বাটোয়ারা মামলার মূল্যায়ন এবং পার্টিশন

আজকের আলোচনার বিষয় বাটোয়ারা মামলার মূল্যায়ন এবং পার্টিশন। আদালতের অধিক্ষেত্র ও কোর্ট ফি নির্ণয়ের জন্য মামলার মূল্যায়ন নির্ধারণ করতে হয়। কোর্ট ফি আইনের ৭ এর ৫ ও ৬ উপ-ধারা এবং ১০ উপ-ধারার (খ) দফায় বর্ণিত মোকদ্দমাসমূহের এখতিয়ার নিরূপণকল্পে ভূমির মূল্য নির্ধারণের জন্য সরকার বিধি প্রণয়ন করতে পারে। এই বিধি বলে কোর্ট এলাকার ভূমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন স্থানের ভূমির মূল্য বিভিন্নরূপ হতে পারে। ভূমির গুণাগুণের উপর জমির মূল্য কম বা বেশি হতে পারে। যে সম্পত্তির বাটোয়ারা চাওয়া হয় তার সমস্ত অংশের মূল্যের উপর কোর্ট ফি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

 

বাটোয়ারা মামলার মূল্যায়ন এবং পার্টিশন

 

বাটোয়ারা মামলার মূল্যায়ন এবং পার্টিশন

বিবাদী পক্ষও বাটোয়ারা চাইতে পারেঃ

বিবাদীর আলাদা পার্টিশন মামলা রুজু করার প্রয়োজন নাই। বিবাদী তার দাবী মোতাবেক দখলে থাকলে নির্ধারিত কোর্ট ফি দিয়ে বাটোয়ারা চাইতে পারে। বিবাদীর জবাবকেই প্রিডিং ধরা হয়ে থাকে। উভয়ের দাবী আলাদাভাবে বিবেচনা করা হয়। দাবী মোতাবেক বাটোয়ারার প্রাথমিক ডিক্রী হয়। বাদী ও বিবাদী একই ফুটিং ধরা হয়।

 

বাদীর দাবী অগ্রগণ্য বিবাদীর দাবী নয়ঃ

মামলার বিষয়বস্তু বা মামলার কারণ বাদীরটা ধরা হয়। বিবাদীর দাবী বা বিষয়বস্তু নয়। ঘটনাক্রমে বিবাদীর দাবী মামলায় আনয়ন করা হয়ে থাকে। বাদীর দাবীই মামলার কারণ হিসাবে বিচার হবে। মোকদ্দমার মূল্যায়ন আদালত যেটা করবেন সেটাই চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হবে ( 13 DLR (SC) 1911.

যৌথ সম্পত্তিতে বাদীর ছাহামের জন্য আনীত মামলায় নির্ধারিত কোর্ট ফি প্রদান করতে হয়। মামলা ও আপিল উভয় ক্ষেত্রের কোর্ট ফির ব্যাপারে মামলার আকার- আকৃতির উপর নির্ভরশীল হবে।

বাদীর দাবীকৃত ভূমির মূল্য আর্থিক এখতিয়ারের মধ্যে থাকলে বিবাদীপক্ষের দাবী আর্থিক অধিক্ষেত্র অতিক্রম করলেও মামলা অচল হবে না। বিবাদীর দাবী আপীলে কার্যকর হবে এবং আর্থিক এখতিয়ার মোতাবেক চলবে। বাদীর দখলে জমি না থাকলে কেসের ধরনের উপর কোর্ট ফি দিতে হবে এবং সেভাবে আর্থিক এখতিয়ার নির্ণয় করা হবে। বাদীর দাবী যদি অর্ধেক সম্পত্তি বাবদ হয় তবে আর্থিক দাবীও অর্ধেক সম্পত্তির উপর বর্তাবে।

 

বাটোয়ারা মামলার মূল্যায়ন এবং পার্টিশন
বাটোয়ারা মামলার মূল্যায়ন এবং পার্টিশন

 

