Site icon Law Gurukul [ আইন গুরুকুল ] GOLN

জমি জমা ক্রয় ও দলিল রেজিস্ট্রি করবেন যেভাবে

জমি জমা ক্রয় ও দলিল রেজিস্ট্রি করবেন যেভাবে

আজকে আমরা আলোচনা করবো জমি জমা ক্রয় ও দলিল রেজিস্ট্রি করবেন যেভাবে

 

জমি জমা ক্রয় ও দলিল রেজিস্ট্রি করবেন যেভাবে

 

Table of Contents

জমি জমা ক্রয় ও দলিল রেজিস্ট্রি করবেন যেভাবে

নিষ্কণ্টক জমি ক্রয় ক্রেতার কী করণীয়ঃ

এক খণ্ড জমির মালিক হওয়া প্রতিটি মানুষেরই মনের একটি অদম্য বাসনা। কিন্তু জমি-জমা ক্রয় করা বিশেষত শহর, উপ-শহর বা এর আশেপাশের এলাকায় হলে তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। জমি ক্রয়-বিক্রয়ে দালাল-টাউট-বাটপারদের প্রতারণা, পদে পদে এদের রসালো কথা, বেশীদামী জমি অল্পদামে ক্রয়ের সুযোগ হাতছাড়া না – বার ভুল তাড়না ইত্যাদি বিভ্রান্তিতে পড়ে জমি ক্রয় করতে গিয়ে ক্রেতা প্রায়ই প্রবঞ্চিত হচ্ছেন। অনেক সময় জমি কিনে দখল নিতে গিয়ে নাজেহালও হচ্ছেন। অতএব—

জমি ক্রয়কালে ক্রেতাকে যা যা জানতে হবে

(১) জরিপের মাধ্যমে প্রণীত রেকর্ড অর্থাৎ খতিয়ান ও নক্‌শা যাচাই করে দেখতে হবে।

(২) জমির তফসিল অর্থাৎ জমির মৌজা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর এবং উক্ত দাগে জমির মোট পরিমাণ জানতে হবে।

(৩) প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সি এস. এস. এ. আর. এস সার্টিফাইড পর্চা দেখতে হবে।

(৪) বিক্রেতা ক্রয়সূত্রে ভূমির মালিক হয়ে থাকলে তার ক্রয়ের দলিল/ৰায়া দলিল রেকর্ডের সঙ্গে মিলিয়ে বিক্রেতার মালিকানা নিশ্চিত হতে হবে।

(৫) বিক্রেতা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হলে সর্বশেষ জরিপের খতিয়ান বিক্রেতা বা তিনি যার মাধ্যমে প্রাপ্ত তার নামের অস্তিত্ব (যোগসূত্র) মিলিয়ে দেখতে হবে ।

(৬) জরিপ চলমান এলাকায় বিক্রেতার নিকট রক্ষিত মাঠ পর্চা যাচাই করে দেখতে হবে।
যদি মাঠ পর্চার মন্তব্য কলামে কিছু লেখা থাকে, যেমন— মন্তব্য কলামে (AD) এভাবে লেখা থাকলে বুঝতে হবে অত্র খতিয়ানের বিরুদ্ধে তসদিক পর্যায়ে আপত্তি আছে। এরূপ জমি ক্রয়ের আগে জরিপ অফিস/ক্যাম্পে গিয়ে উক্ত জমিটির সর্বশেষ অবস্থা জেনে নিতে হবে।

(৭) উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জমি বিক্রেতার শরীকদের সঙ্গে বিক্রেতার সম্পত্তি ভাগাভাগির বণ্টন নামা (ফারায়েজ) দেখে নিতে হবে।

(৮) বিক্রেতার নিকট থেকে সংগৃহীত দলিল, বায়া দলিল, খতিয়ান/পর্চা ইত্যাদি কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে তলবকারী/স্বত্বলিপি রেজিস্টারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে।

(৯) সর্বশেষ নামজারী পর্চা, ডি. সি আর, খাজনার দাখিলা (রসিদ) যাচাই করে দেখতে হবে। জমির খাজনা বকেয়া থাকলে এবং বকেয়া খাজনাসহ জমি ক্রয় করলে বকেয়া খাজনা পরিশোধের দায় ক্রেতার।

(১০) বিবেচ্য জমিটি সার্টিফিকেট মোকদ্দমাভুক্ত কিনা, কখনো নিলাম হয়েছে। কিনা তা তহসিল অফিস/উপজেলা ভূমি অফিস হতে জেনে নিতে হবে। সার্টিফিকেট মামলাভুক্ত সম্পত্তি বিক্রয়যোগ্য নয় (সরকারী দাবী আদায় আইন, ১৯১৩ এর ৭ ধারা)

(১১) বিবেচ্য তুমি খাস, পরিত্যক্ত/অর্পিত (ভি. পি.), অধিগ্রহণকৃত বা অধিগ্রহণের জন্য নোটিসকৃত কিনা তা তহসিল, উপজেলা ভূমি অফিস বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল. এ. শাখা থেকে জেনে নিতে হবে।

(১২) বিবেচ্য জমি কোন আদালতে মামলা-মোকদ্দমাভুক্ত কিনা তা জেনে নিতে হবে। মামলাভুক্ত জমি কেনা উচিত নয়।

(১৩) বিবেচ্য জমিটি সরেজমিনে যাচাই করে এর অবস্থান নক্শার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে এবং দখল সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে বিক্রেতার মালিকানা ও দখল নিশ্চিত হতে হবে।

(১৪) সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও জেলা রেজিস্ট্রারের অফিসে তল্লাশি দিয়ে জমির সর্বশেষ বেচাকেনার তথ্য জেনে নেয়া যায়

(১৫) প্রস্তাবিত জমিটি ঋণের দায়ে কোন ব্যাংক/সংস্থার নিকট দায়বদ্ধ কিনা।

(১৬) প্রস্তাবিত জমিতে যাতায়াতের রাস্তা আছে কিনা তাও দেখা প্রয়োজন।

(১৭) কোন কোন এলাকার জমিতে নানা ধরনের বিধি-নিষেধ থাকতে পারে, যেমন ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের জীব বৈচিত্র সংরক্ষণের স্বার্থে গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার নিম্নোক্ত মৌজাসমূহের ব্যক্তি মালিকানাধীন বা সরকারী জমিতে শিল্প/কারখানা/পাকা ইমারতসহ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, কৃষি, দুগ্ধ ও মৎস্য খামার ইত্যাদি স্থাপন না করার জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২২/১১/৯৯ ইং তারিখে পরম (শা-৩) ১৪/৯৪/৯৮৮নং স্মারকে একটি পরিপত্র জারী করে। তাই এ সব বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জমি কেনা উচিত।

 

জমি জমা ক্রয় ও দলিল রেজিস্ট্রি করবেন যেভাবে

 

মৌজাসমূহ হলঃ

(ক) আড়াইশো প্রসাদ (খ) বন খরিয়া (গ) বিশিয়া কুড়ি বাড়ি (ঘ) বারই পাড়া (ঙ) উত্তর সালনা (চ) বাউপাড়া (ছ) বাহাদুরপুর ও (জ) মোহনা ভবানীপুর।

১৮। অতিরিক্ত সতর্কতা ও পরবর্তীতে কোন ঝামেলা হলে আইনী সহায়তা অর্জনের লক্ষ্যে জমি ক্রয়ের পূর্বে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য কমপক্ষে ৩টি জাতীয় দৈনিকে ‘লিগ্যাল নোটিস’ প্রকাশ করা যেতে পারে।
উল্লিখিত প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই করে জমি ক্রয় করা ঝামেলা মনে হতে পারে। কিন্তু এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জমি ক্রয় করলে ভবিষ্যতের বহুবিধ ঝামেলা এড়ানো সম্ভব।

দলিল সম্পাদন এবং রেজিস্ট্রি করার জন্য দাখিলের সময় সীমাঃ

রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট, ১৯০৮ এর ২৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, উক্ত আইনের ২৪. ২৫ ও ২৬ ধারার শর্ত সাপেক্ষে উইল ব্যতীত অন্যান্য সকল দলিল সম্পাদনের তারিখ হতে চার মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রির জন্য রেজিস্ট্রারিং অফিসারের নিকট পেশ করতে হবে। চার মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে তা রেজিস্ট্রির জন্য গ্রহণ করা হবে না। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আদালতের কোন রায়/ডিক্রি /আদেশ থাকলে এবং উক্ত রায় ডিক্রির বিরুদ্ধে কোন আপিল হলে তা নিষ্পত্তির চার মাসের মধ্যে দলিলটি রেজিস্ট্রির জন্য দাখিল করতে হবে।

দলিল সম্পাদন

দলিল সম্পাদন বলতে বুঝায় দলিলে দলিল দাতার স্বাক্ষর বা টিপসহি প্রদান। দাতা যে তারিখে ও যে সময়ে দলিলে স্বাক্ষর করবেন সে তারিখ ও সে সময় হতেই দলিলটি সম্পাদিত হলো বলে গণ্য হবে। দলিল সম্পাদনের চার মাসের মধ্যে তা রেজিস্ট্রির জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করতে হবে। রেজিস্ট্রির পর দলিলটি দাতার স্বাক্ষরের তারিখ হতেই কার্যকর হবে।

যে সব দলিল রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক নয়ঃ

(১) কোন রাজস্ব আদালতের বাটোয়ারা কার্যক্রমে পক্ষগণ কর্তৃক কোন সোলেনামা সম্পাদিত ও আদালত কর্তৃক তা গৃহীত হলে ।

(২) সম্পত্তি ভোগ করার লক্ষ্যে কারো কোন অধিকার সংকোচন বা ধ্বংস না করে পারস্পরিক ও পারিবারিকভাবে নামান্তরকরণের কার্যক্রমে যে সোলেনামা করা হয়।

(৩) আদালতের ডিক্রি/রায় বা আদেশ (রেজিস্ট্রেশন আইনের ১৭ ধারা আদালতের ডিক্রির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়)।

(৪) অতীতের স্বত্ত্বের স্বীকৃতি দিয়ে প্রস্তুত পারিবারিক বন্দোবস্ত।

(৫) দেওয়ানী আদালতের বা সার্টিফিকেট অফিসারের নিলামে হস্তান্তরকৃত সম্পত্তির বয়নামা ।

(৬) ১০০ টাকার কম মূল্যের স্থাবর সম্পত্তির হস্তান্তর দলিল।

(৭) পোষ্যপুত্র / পালকপুত্র গ্রহণ করার দলিল।

(৮) সর্বোপরি কোন দলিল রেজিস্ট্রি করার প্রয়োজন আছে কি-না তা দলিলে বর্ণিত শর্ত দ্বারাই নির্ধারিত হয়ে থাকে।

দলিল লিখার সময় ক্রেতাকে যে সব বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হবেঃ

(১) দলিল সম্পাদনকারীকে (দাতা হিসেবে সহিকারী সাবালক ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হতে হবে।

(২) দলিলের অঙ্গসমূহ যেমন

(ক) শিরোনাম- ‘সাফ করালা’, ‘বায়নাপ’ ইত্যাদি।

(খ) প্রস্তাবিত জমির পরিমাণ ও বিক্রয় মূল্য (বায়না দলিল হলে বায়নায় পরিশোধিত টাকা বা টাকা)

(গ) পক্ষ পরিচয় (I) দলিল গ্রহীতা (II) দলিল দাতা বা প্রথম পক্ষ, দ্বিতীয় পক্ষ।

(ঘ) পূর্ণ নাম ও ঠিকানা, পেশা, ধর্ম ইত্যাদি। মালিকানার ভিত্তি, দলিল মূলে হলে পূর্ব দলিলের নম্বর

(৩) স্বত্ত্বের বর্ণনা দাতার ৩ তারিখ পর্য/খতিয়ান ইত্যাদি।

(৪) দলিলে প্রস্তাবিত জমির তফসিল (জেলা, উপজেলা, রেজিস্ট্রি অফিসের নাম, মৌজা, খতিয়ান, দাগ নং, জমির শ্রেণীর বর্ণনা থাকতে হবে।

(৫) প্রস্তাবিত জমির চৌহদ্দি (উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম পার্শ্বস্থ জমির মালিকগণের নাম) বর্ণনা ।

(৬) দলিলদাতা দলিলের উপরে ডানপাশে (নিচ থেকে উপরের দিকে) এবং শেষ পৃষ্ঠার নিচে সই/টিপ সই করবেন। প্রতি পৃষ্ঠায় সই করলে আরো ভালো হয়।

(৭) দলিল দাতার নিচে (শেষ পৃষ্ঠায়) দলিল লেখক স্বাক্ষর করবেন, এরপর কমপক্ষে দু’জন সাক্ষী এবং একজন সনাক্তকারী (বিক্রেতাকে) স্বাক্ষর করবেন।

(৮) দলিলে যতদূর সম্ভব কাটা, ঘষামাজা, অস্পষ্টতা এড়াতে হবে। তবুও কোনোরূপ ভুল-ত্রুটি, ঘষামাজা হয়ে গেলে তার লাইন ও শব্দের ক্রম উল্লেখ করে দলিলের শেষাংশে “কৈফিয়ত” লিখে দলিল লেখক তার নিচে সই করবেন।

(৯) তফসিল লেখার সময় প্রত্যেক দাগে মোট জমির পরিমাণ কত এবং অদ্যকার বিক্রেয় দলিলে উক্ত দাগের “কাতে” কত একর/শতাংশ জমি দেয়া হচ্ছে তা প্রতি ক্ষেত্রে লেখানো। কোন ক্রমেই কয়েকটি দাগের জমি একত্রে যোগ করে তার কাতে বিক্রিত একর/শতাংশ লেখা উচিত নয়।

(১০) বিভিন্ন জরিপের দাগ ও খতিয়ান নম্বর সঠিকভাবে লেখানো, এজন্য তহসিল অফিস হতে জমির সঠিক দাগ ও খতিয়ান নম্বর জেনে নেয়া যেতে পারে।

 

জমি জমা ক্রয় ও দলিল রেজিস্ট্রি করবেন যেভাবে

 

জমির হিস্যা লিখার পদ্ধতি

বিভিন্ন প্রকার জরিপ কাজের সময় রেকর্ড বা খতিয়ানে এবং হস্তান্তর দলিলে মালিকের জমির অংশ বা হিস্যা বিভিন্নভাবে (এককে) লিখার প্রচলন দেখা যায়, যেমন— আনা, কড়া, গণ্ডা, ইত্যাদি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী লক্ষ করা যায় আনার প্রচলন। তবে বর্তমানে একক আধুনিক পদ্ধতিতে অর্থাৎ সহস্রাংশে (দশমিক দিয়ে) লেখা হয় । আনা এককগুলো এখনও পুরনো দলিল, রেকর্ডে দেখা যায় ।

পরিচিতির জন্য তা নিম্নে দেয়া হল :

সনাতন একক আধুনিক একক (মোট সম্পত্তিকে ১০০০ ধরে)
= এক আনা ৬২.৫০ অংশ = এক আনা
= দুই আনা ১২৫.০০ অংশ = দুই আনা
=  তিন আনা ১৮৭.৫০ অংশ = তিন আনা
= চার আনা ২৫০.০০ অংশ = চার আনা
= পাঁচ আনা ৩ ১২.৫০ অংশ = পাঁচ আনা
= ছয় আনা ৩৭৫.০০ অংশ = ছয় আনা
= সাত আনা ৪৩৭.৫০ অংশ = সাত আনা
= আট আনা ৫০০.০০ অংশ = আট আনা
= নয় আনা ৫৬২.৫০ অংশ = নয় আনা
= দশ আনা ৬২৫.০০ অংশ = দশ আনা
= এগার আনা ৬৮৭.৫০ অংশ = এগার আনা
= বার আনা ৭৫০.০০ অংশ = বার আনা
= তের আনা ৮১২.৫০ অংশ = তের আনা
= চৌদ্দ আনা ৮৭৫.০০ অংশ = চৌদ্দ আনা
= পনের আনা ৯৩৭.৫০ অংশ = পনের আনা
= ষোল আনা ১০০০ ০০ অংশ = ষোল আনা

ক্রান্তি, কড়া, গণ্ডা ও আনার হিসেব

= ১ তিল
= ২ তিল
= ৩ তিল
= ২০ তিল = ১ ক্রান্তি।

= ১ ক্রান্তি
= ২ ক্রান্তি
= ৩ ক্রান্তি = ১ কড়া ।

= ১ কড়া
= ২ কড়া
= ৩ কড়া
= ৪ কড়া = ১ গণ্ডা

= ১ গণ্ডা
= ২ গণ্ডা
= ২০ গণ্ডা = ১ আনা।

আর. ও. আর. এ অংশ লিখার পদ্ধতি

আর ও আর খতিয়ানে কোন হোল্ডিংয়ের সমুদয় সম্পত্তিকে ১৬ আনা ধরে যেভাবে অংশ লিখা হয় তার একটি নমুনা নিম্নে তুলে ধরা হলো— ধরা যাক, হোল্ডিংয়ে শরীক সমান হিস্যায় তিন জন। তাহলে প্রত্যেকের প্রাপ্য অংশ দাঁড়ায়ঃ

পাঁচ আনা + ৬ গণ্ডা + (দুই) কড়া + (দুই ক্রান্তি)
তিন অংশে মোট হয় = (৫ × ৩) ১৫ আনা + (৬ x ৩) ১৮ গণ্ডা + (২ × ৩) ৬ কড়া + (২ × ৩) ৬ ক্রান্তি,

= ১৫ আনা + ১৮ গণ্ডা + ৬ কড়া + ২ কড়া (৩ ক্রান্তি = ১ কড়া হিসেবে),
= ১৫ আনা + ১৮ গণ্ডা + ৮ কড়া,
= ১৫ আনা + ১৮ গণ্ডা+ ২ গণ্ডা (৪ কড়া = ১ গণ্ডা হিসেবে).
= ১৫ আনা + ২০ গণ্ডা
= ১৫ আনা + ১ আনা (২০ গণ্ডা = ১ আনা হিসেবে),
= ১৬ আনা

বর্তমান সময়ে ব্যবহৃত আধুনিক এককের নমুনা

.০০২৫ একর = কোয়াটার শতাংশ
.০০৫ একর = আধা শতাংশ
.০০৭৫ একর = পোনে এক শতাংশ
.০১ একর = এক শতাংশ
০.১২৫ একর = সোয়া শতাংশ
.০১৫ একর = দেড় শতাংশ
.০১৭ একর = পোনে দুই শতাংশ
.০২ একর = দুই শতাংশ
.১ একর = দশ শতাংশ
১ একর = ১ একর

 

জমি জমা ক্রয় ও দলিল রেজিস্ট্রি করবেন যেভাবে

 

দলিল সম্পাদন প্রক্রিয়া

১। পূর্বোল্লিখিত বিষয়গুলো যাচাই করে কোন জমি ক্রয়যোগ্য মনে হলে ক্রেতা বিক্রেতার সঙ্গে বায়না দলিল বা সরাসরি দলিল সম্পাদন করতে পারেন। দলিল সম্পাদন করলে তা ৪ (চার) মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রি করতে হবে।

২। দলিল সম্পাদনকালে জমির তফসিল সতর্কতার সঙ্গে দলিলে লিখতে হবে। যে সব দাগে জমি ক্রয় করা হচ্ছে তাতে মোট কত টুকু জমি আছে এবং বিক্রেতার তাতে কতটুকু হিস্যা আছে তা দেখে প্রতি দাগে আলাদা আলাদা (কাতে) পরিমাণ উল্লেখ পূর্বক দলিল সম্পাদন করতে হবে।

৩। একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ দলিল লেখককে দিয়ে লিখার কাজটি করা উচিত। কারণ তাদের অজ্ঞতা ও অদক্ষতার জন্য ক্রেতাকে অনেক ক্ষেত্রে বিপদে পড়তে হয়।

৪। দলিল রেজিস্ট্রির সময় দলিলের রিসিট সাব-রেজিস্ট্রার অফিস হতে সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে হবে । যা দিয়ে পরবর্তীতে মূল দলিল উঠাতে হবে।

৫। জমি ক্রয়কালে সংগৃহীত সংশ্লিষ্ট সব দলিল, বায়া দলিল, পর্চা, নকশা, ফারায়েজ নিজের সংগ্রহে রাখতে হবে। যা সারা জীবনই কাজে লাগবে।

৬। দলিল সম্পাদনের সাথে সাথে জমির দখল বুঝে নিতে হবে। দখল ছাড়া স্বত্বসৃষ্টি পূর্ণাঙ্গ হয় না।

৭। ভূমি ক্রয় করে রেজিস্টার্ড দলিল বা দলিলের নকল হাতে পাবার পর সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে গিয়ে আবেদন করে বা সাব-রেজিস্ট্রারের অফিস হতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে পাঠানো “হস্তান্তর নোটিস” (এল. টি.) মূলে সরকারী ফিসাদি প্রদান করে নিজ নামে ভূমি নামজারী করিয়ে নিতে হবে। নামজারীর মাধ্যমে ক্রেতার নামে রেকর্ড সংশোধিত হবে। নামজারীর পর তহসিল অফিসে গিয়ে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে খাজনা দিয়ে খাজনা মওকুফ হলে “মওকুফ দাখিলা” সংগ্রহ করে রাখতে হবে ।

বহু বিক্রি বা একাধিক দলিল সম্পাদনের ফলাফল

বর্তমান সময়ে জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের জমির নিষ্কণ্টকতা সম্পর্কে যত রকম দুর্ভাবনার সৃষ্টি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো জমিটি বিক্রেতা ইতোপূর্বে অন্য কারো নিকট বিক্রি করেছে কিনা। অর্থাৎ বিক্রেতা কর্তৃক একাধিক গোপন বিক্রি/দলিল সম্পাদন করা হয়েছে কি-না। প্রশ্ন হচ্ছে, যদি এমনটি হয় তবে ক্রেতা হিসাবে কার দাবী অগ্রগণ্য হবে?

