মোক্তারনামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি যেভাবে করতে হয়

আজকে  আমরা আলোচনা করবো মোক্তারনামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি যেভাবে করতে হয়

 

মোক্তারনামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি যেভাবে করতে হয়
মোক্তারনামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি যেভাবে করতে হয়

 

মোক্তারনামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি যেভাবে করতে হয়

মোক্তারনামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি একটি পরিপূর্ণ আইনী দলিল। স্ট্যাম্প এ্যাক্ট, ১৮৯৯ এর ২(২১) উপ-ধারা অনুসারে যে ‘দলিল’ দিয়ে কোন ব্যক্তিকে অন্য কোন ব্যক্তির পক্ষে হাজির হয়ে কার্য সম্পাদন বা কোন ডিক্রি/রেজিস্ট্রি সম্পাদন, তত্ত্বাবধান ইত্যাদি বিষয়ক যাবতীয় কার্যাবলী সম্পাদন করার ক্ষমতা দেয়া হয় তাকে মোক্তারনামা বলে।

সাধারণত স্থাবর সম্পত্তি তথা জমিজমা দান, বিক্রয়, হস্তান্তর, রক্ষণাবেক্ষণ, বন্ধক রাখা, ক্ষণ গ্রহণ, খাজনা প্রদান ইত্যাদি কাজে মোক্তার বা অ্যাটর্নি বা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়। তবে অস্থাবর সম্পত্তির বিষয়েও মোক্তার নিয়োগ করা যায়।

পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি

পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দু’প্রকার, যথা

(ক) জেনারেল পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি,

(খ) স্পেশাল পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি।

যে মোক্তারনামায় মোক্তারদাতার পক্ষে জমি-জমা ক্রয়, বিক্রয়, রক্ষণাবেক্ষণ, চুক্তিপত্র করা, মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনা করা সহ যাবতীয় কাজের ক্ষমতা মোক্তারকে দেয়া হয় তাকে জেনারেল পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি বলা হয়।

অন্যদিকে একটি নির্দিষ্ট বা কোন বিশেষ কাজের ক্ষমতা মোক্তারকে দিয়ে তৈরী মোক্তারনামাকে বলে স্পেশাল পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি ।

 

মোক্তারনামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি যেভাবে করতে হয়
মোক্তারনামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি যেভাবে করতে হয়

 

পাওয়ার অফ অ্যাটর্নির শর্তাবলী

(১) মোক্তারনামা নোটারী পাবলিক, ম্যাজিস্ট্রেট বা বিদেশে সম্পাদিত হলে তা দূতাবাসের প্রতিনিধির সম্মুখে সম্পাদন (সহি) করতে হবে এবং তদিক/সত্যায়ন করতে হবে;

(২) মোক্তারনামা লিখিত দলিল হতে হবে;

(৩) মোক্তারনামা যথাযথ স্ট্যাম্পযুক্ত হতে হবে;

(৪) মোক্তারনামা দাতা (Principal) কর্তৃক মোক্তার (Attorney) কে ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।

 

মোক্তারনামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি যেভাবে করতে হয়
মোক্তারনামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি যেভাবে করতে হয়

 

পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি রেজিস্ট্রিকরণ

(ক) মোক্তার দাতা তার পক্ষে কাউকে রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩২ ধারা মতে দলিল সম্পাদন ও দাখিল করার জন্য মোক্তার নিযুক্ত করে যে মোক্তারনামা তৈরি করেন তা অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে (রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩৩ ধারা)।

(খ) মোক্তারনামা দাতার (Principal) সম্পত্তি যেখানেই থাকুক দাতা যেখানে বসবাস করেন সে জেলার রেজিস্ট্রার বা সাব-রেজিস্ট্রার এর সম্মুখে মোক্তারনামা সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করতে হবে।

(গ) মোক্তারনামা সম্পাদনকালে দাতা বিদেশে বসবাসরত থেকে থাকলে তাকে নোটারী পাবলিক, আদালতের বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট বা বাংলাদেশ দূতাবাসের বাণিজ্যদূত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির সম্মুখে মোক্তারনামা সম্পাদন করতে হবে এবং তার দ্বারা মোক্তারনামাটি প্রত্যয়ন করাতে হবে।