যৌথ সম্পত্তিতে বাদীর বাটোয়ারাঃ

নালিশী ভূমি বাদীর যদি দখলে থাকে তবে বাদীর দাবী অনুসারে সম্পত্তির মূল্য নির্ধারিত হবে ( 13 DLR (SC) 191 12 DLR- 329. PLD 1961 (SC)-349]

বাটোয়ারা মামলায় প্রাথমিক ডিক্রীতে বাণীর দানী আপীলেও একইরূপ নির্ণিত হবে JAIR 1947 (SAD) 407 |

বিবাদীর দাবী অনুসারে আপীলে মূল্যায়ন স্থির করতে হবে।

 

বেদখলী ভূমির বাবদ বাদীর পার্টিশন মামলাঃ

নালিশী সম্পত্তি হতে বাদী বেদখল হলে সম্পত্তির মূল্যের উপর কোর্ট ফি দিয়ে বাটোয়ারা মামলা রুজু করতে হবে। কোর্ট ফি নির্ধারণের পরে আর্থিক ক্ষেত্র নির্ণয় করা হবে 19 DLR 190, 1956 PLR 628].

 

পুনরায় পার্টিশন মামলাঃ

পূর্বের মামলায় দেখানো মূল্য বাদ দিয়ে। মূল্য নির্ধারিত হবে। কারণ ইতিমধ্যে পূর্বের একটি বাটোয়ারা মামলায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুধু ভোগাধিকারের বিষয় নিয়ে পুনরায় মামলা হতে পারে।

 

বাটোয়ারা মামলার মূল্যায়ন এবং পার্টিশন
বাটোয়ারা মামলার মূল্যায়ন এবং পার্টিশন

 

 

স্ট্যাম্প আইন এবং বাটোয়ারা দলিল:

এই আইনটি ১৮৯৯ সালের ২নং আইন দ্বারা প্রণীত ও প্রবর্তিত হয়েছে। স্ট্যাম্প আইনটি বাটোয়ারা দলিলে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সেখানে ৭৯টি ধারা এবং ১টি তফসিল আছে।

 

বাটোয়ারা দলিলঃ

স্ট্যাম্প আইনের ২(১৫) ধারায় স্ট্যাম্প দলিলের সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে৷ বাটোয়ারা দলিল বলতে যেখানে শরীকগণ কোন সম্পত্তি বণ্টন করে নিতে স্বীকৃত হয় যা কোন রেভেনিউ কর্তৃপক্ষ বা দেওয়ানী আদালতের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে আদেশপ্রাপ্ত হয় এবং শরিকদারের নির্দেশে রোয়েদাদ সম্পর্কিতভাবেও বাটোয়ারা দলিল হতে পারে।

আইনের মাধ্যম ব্যতিরেকে কোন শরীকগণ সুসম্পর্কের মাধ্যমে সম্পত্তি বাটোয়ারা করে নিলেও বাটোয়ারা দলিল হবে। এ সমস্ত দলিল অত্র আইনের ৪৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প ডিউটি চার্জযোগ্য। স্ট্যাম্প চার্জ না নিলে অত্র আইনের ৩৫ ধারা অনুসারে দলিল সাক্ষ্যগত মূল্য বহন করবে না।

একশত টাকার নিম্নের সম্পত্তির কোন রেজিট্রেশন না লাগলেও অত্র আইনের বিধান মতে প্রয়োজনীয় মূল্যমানের স্ট্যাম্প অবশ্যই লাগাতে হবে। বণ্টন দলিলের মাধ্যমে সহ-মালিকগণ তাহাদের অংশ ভাগ করে নিয়ে ভোগদখল করার অধিকার পেয়ে থাকে।

