বামী + মাতা + ২ সহদোর বোন + ২ বৈপিত্রেয় বোন
প্রাথমিক অংশ = (১/২) + (১/৬) + (২/৩) + (১/৩)
আউলনীতি অনুসারে =(৩/১০) + (১/১০) + (৪/১০) + (২/১০)
২৫। ওয়ারিশ = স্ত্রী + ২ কন্যা + পিতা + মাতা
প্রাথমিক অংশ = (১/৮) + (২/৩) + (১/৬) + (১/৬)
আউলনীতি অনুসারে = (৩/২৭) + (১৬/২৭) + (৪/২৭) + (৪/২৭)
২৬। ওয়ারিশ = মাতা + কন্যা + স্ত্ৰী
প্রাথমিক অংশ = (১/৬) + (১/২) + (১/৮) (মোট সম্পত্তি হতে বণ্টিত অংশ কম)
রাদ্দ নীতি অনুসারে = (৭/৩২) + (২১/৩২) + (১/৮)
২৭। ওয়ারিশ = স্ত্ৰী + মাতা + বৈপিত্রেয় বোন + দাদী
প্রাথমিক অংশ = (১/৪) + (১/৩) + (১/৬) + ০
রাদ্দ নীতি অনুসারে = (১/৪) + (২/৪) + (১/৪) + ০ (স্ত্রী রাদ্দ বহির্ভূত)
২৮। ওয়ারিশ = স্বামী + ৩ কন্যা
প্রাথমিক অংশ = (১/৪) + (২/৩)
রাদ্দ নীতি অনুসারে = (১/৪) + (৩/৪)
আরও দেখুনঃ