আজকের আলোচনার বিষয়ঃ জমি জমা সংক্রান্ত কিছু চুক্তির বিধান
Table of Contents
জমি জমা সংক্রান্ত কিছু চুক্তির বিধান
১। ভূমিকা;
২। জমি জমা সংক্রান্ত বিভিন্ন চুক্তি;
৩। জমি জমা সংক্রান্ত চুক্তির কতিপয় বিধান।
১। ভূমিকা
জমি জমা নিয়ে নানা ধরনের চুক্তি হয়ে থাকে। এসব চুক্তি অবস্থার প্রেক্ষিতে সংকটের সৃষ্টি করে। সেটা নিরসনে তখন নানা ধরনের উপায় বা ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হয় ।
২। জমি জমা সংক্রান্ত বিভিন্ন চুক্তি
২.১ বন্ধক
২.২. লীজ
২.৩. বিক্রির জন্য অগ্রিম অর্থ বা বায়না নামা
২.১. বন্ধক (Mortgage).
বন্ধক
ঋণ হিসেবে অগ্রীম প্রদত্ত বা প্রদেয় অর্থ বা কোন বর্তমান বা ভবিষ্যৎ দেনা পরিশোধ বা আর্থিক দায় সৃষ্টি করতে পারে এরূপ কোন কার্য সম্পাদনের নিশ্চয়তা বিধানের উদ্দেশ্যে কোন নির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির (জমি জমা) স্বত্ব হস্তান্তরকে বন্ধক বা রেহেন বলে ।
হস্তান্তরকারীকে বন্ধকদাতা, হস্তান্তরগ্রহীতাকে বন্ধকগ্রহীতা বলে। নিশ্চয়তা স্বরূপ যে অর্থ দেয়া হয় তাকে বন্ধকী টাকা বা অর্থ বলে। যে দলিলের মাধ্যমে তা হস্তান্তর করা হয় তাকে বন্ধকী দলিল বলে ।
খ. বন্ধকের প্রকারভেদ
বন্ধক সাধারণত ছয় প্রকার, যথা-
১. সরল বন্ধক,
২. শর্তাধীন অধিক্ষেত্র বন্ধক
৩. খাইখালাসী বন্ধক
৪. ইংলিশ বন্ধক;
৫. দলিল জমা দেয়া বন্ধক
৬. শ্রেণীবিহীন বন্ধক ।
গ. যেভাবে একটি বন্ধকী দলিল সম্পাদিত হয়
১. লিখিত দলিল প্রণয়ন, যদি বন্ধকী সম্পত্তির মূল্য ১০০ টাকার কম হয়;
২. বন্ধকদাতা কর্তৃক স্বাক্ষর:
৩. কমপক্ষে দু’জন সাক্ষী কর্তৃক স্বাক্ষরিত
৪. রেজিস্ট্রেশন
ঘ. বন্ধকগ্রহীতাকে যা যা করতে হয় :
১. ষাট বছর পর্যন্ত বন্ধকী সম্পত্তির স্বত্বানুসন্ধান,
২. কী ধরনের বন্ধকী দলিল হবে তা নির্ধারণ:
৩. দলিল প্রণয়ন;
৪. দলির রেজিস্ট্রেশন;
৫. সকল বন্ধকী সম্পত্তির স্বত্বের দলিল হস্তান্তর গ্রহণ ।
ঙ. ইংলিশ বন্ধক বা কট কবলা
যে দলিলে ইংলিশ বন্ধক সম্পাদিত হয় তাকে কট কবলা বলে। এতে বন্ধকদাতা দৃশ্যত সম্পত্তি বিক্রি করবেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ না করলে বিক্রি চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এর মূল্য ১০০ টাকার ঊর্ধ্বে হলে তা রেজিস্ট্রেশন করতে হয় । এতে পুনঃক্রয়ের পৃথক কোন দলিল সম্পাদিত হয় না ।
চ. খাইখালাসী বন্ধকের মেয়াদ
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ধারা ৯৫ মোতাবেক যদি কোন খাইখালাসী বন্ধকে মেয়াদ উল্লেখ না থাকে তবে মেয়াদ সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত হবে।
২.২ লীজ (Lease) বা দলিল
ক. লীজ কী?
খ. লীজের উপাদান।
গ. বিভিন্ন প্রকার লীজ ।
ঘ. কিভাবে লীজ সমাপ্ত হয়।
ক. লীজ কী
স্থাবর সম্পত্তির ভোগদখলের স্বত্ত্ব, প্রকাশ্যতঃ বা উহ্যভাবে নির্দিষ্ট মেয়াদে বা চিরস্থায়ীভাবে এবং প্রদত্ত বা প্রতিশ্রুত কোন মূল্যের বিনিময়ে বা অর্থ, ফসলের ভাতা, কার্য সম্পাদন বা অন্যকোন মূল্যবান দ্রব্য হস্তান্তরকারীর নিকট উক্ত শর্তসমূহে সম্মত হস্তান্তরগ্রহীতা কর্তৃক শর্ত মোতাবেক নির্দিষ্ট মেয়াদ হলে বা নির্ধারিত সময়ে প্রদানের বিনিময়ে অপরের নিকট হস্তান্তর করাকে লীজ বলে।
যিনি হস্তান্তর করেন তিনি লীজদাতা, যিনি হস্তান্তর গ্রহণ করেন তিনি দীগ্রহীতা, যে মূল্য দিয়ে হস্তান্তর করা হয় তাকে সেলামী এবং যে অর্থ ফসলের ভাগ কার্য সম্পাদন ও অন্যান্য জিনিস প্রদানের ব্যবস্থা করা হয় তাকে কর বলা হয়।
খ. লীজের উপাদান
১. এটি অবশ্যই স্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কিত হবে,
২. ভোগের অধিকারের স্থিতিকাল অবশ্যই নির্ধারিত হবে;
৩. এটি অবশ্যই পণ্যের বিনিময়ে হবে;
৪. হস্তান্তরগ্রহীতা কর্তৃক অবশ্যই হস্তান্তর গৃহীত হবে;
৫. পক্ষকে অর্থাৎ পক্ষদাতা ও কবুলিয়াতগ্রহীতাকে অবশ্যই যোগ্য হতে হবে।
গ. বিভিন্ন প্রকার লীজ
১. পাট্টা;
২. রায়তি পাট্টা;
৩. কোর্ফা রায়তি পাট্টা
৪. মৌরসী বা মোকরারি পাট্টা;
৫. ইজারা পাট্টা;
৬. মেয়াদী পাটা;
৭. পতনী পাট্টা;
৮. বর্গা পাট্টা;
৯. কবুলিয়াত;
১০. প্রতিলিপি ।
১. পাট্টাঃ
এটি এক প্রকার লীজ। এতে পাটাগ্রহীতা শর্তহীনভাবে পাট্টা প্রদত্ত সম্পত্তি ভোগ করে থাকে।
২. রায়তি পাট্টাঃ
জমিদার বা ভূম্যধিকারী চাষাবাদ বা বসবাসের জন্য যে পাট্টা দেন তাকে রায়তি পাট্টা বলে ।
৩. কোফা রায়তি পাট্টাঃ
নিজ রায়তি স্বত্বভোগকারী প্রজা অন্য কোন প্রজাকে পাট্টা প্রদান করলে তাকে কোর্ফা রায়তি পাট্টা বলে ।
৪. মৌরসী বা মোকরারি পাট্টাঃ
যে পাটা শর্তানুযায়ী প্রজা নির্দিষ্ট অর্থ জমা নিবার অঙ্গীকার চিরকালের জন্য জমিদখল করার অধিকারী হয় তাকে মৌরসী বা মোকরারি পাট্টা বলে।
৫. ইজারা পাট্টাঃ
যে পাট্টা নির্দিষ্ট জনার নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়, তাকে ইজারা পাট্টা বলে।
৬. মেখানি পাট্টাঃ
একটি নির্দিষ্ট বা পূর্ব নির্ধারিত সময় উত্তীর্ণ হবার পর যে পাট্টা দেখা ভারতমা হতে পারে সেরূপ পাটাকে মেয়াদি পাট্টা বলে।
৭. পত্তনী পাট্টা:
স্বরূপ টাকা প্রদান করা হলে তাকে পত্তনী পাট্টা বলে।
৮. ভাগাভাগি বা বর্গা গাট্টাঃ
উৎপন্ন শস্যের অংশ নিবার শর্তে যে পাট্টা দেয়া হয় তাকে ভাগা-ভাগি বা বর্গা পাট্টা বলে।
৯. কবুলিয়াতঃ
কবুলিয়াত ও লীজ হিসেবে গণ্য করুলিয়াত হলো নির্ধারিত খাজনাদি প্রদানের ব্যাপারে লীজগ্রহীতার স্বীকারোক্তি পত্র।
১০. প্রতিলিপিঃ
এটি এক প্রকার কবুলিয়াত। লীজ গ্রহীতা এটি সম্পাদন করে।
ঘ. কিভাবে লীজ সমাপ্ত হয় :
১. সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে:
২. কোন বিশেষ ঘটনা ঘটলে;
৩. লীজদাতার স্বার্থের সমাপ্তির দ্বারা;
৪. সম্পত্তিতে লীজদাতা ও লীজগ্রহীতার স্বার্থ একত্রীকরণ দ্বারা;
৫. সমর্পণ দ্বারা:
৬. পরোক্ষ সমর্পণ দ্বারা;
৭. বাজেয়াপ্তকরণ দ্বারা:
৮. পরিত্যাগ করার নোটিসের মেয়াদের অবসান দ্বারা।
২.৩। বায়না নামা :
কোন সম্পত্তি বিক্রির চুক্তি স্বরূপ অর্থ অগ্রিম গ্রহণ করাকে বায়না নামা বলে। এতে নানাবিধ শর্তাবলী থাকতে পারে। এটি বিক্রেতা ও ক্রেতার মধ্যকার সমঝোতা-নির্ভর।
৩। জমি জমা সংক্রান্ত চুক্তির কতিপয় বিধান :
১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে জমি জমা সংক্রান্ত চুক্তির বিধানাবলী বর্ণিত হয়েছে। যেমন
১. চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন অর্থাৎ চুক্তি প্রবলকরণ :
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ধারা ১২ অনুযায়ী কোন জমি জমা বিক্রি চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকরীকরণ করা যায়। এজন্য রেজিস্ট্রেশন না করা হলেও তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়।
২. যে চুক্তির বিষয়বস্তু আংশিকভাবে বিলুপ্ত হয়েছেঃ
লেনদেনের কার্যক্রম চলাকালীন বায়নার টাকা ক্রয়মূল্যের অংশ হিসেবে গণ্য হয়। ক্রেতার বিফলতায় বায়নার টাকা বাজেয়াপ্ত হয়। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ধারা ১৩-তে এগুলো বলা আছে।
৩. সম্পূর্ণ ক্রয় মূল্য পরিশোধ না করলেঃ
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ধারা ২২ দ্রষ্টব্য) সম্পূর্ণ ক্রয়মূল্য পরিশোধ না করার কারণে বিক্রি চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে সম্পাদন করে বাদীর দাবী অস্বীকার করা যায় না।
৪. দলিল সংশোধনঃ
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ধারা ৩১ অনুযায়ী কোন পক্ষের প্রতারণার দরুন ভুল, প্রতারণাশূন্য উভয় পক্ষের ভুল, উভয় পক্ষের মনোভাবকে একান্তভাবে লিখার দরুন ভুলের ক্ষেত্রে কোন রেজিস্ট্রি দলিল সংশোধন করা যায়।
৫. বিক্রি বা চুক্তি রদঃ
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ধারা ৩৫-এর বিধান অনুযায়ী বাতিলযোগ্য, অবৈধ ও আদালতের নির্দেশ মতে অর্থ পরিশোধ না করার দরুন কোন বিক্রি চুক্তি রদ করা যায় ।
আরও দেখুনঃ