 

google news logo
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

কোর্টের মাধ্যমে বাটোয়ারাঃ

কোর্টের মাধ্যমে বাটোয়ারার দু’টি ধরন লক্ষ করা যায় যা উক্ত আইনের ২(১৫) ধারায় প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্পের বিষয় উল্লেখ থাকে। দুটি ধরন হচ্ছে- (১) সম্পত্তি বণ্টনের নিমিত্ত চূড়ান্ত ডিক্রী, (২) চূড়ান্ত আদেশ দ্বারা সম্পত্তির পার্টিশন।

(১) চূড়ান্ত ডিক্রী দ্বারা সম্পত্তি বণ্টনঃ

প্রাথমিক ডিক্রীর চূড়ান্ত রূপ ফাইনাল ডিক্রী । দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ২০ আদেশের ১৯(২) রুলের বিধানমতে যেখানে অধিকতর তদন্ত ব্যতিরেকে সুবিধাজনক ছাহাম বণ্টন সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে আদালত পক্ষগণের অধিকার ঘোষণার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে আদেশ দিয়ে থাকেন।

দেওয়ানী কার্যবিধি ২৬ আদেশের ১৩ ও ১৪ রুলের বিধানমতে একজন কমিশনার নিযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। কমিশনার বাস্তবভিত্তিক ছাহাম চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে চূড়ান্ত ফয়সালার সুপারিশ করতে পারেন। শুনানী অন্তে আদালত চূড়ান্তভাবে আদেশ দিয়ে থাকেন।

অধিক তদন্ত ছাড়াও প্রাথমিক ডিক্রীর দ্বারা কার্যকর ছাহাম চিহ্নিত করা যায়। বাটোয়ারা মামলা রুজুর পর পক্ষগণের মধ্যে মামলা সোলে বা মীমাংসা হইলে সোলের শর্ত মোতাবেক পক্ষগণ ছাহাম চিহ্নিত করে নিলে আদালত বৈধ শর্ত মোতাবেক চূড়ান্ত ডিক্রীর আদেশ দিতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে অধিক তদন্তের প্রয়োজন নেই।

তবে পক্ষগণের মধ্যে কিভাবে ছাহাম বণ্টন হয়েছে তার বাবদ দখলনামা নেয়া হয়। দখলনামা সোলের মর্মানুযায়ী হয়। পার্টিশনকে কার্যকর করার জন্য দখলনামা অনুসারে আদালত চূড়ান্ত আদেশ প্রদান করে থাকেন।

(২) চূড়ান্ত আদেশ দ্বারা সম্পত্তির পার্টিশনঃ

চূড়ান্ত ডিক্রী বা চূড়ান্ত আদেশ পার্টিশনকে কার্যকর করার নির্মিত হয়ে থাকে। দেওয়ানী কার্যবিধি ২৬ আদেশের ১৪(৩) রুলের বিধান সম্পন্ন অন্তে ডিক্রী চূড়ান্ত হয়। পাস এ ডিক্রী এর অর্থ দেওয়ানী কার্যবিধি ২৬ আদেশের ১৮ (৩) রুলের বিধান সম্পন্ন হওয়া। আদালত যখন দেওয়ানী কার্যবিধি ২৬ আদেশের ১৮ (১) রুলের বিধান মতে কমিশনারের রিপোর্ট গ্রহণ করে চূড়ান্ত ডিক্রীর আদেশ প্রদান করেন। যার দরুন প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে বণ্টনকৃত ছাহাম বাবদ দখলনামা প্রদান করা হয়ে থাকে ।

কিন্তু যখন কমিশনার রিপোর্ট এর বিরুদ্ধে কোন পক্ষ আপত্তি দেয় তখন বৈধ কারণ সাপেক্ষে আদালত কমিশনার রিপোর্ট গ্রহণ নাও করতে পারেন। কোর্টের বিবেচনায় যা সঠিকরূপে সাব্যস্ত হবে সেই মোতাবেক চূড়ান্ত ডিক্রীর আদেশ হবে।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment