আজকের আলচনার বিষয়ঃ বৌদ্ধ উত্তরাধিকার আইন
Table of Contents
বৌদ্ধ উত্তরাধিকার আইন
বাংলাদেশে বসবাসরত বৌদ্ধরা উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে হিন্দু দায়ভাগ আইন দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে, যদিও ১৯৫৬ সালে ভারতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এ বৌদ্ধদের উত্তরাধিকারের বিষয়টি ভারতীয় উত্তরাধিকার আইন এবং হিন্দু দায়ভাগ আইনের সমন্বয়ে স্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে অদ্যবধি উক্তরূপ কোন সংশোধনী গৃহীত হয়নি। এখানকার বৌদ্ধরা পুরোপুরিভাবে হিন্দু দায়ভাগ আইন দ্বারা উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে শাসিত হয়।
বৌদ্ধদের জন্য যেমন পৃথক উত্তরাধিকার আইন বিদ্যমান নেই, তেমনি তাদের উত্তরাধিকার সম্পর্কিত বিরোধ নিয়ে উচ্চাদালতের খুব বেশী নজির বা সিদ্ধান্ত পরিলক্ষিত হয় না ( 32 DLR 187 40 DLR 137 (AD) নজিরদ্বয় বৌদ্ধদের উত্তরাধিকার সম্পর্কিত ধারণাকে স্পষ্টভাবে উদ্ভাসিত করেছে।
বাংলাদেশের মারুয়া বৌদ্ধরা ছাড়া এদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উত্তরাধিকার দায়ভাগ হিন্দু আইনের আওতাভুক্ত। ব্রহ্মদেশীয় বৌদ্ধরা এবং বাংলার মারুয়া বৌদ্ধরা যথাক্রমে ব্রহ্মদেশীয় বৌদ্ধ আইন এবং মারুয়া বৌদ্ধ আইন দ্বারা শাসিত। বাংলাদেশের মারুয়া বৌদ্ধরা ভারতীয় উত্তরাধিকার আইনে (১৯২৫ সনের ৩৯নং আইন) শাসিত তবে এটি সর্বজনবিদিত যে ব্রহ্মদেশীয় বৌদ্ধরা যেমন স্থানীয় অর্থাৎ ব্রহ্মদেশীয় উত্তরাধিকার আইন গ্রহণ করেছেন; তেমনই ভারতীয় বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ সম্প্রদায়ের উত্তরাধিকার ভারতীয় হিন্দু আইনের আওতাভুক্ত।
বলা বাহুল্য বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ ধর্ম সনাতন ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও সনাতন ধর্মের অঙ্গ, এ সনাতন ধর্ম মুনি-ঋষিদের সংকলিত শ্রুতি শাস্ত্রাদির আইনের অনুশাসনে প্রচলিত। গৌতমবুদ্ধ শাক্যমুনি হিসেবে অভিহিত। শাক্যমুনি তার অনুসারীদের জন্য ইসলাম ধর্ম, খ্রিস্ট ধর্ম ও অন্যান্য ধর্মের ন্যায় উত্তরাধিকার আইনের ভিন্ন নির্দেশ দেননি।
মানব জাতির কল্যাণের জন্য তিনি যে ধর্মের সংস্কার করেছেন, যা ধারণ ও পালন করবে জাগতিক দুঃখ-কষ্ট দূর হবে এবং পারলৌকিক নির্বাণ অর্থাৎ মুক্তিলাভ হবে। ভারত থেকে চলে যাওয়া ব্রহ্মদেশীয় বৌদ্ধরা তাদের ধর্মগুরু অর্থাৎ বৌদ্ধ ভিক্ষুর নিকট তাদের উত্তরাধিকার ও অন্যান্য বিষয়ে আইন প্রণয়নের জন্য অনুরোধ জ্ঞাপন করলে বৌদ্ধ ভিক্ষু জানান যে, তারা ভিক্ষু অর্থাৎ সন্ন্যাসী বিধায় দেশচার, আইন-কানুনে লিপ্ত থাকতে পারেন না।
বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ন্যায় হিন্দু সন্ন্যাসীরাও নিজ নিজ ধর্মীয় নীতি ছাড়া অন্য কোন দেশীয় প্রচলিত আইনের অনুশাসনে শাসিত নন। দেশের তৈরি আইনে দেশের জনসাধারণের মানব সমাজে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে চলা এবং ন্যায়নীতির মাধ্যমে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
বৌদ্ধ ধর্মের সাথে সনাতন ধর্মের মৌলনীতির পার্থক্যঃ
হিন্দু সম্প্রদায় সনাতনপন্থী। স্মৃতিশাস্ত্রের প্রচলিত নীতি অনুসারে হিন্দুদের আচার, বিচার ও সামাজিক অনুষ্ঠানানির প্রথা আর্য সভ্যতা থেকে চিরাচরিতভাবে চলে আসছে। মাঝে মাঝে কোন স্থানীয় প্রথা সমাজের স্থানীয় সঙ্গতি বজায় রাখার জন্য শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতদের পরামর্শ নিয়ে কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবং হিন্দু আইনের সংস্কার সাধন ঘটেছে।