(ঘ) দলিল দাতা দলিল নিজে সম্পাদন করে তা রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করার জন্য ক্ষমতা দিয়ে মোক্তারনামা তৈরি করলে এরূপ মোক্তারনামা শুধু তসদিক বা সত্যায়ন করলেই চলবে। এরূপ মোক্তারনামা রেজিস্ট্রি করতে হবে না।

(ঙ) যে সব মোক্তারনামা রেজিস্ট্রি করতে হবে তা অবশ্যই সম্পাদনের ৪ মাসের মন্ত্রে দাখিল করতে হবে।

(চ) রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩৩ (১) ধারায় যে সব ব্যক্তিকে রেজিস্ট্রি অফিসে যাওয়া হতে রেহাই দেয়া হয়েছে তারা বাড়িতে বা জেলে বসে মোক্তারনামা সম্পাদন করতে পারবেন ।

 

google news logo
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

মোক্তারনামা নিয়মিতকরণ বা রি-স্ট্যাম্পিং

বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানরত কোন ব্যক্তি মোক্তারনামা করতে চাইলে তাকে মোক্তারনামাটি রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্টের ৩৩(গ) ধারা মতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দ্বারা প্রত্যয়ন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে সত্যায়ন করে নিতে হবে। এরপর দলিলটি দিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের নিকট রি-স্ট্যাম্পিং এর জন্য দাখিল করতে হবে।

জেলা প্রশাসক সবকিছু যথাযথ পেলে স্ট্যাম্প এ্যাক্টের ১৮ ধারা মতে বিশেষ আঠাযুক্ত (Adhesive) স্ট্যাম্প লাগিয়ে তা বাতিল করে নিয়মিত বা রি-স্ট্যাম্পিং করে দিবেন। পাওয়ার দলিল সম্পাদনের দিন মাসের মধ্যে জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিল করতে না পারলে স্ট্যাম্প এ্যাক্টের ৩৩ ধারা মতে সাধারণ ফিসের দশ গুণ বেশী ফিস দিয়ে তা নিয়মিতকরণ করা যাবে।

মোক্তারনামা বাতিলের পদ্ধতি

(ক) মোক্তারনামা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য করা হলে মেয়াদ শেষে তা বাতিল বলে গণ্য হবে;

(খ) মোক্তারনামা নির্দিষ্ট কোন কাজের জন্য করা হলে ঐ কাজ সমাপ্তিতে তা বাতিল বলে গণ্য হবে

(গ) যৌথ ক্ষমতার মোক্তারনামার পক্ষদের একজনের মৃত্যুতে তা বাতিল বলে গণ্য হবে:

(ঘ) মোক্তারনামা দাতা কোন মোক্তারনামা বাতিল করতে ইচ্ছুক হলে যে রেজিস্ট্রি অফিসে তা তসদিক করা হয়েছিল সে স্থানের জেলা রেজিস্ট্রারের (ডি. আর.) বরাবরে মোক্তারনামা রদের আবেদন করতে হবে। পূর্বকৃত মোক্তারনামাটি বিনষ্ট না হয়ে থাকলে আবেদনের সঙ্গে সেটিও দাখিল করতে হবে।

এতে তিনি “রদ করা হলো” কথাটি লিখে দিবেন এবং সে মোতাবেক রেজিস্ট্রার সংশোধন করবেন। রেজিস্ট্রারিং অফিসার মোক্তারনামা বাতিলের আবেদন পাবার পর তাঁর জেলার সকল রেজিস্ট্রি অফিসে বা অন্য কোন জেলা সদর অফিসকে বিষয়টি নোটিসের মাধ্যমে জানিয়ে দেবেন। নোটিস জারীর ডাকটিকেটের খরচ আবেদনকারী বহন করবেন,

(ঙ) তবে স্বার্থের সাথে যুক্ত মোক্তারনামা স্বার্থপূর্ণ বা পরিত্যক্ত না হওয়া পর্যন্ত বাতিল করা যায় না। (মোক্তারনামা আইনের ৩ ধারা)

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment