আজকে আমরা অর্পিত সম্পত্তি ও পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করবো
অর্পিত সম্পত্তি ও পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা
অর্পিত সম্পত্তির সংজ্ঞা :
পাকিস্তান প্রতিরক্ষা আইনের অধীনে প্রণীত পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বিধি, ১৯৬৫ এর ১৮২ বিধি মোতাবেক তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান এলাকার যে সব নাগরিক ৬ই সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫ তারিখে ভারতে অবস্থানরত ছিলেন বা ঐ তারিখ হতে ১৬ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯ (জরুরী অবস্থা প্রত্যাহারের তারিখ) পর্যন্ত ভারতে গমন করেছেন তাদের যাবতীয় সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি বলে গণ্য হয় এবং তার ব্যবস্থাপনা উপ- তত্ত্ববধায়কের উপর ন্যস্ত করা হয়।
জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করার পর শত্রু সম্পত্তি সম্পর্কিত বিধানসমূহ বলবৎ রাখা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রেক্ষিতে এই অধ্যাদেশ বাতিল করে শত্রু সম্পত্তি, ১৯৭৪ জারী করা হয়। এই আইনের ৩ ধারা মোতাবেক যে সব শত্রু সম্পত্তি তত্ত্বাবধায়ক, উপ-তত্ত্বাবধায়কের উপর ন্যস্ত হয়েছিল, সে সম্পত্তি, সম্পূর্ণভাবে সরকারে বর্তায়। অতএব সাবেক শত্রু সম্পত্তি এখন সরকারে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ বলে গণ্য হয়।
বাংলাদেশের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০০১ অনুসারে ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ পর্যন্ত যেসব পাকিস্তানি নাগরিক পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন এবং তাঁদের স্থাবর সম্পত্তি যা পাকিস্তান আমলে ‘শত্রু সম্পত্তি’ ও বাংলাদেশ আমলে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ নামে অভিহিত হয়েছিল, তা ফেরৎ পেতে পারেন। এই আইনের ২০০১ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবার এবং ২০১২ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধিত হয়।

সংশোধিত আইনের ৯ক ধারা অনুযায়ী সরকারী গেজেটে মৌজাভিত্তিক জেলাওয়ারি তালিকা প্রকাশের পর কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজেকে অর্পিত সম্পত্তির দাবিদার মনে করলে, তার দাবির সমর্থনে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ সরকারি গেজেট প্রকাশের ৩০০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির সভাপতি অথবা ট্রাইব্যুনালে উক্ত সম্পত্তি অবমুক্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের তফসিলে এমন বহু সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল যা কখনোই অ-র্পিত সম্পত্তি ছিল না। ফলে হাজার হাজার মানুষকে হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়। সাধারণ মানুষের দাবির মুখে সরকার আইনের “খ” তফসিলটি বাতিল করে।
পরিত্যক্ত সম্পত্তি স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে বাংলাদেশে অনেক সম্পত্তি পরিত্যক্ত বলে চিহ্নিত হয়। এগুলির মালিকরা মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত হয় কিংবা বাংলাদেশ ত্যাগ করে এবং অনেকের কোন ঠিকানা জানা যায় না। এসব সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা, নিষ্পত্তির ব্যবস্থার জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিত্যক্ত সম্পত্তি (নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা ও নিষ্পত্তি) আদেশ জারি করেন। এই আদেশের ২৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালের ৮ মে বাংলাদেশ পরিত্যক্ত সম্পত্তি (জমি, ভবন ও অন্যান্য সম্পত্তি) বিধিও জারি করেন।
এই আদেশের ২নং ধারার দফা (১) ক. ২৫ মার্চ, ১৯৭১ সালের পর যেকোন সময় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কিংবা সামরিক অভিযানে নিয়োজিত ছিল এমন কোন রাষ্ট্রের নাগরিকের সম্পত্তি; এবং খ. বাংলাদেশ শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণ আদেশের আওতায় ও নিয়ন্ত্রণে গৃহীত যেকোন সম্পত্তিসহ যে ব্যক্তি বাংলাদেশে উপস্থিত নেই কিংবা যার নিবাস-ঠিকানা ইত্যাদি অজ্ঞাত কিংবা যে ব্যক্তি আর তার সম্পত্তির দখলে নেই কিংবা তত্ত্বাবধানে নেই বা ব্যবস্থাপনাও করছে না এমন সকল সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
আরও দেখুনঃ