আজকে আমরা আলোচনা করবো দেওয়ানী কার্যবিধির বিধান মোতাবেক কোর্টের মাধ্যমে বণ্টন সম্পর্কে ।

দেওয়ানী কার্যবিধির বিধান মোতাবেক কোর্টের মাধ্যমে বণ্টন
দেওয়ানী কার্যবিধির ৭৫ ধারার বিধানমতে আদালত কমিশন ইস্যু করেন এবং ১৮ আদেশের ২০ রুলের বিধানমতে বাটোয়ারার প্রাথমিক ডিক্রীর আদেশ প্রদান করেন।
২০ আদেশের ১৮ রুলের বিধান সম্পত্তি বাটোয়ারা বা কারো অংশের পৃথক পৃথক দখল সংক্রান্ত মামলায় ডিক্রী, যেক্ষেত্রে আদালত কোন সম্পত্তি বাটোয়ারার অথবা সম্পত্তির কোন অংশের পৃথক দখলের ডিক্রী প্রদান করবেন, সেক্ষেত্রে-
(১) যদি উক্ত ডিক্রী সরকারি রাজস্ব আদায়ী কোন ভূ-সম্পত্তি সম্পর্কে প্রদত্ত হয়, তবে সে ডিক্রীতে উক্ত সম্পত্তির স্বার্থসংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের অধিকার উল্লেখ করতে হবে। তৎসহ নির্দেশ দিতে হবে যে কালেক্টর অথবা তৎকর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে ধারার ভারপ্রাপ্ত কোন অধস্তন গেজেটেড অফিসার ডিক্রীর ঘোষণা ও ৫৪ বিধান অনুসারে উক্ত সম্পত্তির বাটোয়ারা বা পৃথক দখলদানের কার্য সম্পন্ন করবেন ।
(২) যদি উক্ত ডিক্রী অন্যকোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে প্রদত্ত হয় তবে উক্ত বাটোয়ারা বা পৃথক দখল দান করার জন্য অতিরিক্ত তদন্তের প্রয়োজন হলে আদালত একটি প্রাথমিক ডিক্রীর দ্বারা উক্ত সম্পত্তিতে স্বার্থসংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের অধিকার ঘোষণা করতে এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য নির্দেশ দান করতে পারেন ।
উক্ত আদেশে আরো উল্লেখ আছে যে-
(১) যেক্ষেত্রে সম্পত্তির হিসাব দাখিলের জন্য আদালতের ডিক্রী অনুসারে, সম্পত্তির যথাবিহিত বিলিব্যবস্থার জন্য মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেখানে আদালত চূড়ান্ত ডিক্রী প্রদানের পূর্বে একটি প্রাথমিক ডিক্রী প্রদান করবেন এবং তদ্বারা উক্ত সম্পত্তির প্রয়োজনীয় হিসাবাদি গ্রহণ ও অনুসন্ধানাদি পরিচালনার আদেশ দান করবেন।
(২) আদালত কর্তৃক কোন মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির বিলিবন্টনকালে যদি প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত সম্পত্তি মৃত ব্যক্তির সমস্ত দায় পরিশোধের জন্য যথেষ্ট নয়, তবে যে আদালতে উক্ত সম্পত্তি বিলিব্যবস্থার মামলা বিচারাধীন রয়েছে, সে আদালতের এখতিয়ারভুক্ত এলাকাধীন দেউলিয়া ব্যক্তিদের সম্পত্তি প্রসঙ্গে বন্ধকী পাওনাদার ও বন্ধকহীন পাওনাদারের আপেক্ষিক অধিকার, গ্রহণযোগ্য দেনা, বার্ষিক বৃত্তির পরিমাণ ও ভবিষ্যৎ দেনা সম্পর্কে বর্তমানে প্রচলিত আইন এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, এরূপ ক্ষেত্রে উক্ত সম্পত্তি হতে যাদের পাওনা পরিশোধ হবার যোগ্য, এরূপ সকল ব্যক্তি প্রাথমিক ডিক্রীর আওতায় পড়বে এবং এ আইন মোতাবেক তারা তাদের নিজ নিজ দাবী-দাওয়া পেশ করতে পারবে।

কমিশন নিয়োগ করাঃ
আদালত বাটোয়ারা কার্যকর করার জন্য কমিশন নিয়োগ করবেন। এর জন্য ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধির পরিশিষ্ট ‘জ’ এর ১০ নং নমুনা অনুসরণ করবেন ।
নমুনাটি নিম্নরূপঃ
……….. এর প্রতি
যেহেতু এ আদালত ২০০৫ সালের জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখে প্রদত্ত ডিক্রীতে বিভিন্ন পক্ষের স্বত্বানুসারে ডিক্রীতে বর্ণিত সম্পত্তি বাটোয়ারা করবার উদ্দেশ্যে কমিশন দেওয়া আবশ্যক হয়েছে, সেহেতু এতদ্বারা আপনাকে উক্ত উদ্দেশ্যে কমিশন নিয়োগ করা হল এবং এতদ্বারা আপনাকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে যে, আপনি প্রয়োজনীয় তদন্ত সমাপ্ত করে আপনার বিবেচ্য যেরূপ হবে সেরূপভাবে উক্ত ডিক্রীতে উল্লিখিত অংশানুপাতে ভাগ-বাটোয়ারা করবেন এবং বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে তা বিলিবন্টন করবেন।
এতদ্বারা আপনাকে ক্ষমতা দেওয়া যাচ্ছে যে, বিভিন্ন পক্ষের প্রাপ্য অংশের সমতা বিধানকল্পে একপক্ষকে অপরপক্ষ কর্তৃক টাকা দেওয়ার প্রয়োজন হলে আপনি এরূপ রোয়েদাদ প্রদান করতে পারবেন ।
এতদুদ্দেশ্যে আপনি কারো সাক্ষাৎ গ্রহণ করা প্রয়োজন মনে করলে বা কোন দলিল পরিদর্শন করবার প্রয়োজন মনে করলে আপনার আদেশক্রমে উক্ত সাক্ষী আপনার নিকট হাজির হওয়ার জন্য বা দলিল উপস্থিত করবার জন্য এখতিয়ারসম্পন্ন যে কোন আদালতের মাধ্যমে সমন দেওয়া যাবে।
এ নিয়োগের জন্য আপনার ফি বাবদ ……টাকা এতদসঙ্গে প্রেরণ করা হল । অদ্য ২০০৫ সালের জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ আমার স্বাক্ষর ও আদালতের সীলমোহরযুক্ত কমিশন দেওয়া হল ।

প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আপত্তিঃ কমিশনার কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে যদি কোন আপত্তি থাকে তা আদালতে পেশ করা যাবে। তবে তার বাবদ আপত্তি দাখিলের সময়সীমা দেওয়া হয়। উক্ত সময়ের মধ্যে আপত্তি দাখিল করতে হবে, অন্যথায় কোর্ট তা বিবেচনা করবেন না ।
আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য আদালত প্রয়োজনে অতিরিক্ত সন্ধানের আদেশ দিতে পারবেন। বিচারিক আদালতে আপত্তি উত্থাপন না করলে আপীল আদালতে আপত্তি উত্থাপন করা যায় না।
চূড়ান্ত ডিক্রী, দখল প্রদান চূড়ান্ত ডিক্রী বাস্তবায়নে যদি দেখা যায় কোন শরীকের ঘর পেচে গেছে, তখন নতুনভাবে দখল বাবদ রীট ইস্যু করে ঘর উচ্ছেদপূর্বক নিষ্কণ্টক দখল প্রদান করতে হবে (38 CWN 832 934 Cal 793 ) । ভাগ- বাটোয়ারার মামলায় ফাইনাল ডিক্রী বাবদ যথাযথ স্ট্যাম্প দিতে হবে।
শুধু বাদীর অংশ ভাগ-বাটোয়ারার আদেশ থাকলে কোর্ট ডিক্রী সংশোধন করত: বিবাদীর নিকট হতে আবেদনের মাধ্যমে এবং স্ট্যাম্প নিয়ে বিবাদীর অংশ বণ্টন করে দিতে পারবেন এবং ছাহাম মোতাবেক দখল দিবেন। তার দরুন আদালত বিবাদীর নিকট হতে অতিরিক্ত কোর্ট ফি চাইবেন না।
দেওয়ানী কার্যবিধি ৫৪ ধারায় সম্পত্তি বাটোয়ারা বা অংশ পৃথকীকরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে- যেক্ষেত্রে সরকারি রাজস্ব প্রদানের প্রয়োজনে কোন অবিভক্ত সম্পত্তি বাটোয়ারার জন্য বা অনুরূপ কোন সম্পত্তির কোন অংশের পৃথক দখলের জন্য ডিক্রী প্রদত্ত হয়েছে, সেক্ষেত্রে কালেক্টর অথবা কালেক্টর কর্তৃক মনোনীত অধস্তন কোন গেজেটেড পদের কর্মচারী উক্ত সম্পত্তির বাটোয়ারা বা অংশের পৃথকীকরণ সম্পন্ন করবেন এবং অনুরূপ সম্পত্তির বাটোয়ারা অংশ পৃথকীকরণ সম্পর্কে বর্তমানে প্রচলিত আইন (যদি থাকে) অনুসারে তিনি সেটা সম্পন্ন করবেন। এ ধারায় রাজস্ব প্রদানের নির্মিত এজমালী বাটোয়ারা ডিক্রীজারির বিধান প্রদত্ত হয়েছে।

বাটোয়ারা মামলার কোর্ট ফি
১৮৭০ সালের ৭নং কোর্ট ফি আইনের ৭ ধারা এর উপ-ধারা ৬ (ক) অনুসারে যৌথ পরিবারের সম্পত্তি বা যৌথ সম্পত্তির বাটোয়ারার এবং পৃথক শেয়ার দখল অথবা অনুরূপ সম্পত্তিতে শেয়ারের অধিকার বলবৎ করার মোকদ্দমাঃ
বাদী যে সম্পত্তির সহ-অংশীদার অথবা সহ-মালিক বলে দাবী করেন, সেই সম্পত্তির দখল হতে বাদীকে বে-দখল করা হলে যে শেয়ার সম্পর্কে মোকদ্দমা দায়ের করা হয়েছে তার বাজার মূল্য অনুযায়ী হবে ।
কোর্ট ফি আইনের ৭ ধারার উপ-ধারা ৫, ৬, ৯ এবং ১০ এর খ দফায় বর্ণিত মামলাসমূহ ব্যতীত অন্য মামলাসমূহের যেখানে ১৮৭০ সালের কোর্ট ফি আইনের অধীন মামলার বিষয়বস্তুর মূল্য অনুপাতে কোর্ট ফি প্রদেয়, সেখানে কোর্ট ফি নির্ধারণের জন্য মূল্য এবং আদালতের এখতিয়ার সম্পর্কিত মূল্য একই হবে। বাটোয়ারা মামলায় বাদীর অংশের সম্পত্তির উপর মামলার মূল্যমান নির্ভর করে (AIR 1953 Pat. 342 )।
যদি সমস্ত সম্পত্তির বণ্টন উদ্দেশ্য হয়, তবে সমস্ত সম্পত্তির মূল্যের উপর মামলার ও আপীলের এখতিয়ার নির্ধারিত হয়ে থাকে। এজমালি সম্পত্তির দখলের ভিত্তিতে তার অংশের দাবী করলে এমনকি বিবাদী আদালতের আর্থিক এখতিয়ার অতিরিক্ত মূল্যের অংশ প্রাপ্ত হলেও আদালতের আর্থিক এখতিয়ার প্রভাবিত হবে না (12 DLR (FB)- 329
আরও দেখুনঃ