তাই দেখা যায়, হিন্দু সমাজে গোষ্ঠী ও স্থানীয় পরিবেশে কিছু কিছু গড়মিল। তেমনি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে এক শ্রেণীর সাথে অন্য শ্রেণীর আচার, বিচার ও সামাজিক অনুষ্ঠান এক নয়। সুতরাং, উপমহাদেশে সনাতনপন্থী হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নিজ নিজ প্রথা বাতীত ধর্মের মৌলনীতি পৃথক নয় ।
ডি এফ মোল্লার Principles of Hindu Law এর Operation of Hindu Law এর অনুচ্ছেদে Persons governed by Hindu Law তে বলা হয়েছে- “Hindu Law applies (iv) to Jaina Buddhists in India. Sikhs except so far as such law is veried by custom.” অর্থাৎ জৈন ভারতের বৌদ্ধ ও শিখ সম্প্রদায় অবশ্য তাদের নিজস্ব প্রথাসম্মত আইন ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে হিন্দু আইনের আওতাভুক্ত।
ভারতীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায় হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের অন্তর্ভুক্তঃ
ভারতবর্ষের সুপ্রীম কোর্টের বিভিন্ন কেসের ব্যাখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের ১৯৫৬ সালের হিন্দু উত্তরাধিকার সংশোধিত আইনের ২ ধারার (১) উপ-ধারায় বর্ণিত আছে।
This act applies-
- a) to any person
- b) to any person who is a Buddhist Jaina or Sikh by religion, and
- c) to any other person.
Explanation-
The following persons are Hindus,Buddhists, Jainas or Sikhs by religion, as the case my be:
- a) any child legitimate or illigitimate both of whose parents are Hindus, Buddhists, Jainas or Sikhs by religion.
- b) any child lagitimate or illigitimate. one of whose parents is a Hindu, Buddhist. Jaina or Sikh by religion and who is brought up as a member of the tribe community group of family to which such parent belongs of belonged:
- c) any person who is convert or reconvert to the Hindu,Buddhist, Jaina or Sikh religion.
অতএব উপরোল্লিখিত তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায় ভারতীয় হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে শাসিত ও আওতাভুক্ত। কিন্তু যে সব বৌদ্ধ ভারত ত্যাগ করে ব্রহ্মদেশে চলে গিয়েছে এবং তথায় বসবাস করে তথাকার অধিবাসী হয়েছেন, তারা ভারতীয় সমাজ হতে পৃথক হয়ে স্থানীয় উত্তরাধিকার আইনে শাসিত। বাংলাদেশে বসবাসকারী বৌদ্ধ সম্প্রদায় হিন্দু দায়ভাগ আইনের আওতায় উত্তরাধিকার পেয়ে থাকে।
বৌদ্ধদের জন্য এখানে পৃথক কোন উত্তরাধিকার আইনের প্রবর্তন ও প্রচলন না থাকলেও ন্যায়নীতির ওয়ার তুলে ইচ্ছামাফিক উত্তরাধিকার নির্ণয় করা যাবে না। সে কারণে হিন্দু দায়ভাগ আইনের আওতায় বাংলাদেশের বসবাসকারী বৌদ্ধদের উত্তরাধিকারের প্রশ্ন মীমাংসা করতে হবে।
ব্রহ্মদেশের বৌদ্ধরা Burman Buddhist নামে পরিচিত। তাদের উত্তরাধিকার আইনের ক্রম নিম্নরূপঃ
(বিশুধানন্দ মৃত ব্যক্তি)
১- পুত্রসন্তান
২য়- পৌরা
৩য়-প্রপৌত্র
৪র্থ-দত্তক পুত্র
৫ম-সৎ মাতার পুত্র
৬ষ্ঠ-অবৈধ সন্তান ও অবৈধ সৎপত্নীর সস্তান
৭ম-ভ্রাতা ও ভগ্নি
৮ম-পিতামাতা
৯ম-পিতার পিতামাতা
১০ম- দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়
১০ (ক) ভ্রাতুষ্পুত্র ও পুত্রী
১০ (খ) খুড়া ও খুড়ি
১০ (গ) ভ্রাতুষ্পুত্র ও পুত্রীর সন্তানগণ
১০ (ঘ) কাজিন
১০(ঙ)-ভ্রাতুষ্পুত্রের ও পুত্রীর পৌত্র ও পৌত্রীগণ
১০(চ)-কাজিনের সন্তানগণ
১০ (ছ) কাজিনের পৌত্র সন্তানগণ
১০ (জ)-কাজিনের প্রপৌত্র সন্তানগণ ।
Burmese Buddhist দের উপরোল্লিখিত উত্তরাধিকার আইনের ক্রম হতে পরিজ্ঞাত হওয়া যায় যে হিন্দু উত্তরাধিকারের ক্রমের সাথে তার তেমন তথ্যগত পার্থক্য নেই। ব্রহ্মদেশীয় বৌদ্ধরা দত্তকপুত্র গ্রহণে হিন্দু আইনে দত্তকচন্দ্রিকা নীতি অনুসরণ করেন।
আরও দেখুনঃ