এ ক্ষেত্রে “সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২” (১৮৮২ সনের IV নং আইন) এর ৪৮ ধারার সুস্পষ্ট বিধান হলো, একাধিক দলিল সম্পাদিত হয়ে থাকলে যে দলিলটি আগে সম্পাদিত হয়েছে সেই দলিলটিই কার্যকরী হবে। এমনকি একই তারিখে সম্পাদিত একাধিক দলিলের মধ্যে প্রমাণ সাপেক্ষে অগ্রাধিকার নীতির ভিত্তিতে প্রথম সম্পাদিত দলিলটি কার্যকর হবে।

আরো জেনে রাখা ভাল যে, অগ্রাধিকার নীতির ক্ষেত্রে সম্পত্তির বিক্রয় দলিল কার্যকর হয় দলিলটি সম্পাদনের তারিখ হতে, রেজিস্ট্রেশনের তারিখ হতে নয়। তবে দলিলটি সম্পাদনের ৪ মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রি না হলে উক্ত নীতি প্রযোজ্য হবে না। তাই বিক্রয় দলিল রেজিস্ট্রেশনের পর তা সম্পাদনের তারিখ হতেই কার্যকরী হয়। কাজেই প্রথম সম্পাদিত দলিলটিই রেজিস্ট্রিকৃত সকল হস্তান্তর দলিলের মধ্যে অগ্রাধিকার পাবে।

দলিল রেজিস্ট্রি ফিস সম্পর্কে কিছু তথ্য

দলিল রেজিস্ট্রি করা হয় “রেজিস্ট্রেশন আইন” “স্ট্যাম্প আইন” “আয়কর আইন”. “অর্থ আইন” এবং রাজস্ব সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধি ও পরিপত্রের আলোকে। এ সব আইনের বিধান মতে দলিল রেজিস্ট্রির জন্য স্ট্যাম্প শুল্ক, রেজিস্ট্রি ফিস, অতিরিক্ত কর, উৎস কর, জেলা/পৌরকর ইত্যাদি ফিস দিতে হয়।

সকল দলিলের ফিসের হার সমান নয়, দলিলের প্রকৃতি অনুসারে তার ফিসের হার নির্ধারিত হয়ে থাকে। তাই একটি দলিল রেজিস্ট্রির ফিসের নির্দিষ্ট অংক বের করা কঠিন । তবুও সাধারণ ধারণা লাভের জন্য দলিল রেজিস্ট্রি ফিসের একটি মোটামুটি চিত্র নিম্নে দেয়া হল

(ক) কবলা দলিল রেজিস্ট্রির জন্য স্ট্যাম্প শুল্ক মোট ক্রয়মূল্যের ১০%

(খ) রেজিস্ট্র ফিস ১-২৫০০/- টাকা পর্যন্ত বিক্রয় মূল্যের জন্য ৫০/-টাকা

(গ) রেজিস্ট্রি ফিস ২৫০১- ৪০০০/- টাকা পর্যন্ত বিক্রয় মূল্যের জন্য ২%

(ঘ) রেজিস্ট্রি ফিস ৪০০১/- হতে তদূর্ধ্ব বিক্রয় মূল্যের জন্য ২%

(ঙ) হলফনামা ফিস ১০/- টাকা

(চ) অতি কর-সিটি কর্পো/পৌর/টাউন/ক্যান্টঃ বোর্ড এলাকার জমি বিক্রির ক্ষেত্রে ১%

(ছ) পৌর কর ১%

(জ) উৎস কর- ১০%

(ঝ) ভ্যাট- ২১/৪%

(ঞ) সিটি কর্পো/পৌর/টাউন/ক্যান্টঃবোর্ড এলাকা বহির্ভূত জমি বিক্রির ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ কর (১% + ১%) ২%

এবং এক্ষেত্রে অতিরিক্ত কর %

(চ) সিটি কর্পো/পৌর/টাউন/ক্যান্টঃ বোর্ড এলাকার বাইরের ১ লক্ষ টাকার অধিক মূল্যের ‘অকৃষি জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রেতাকে মোট বিক্রয় মূল্যের ১০% উৎস কর দিতে হবে ।

(ছ) মওকুফ সিটি কর্পোরেশন, পৌর এলাকা, টাউন কমিটি বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার বাইরের ১ লক্ষ টাকার নিচের অকৃষি জমি ও অন্যান্য (কৃষি / ভিটি / নামা ইত্যাদি) জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে “পৌরকর”, “উৎস কর”ও “ভ্যাট” দিতে হয় না।

(জ) কোন্ কর কে দিবে ভ্যাট ও উৎস কর সর্বদাই জমি বিক্রেতার দেয়। আয়কর আইনের বিধান মতে এ দু’ধরনের কর হচ্ছে বিক্রেতার আয়ের উপর ধার্য কর এ কর বিক্রেতার নামেই সরকারী কোষাগারে জমা দিতে হয়; তাই ভ্যাট ও উৎস কর বিক্রেতাকেই পরিশোধ করতে হবে। জমি বিক্রির সময় যদি এ দু’প্রকার কর নিয়ে কোন আলোচনা না হয়ে থাকে তবে তা অবশ্যই বিক্রেতা কর্তৃক পরিশোধ করতে হবে। ভ্যাট ও উৎস কর ব্যতীত অন্যান্য কর জমির ক্রেতাকে পরিশোধ করতে হবে।

 

জমি জমা ক্রয় ও দলিল রেজিস্ট্রি করবেন যেভাবে

 

কমিশনের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রি :

দলিল দাতাগণের মধ্যে কেউ রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে অক্ষম / অপারগ হলে তিনি রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩৮ ধারামতে “দলিল সম্পাদন স্বীকারোক্তি” গ্রহণের জন্য কমিশনের প্রার্থনা করে ‘সাব-রেজিস্ট্রার’ এর নিকট আবেদন করতে পারবেন। এরূপ আবেদনের ভিত্তিতে সাব-রেজিস্ট্রার বা তার প্রতিনিধি দলিলদাতার বাসস্থানে গিয়ে সম্পাদন স্বীকারোক্তি গ্রহণের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রি করাকে বলে ‘কমিশনের রেজিস্ট্রি’। এ জন্য আলাদা কমিশন ফিস দিতে হয়।

ভিজিটে দলিল রেজিস্ট্রির পদ্ধতি :

দলিল দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের কেউই যদি রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দলিল দাখিল করতে না পারেন সেক্ষেত্রে এ আইনের ৩১ ধারামতে দলিল দাতার বাড়িতে গিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে আবেদন করা যাবে।

কমিশন বা ভিজিটের জন্য আবেদন করা হলে রেজিস্ট্রারিং অফিসার’ আবেদনকারীকে উক্তরূপ রেজিস্ট্রির তারিখ ও সময় নির্ধারিত করে জানিয়ে দেবেন এবং নির্ধারিত তারিখে দাতার ‘সম্পাদন স্বীকারোক্তি’ দলিলে লিখে নিবেন এবং দলিলটি রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

রেজিস্ট্রারিং অফিসার নিজে যেতে না পারলে তার অফিসের যে কোন অফিসার/বেতনভোগী কর্মচারীকে দিয়ে তার কমিশন জারী করতে পারেন। কমিশন বা ডিজিট এর জন্য আবেদন করলে কমিশন ফিস বা ভিজিট ফিসও সঙ্গে জমা দিতে হয়।

রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ৭৯ ধারার বিধানবলে সরকার সময়ে সময়ে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ফিসের হার পরিবর্তন/সংশোধন/বৃদ্ধি করতে পারেন। এরূপ করা হলে, তা জনসাধারণের অবগতির জন্য সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করে। থাকেন। তাছাড়া পরিবর্তিত ফিসের তালিকা উক্ত ধারার বিধান বলে প্রত্যেক সাব- রেজিস্ট্রি অফিস’ ও ‘জেলা রেজিস্ট্রি অফিস’-এর প্রকাশ্য কোন স্থানে লটকিয়ে রাখা হয়।

নাবালকের দলিল দাখিলের বিধান

রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮-এর ৩৫ ধারা অনুসারে কোন নাবালক দলিল সম্পাদন করতে পারে না। তাই নাবালকের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনত অবৈধ। নাবালকের স্বাভাবিক অভিভাবক হলো তার পিতা, পিতা কর্তৃক নিযুক্ত ব্যক্তি, পিতামহ ও পিতামহ কর্তৃক নিযুক্ত ব্যক্তি। মা স্বাভাবিক অভিভাবক নয়। তাই নাবালকের সম্পত্তি হস্তান্তর বা অন্য কোন প্রয়োজনে স্বাভাবিক অভিভাবক না থাকলে নাবালকের আইনানুগ অভিভাবক নিয়োগের জন্য মেজরিটি এ্যাক্ট, ১৮৭৫ এ জেলা জজকে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।

এ আইন বলে জেলা জজ নাবালকের অভিভাবক নিয়োগ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে উক্ত নাবালকের বয়স ২১ বছর পূর্ণ হলে তবেই সে সাবালক বলে গণ্য হবে। আদালত কর্তৃক কাউকে নাবালকের অভিভাবক নিয়োগ না করা হলে সে নাবালকের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলেই সে সাবালক বলে গণ্য হবে এবং তার দ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তর বৈধ হবে।

দান / হেবা

দানকে মুসলিম আইনে হেবা বলে। সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের (টি.পি. এ্যাক্ট) ১২২ ধারায় বলা হয়েছে, কোন সম্পত্তি দাতা কর্তৃক কোন ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে হস্তান্তর করলে এবং গ্রহীতা বা তার পক্ষে কোন ব্যক্তি সেটি গ্রহণ করলে তাকে দান বা হেবা বলে।

দান বৈধ হওয়ার শর্ত তিনটি

(১) দাতা কর্তৃক দানের (ইজাব) ঘোষণা প্রদান,

(২) গ্রহীতা বা তার পক্ষ হতে দান গ্রহণ (কবুল) করা,

(৩) দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দানকৃত সম্পত্তির দখল দেয়া।

দানের উপাদানসমূহ

(ক) দাতার জীবনকালের মধ্যে দান কার্যসম্পন্ন হতে হবে। দান গ্রহণের পূর্বে দাতার মৃত্যু হলে দান বাতিল বলে গণ্য হবে ।

(খ) দানের সময় সম্পত্তিতে দাতার মালিকানা ও দখল থাকতে হবে।

(গ) দান স্বেচ্ছায় এবং পণবিহীন হতে হবে।

(ঘ) দাতাকে সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন ও সাবালক হতে হবে।

(ঙ) দান গ্রহীতা মানসিক ভারসাম্যহীন ও নাবালক হলে তার পক্ষে অভিভাবককে দান গ্রহণ করতে হবে।

(চ) মুসলিম আইন অনুযায়ী দাতা তার সমুদয় সম্পত্তি যে কাউকে দান করতে পারেন। তবে দায়ভাগ মতে একজন হিন্দু যাদের ভরণ-পোষণে আইনত বাধা তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখার পর বাকী সম্পত্তি দান করতে পারেন।

(ছ) দখল হস্তান্তরের পূর্বে দান প্রত্যাহার করা যায়। দখল হস্তান্তরের পরে দান প্রত্যাহারের জন্য আদালতের ডিক্রি লাগবে।

(জ) দানকারী ঋণের দায় এড়ানোর বা অন্য কোন অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণামূলকভাবে দান করলে, পাওনাদারের আবেদনে ঐ দান বাতিল হতে পারে।

(ঝ) মৃত্যুশয্যাকালীন দান উইলের ন্যায় কার্যকরী হবে। অর্থাৎ ঐ দান অনাত্মীয়ের অনুকূলে করা যাবে এবং মোট সম্পত্তির ভাগের বেশী দান করা যাবে না। এ অবস্থায় কোন উত্তরাধিকারীকে দান করলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে, তবে অন্য উত্তরাধিকারীগণের সম্মতি থাকলে আত্মীয়কে ভাগের অধিক সম্পত্তি বা উত্তরাধিকারীর অনুকূলে দান বৈধ হবে।

(ঞ) মুসলিম আইনের বিধান অনুযায়ী দান লিখিত না হলেও চলে। মৌখিক দানের বিষয়ে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ এর রায় হলো কৃষি জমির দান রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক নয় । তবে, টি.পি. এ্যাক্টের ১২৩ ধারার বিধান হলো দান বা হেবা লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে।

 

জমি জমা ক্রয় ও দলিল রেজিস্ট্রি করবেন যেভাবে

 

হেবা বিল এওয়াজ

মুসলিম আইন অনুসারে কোন বিনিময় নিয়ে দান করাকে বলে “হেবা বিল এওয়াজ”। এতে বিক্রয় চুক্তির উপাদান বিদ্যমান থাকায় এটি মূলত এক ধরনের বিক্রয়।

হেবা বিল এওয়াজ এর উপাদানসমূহ

(১) গ্রহীতাকে হেবা গ্রহণের বিনিময়ে দাতাকে অবশ্যই কিছু দিতে হবে।
(২) দাতাকে দানের মাধ্যমে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিঃস্বত্বে পরিণত করতে হবে।
(৩) হেবা বিল এওয়াজ প্রত্যাহারযোগ্য নয়।
(৪) দাতার উত্তরাধিকারীগণের কোন অধিকার এতে থাকে না, তবে শর্ত থাকলে গ্রহীতার মৃত্যুর পর সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের নিকট আসতে পারে।

উইল বা অছিয়ত

উইল মূলত ভবিষ্যৎ দান। কোন সুস্থ সাবালক মুসলমান কর্তৃক তার মৃত্যু পরবর্তীকালীন সম্পত্তি বা উক্ত সম্পত্তির মুনাফা অনন্তকালের জন্য বা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কোন কিছুর বিনিময় ছাড়া হস্তান্তর করার ইচ্ছাই হলো উইল বা অছিয়ত ।

উইলের শর্ত

(ক) সম্পত্তি হস্তান্তরের বিষয়টি দাতার বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে।
(খ) উইল, উইল মাতার মৃত্যুর পর কার্যকর হবে।

উইলের উপাদান (১) উইল সাধারণত উত্তরাধিকারী নয় এমন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নামে করতে হয়। তবে কোন উত্তরাধিকারীর অনুকূলে উইল করা হলে পাতার মৃত্যুর পর অন্যান্য উত্তরাধিকারী তা মেনে নিলে ঐ উইল বৈধ হবে।

ˇ (২) আইনানুসারে দাতার মোট সম্পত্তির ১/৩ ভাগ সম্পত্তি উইল করা যাবে। ১/৩ এর বেশী সম্পত্তি উইল করা হলে তাতে দাতার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীদের সম্মতি না থাকলে ভাগ সম্পত্তির উপর কার্যকর হবে (দাতার মৃত্যুর পরই কেবল তার উত্তরাধিকারীদের সম্মতি/আপত্তি গ্রহণযোগ্য)।

(৩) উইল মৌখিক এবং লিখিত দু’ভাবেই করা চলে। এমনকি অসামর্থ্যের কারণে ইঙ্গিতেও উইল করা যায়। তবে মৌখিক উইলের ক্ষেত্রে দু’জন পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলা সাক্ষীর উপস্থিতিতে হতে হবে। বর্তমান বাস্তবতায় উইল লিখিত হওয়াই উচিত।

(৪) উইল দাতা মৃত্যুর পূর্বে যে কোন সময় উইল রদ (বাতিল) করতে পারেন। একবার দানের বস্তুটি উইল করার পর পুনরায় ঐ একই বস্তু অন্য কারো অনুকূলে উইল করলে পূর্বের উইলটি বাতিল হয়ে যাবে ।

(৫) একজন হিন্দু তার সকল সম্পত্তি উইল করতে পারেন, তবে যাদের ভরণ-পোষণের জন্য তিনি আইনত বাধ্য তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রেখে বাকী সম্পত্তি উইল করতে হবে ।

উইল বিলুপ্তি

(১) উইল দানের পর উইলদাতা বিকৃত মস্তিষ্ক বিশিষ্ট হয়ে গেলে। এমন কি দাতার মৃত্যুর পূর্বে সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন হয়ে গেলেও।

(২) উইল গ্রহীতা দাতার আগে মারা গেলে ।

(৩) দাতা বা গ্রহীতা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করলে।

(৪) উইল গ্রহীতা দাতাকে হত্যা করলে ।

(৫) উইলকৃত সম্পত্তির উপর অন্য কারো অধিকার সাব্যস্ত হলে । অস্থি অগ্নিয়তের বর্ণনানুযায়ী সম্পত্তি পরিচালনার জন্য নিযুক্ত ব্যক্তিকে অছি বলে।

উইল প্রবেটঃ অছিয়ত সরকারীভাবে কায়েম করতে হলে আদালত হতে যে স্বীকৃতি নিতে হয় তাকে বলে প্রবেট। এটি না নেয়া হলে অছিয়ত আদালতে গ্রাহ্য নাও হতে পারে। প্রবেট মুসলিম উইলে আবশ্যকীয় নয়।

বিষয়ঃ The Registration (Amendment) Act, 2004-এর শীর্ষক আইনের উল্লেখযোগ্য বিধানের সার-সংক্ষেপ

(ক) মূল্য নির্বিশেষে সকল প্রকার স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে রেজিষ্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা Registration Act, 1908-এর অধীন ১০০ টাকা কম মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সম্পাদিত দলিলের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে ১০০ টাকা মূল্যের কোন স্থাবর সম্পত্তি বাস্তবে না থাকলেও এ বিধানের সুযোগে অনেক স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করা হচ্ছে যার কোথাও কোন রেকর্ড থাকছে না।

সুতরাং একটি আধুনিক ও দক্ষ ভূমি ব্যবস্থাপনার স্বার্থে মূল্য নির্বিশেষে যে কোন স্থাবর সম্পত্তির হস্তান্তর রেজিস্ট্রি হওয়া বাঞ্ছনীয় বিধায় এতদুদ্দেশ্যে উল্লিখিত আইনের সর্বত্র সংশোধন করা হয়েছে [ধারা ২ দ্রষ্টব্য]।

(খ) হেবা দলিলের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা Registration Act-এর section 17(1) (a) অনুযায়ী দানপত্র দলিলের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক, কিন্তু মুসলিম ব্যক্তিগত ধর্মীয় আইনের অধীন মৌখিক দানের মাধ্যমে স্থাবর সম্পত্তি দান (হেবা) করার ক্ষেত্রে দলিল সম্পাদনের, বা দলিল সম্পাদিত হলে উক্ত দলিলের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক নয়। ফলে এরূপ হস্তান্তর সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য কোন রেকর্ড না থাকায় এসব সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি জটিল আকার ধারণ করে।

এ সমস্যা নিরসনের জন্য উল্লিখিত আইনের section 17 (1) সংশোধন এবং নতুন section 78A সন্নিবেশ করে ১০০ (একশত) টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণের বিধানসহ হেবার মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশনের বিধান সংযোজন করা হয়েছে; সেটা ছাড়াও বন্ধকী দলিলের (১৮৮২ সনের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৯ ধারার অধীনকৃত) এবং ১৯৫০ সনের প্রজাস্বত্ব আইনের ধারা ১৯৬ এর অধীন। আদালতের মাধ্যমে বিক্রয় দলিলের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

(গ) উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত সম্পত্তির বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার সম্পত্তিতে ওয়ারিশগণ মালিক হন। ওয়ারিশগণের মালিকানা এবং তাদের নিজ নিজ অংশ আপোস-বণ্টনের মাধ্যমে বণ্টনপূর্বক সুজিত বণ্টননামা দলিলটি বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রেশনের বিধান না থাকায় এসব সম্পত্তির হস্তান্তর সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয় না।

এ সুযোগে অনেক ক্ষেত্রে একই জমি প্রতারণামূলকভাবে একাধিকবার বিক্রয়, দান কিংবা অন্যভাবে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে, যার ফলশ্রুতিতে মামলা-মোকদ্দমার উদ্ভব হয়। এ অবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে Registration Act-এর section 17 ( 1 ) সংশোধনক্রমে ওয়ারিশগণের মধ্যে সম্পাদিত আপোস-বণ্টননামা দলিল বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রেশন করার বিধান করা হয়েছে।

(ঘ) বায়না চুক্তির রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা- স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য প্রায়শ ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে বায়নাপত্র সম্পাদিত হয়ে থাকে যা বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রেশন করার কোন বিধান প্রচিলত আইনে নেই। বায়নাপত্রের রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির নির্ভরযোগ্য রেকর্ডও থাকে না।

ফলে অনেক ক্ষেত্রেই একই সম্পত্তি সংক্রান্ত একাধিক বায়নাপত্র তৈরি থেকে শুরু করে পেছনের তরিখ (back date) দিয়ে বায়নাপত্র সৃজন করা ইত্যাদি প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এ অবস্থার সমাধানকল্পে Registration Act-এ দু’টি নতুন sections 17A এবং 78A অন্তর্ভুক্ত করে বায়নাপত্র বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশনের ও নির্দিষ্ট ফি প্রদানের বিধান করা হয়েছে।

সুতরাং ধারা 17A অনুযায়ী অন্য কোন আইনে যা কিছু থাকুক না কেন স্থাবর সম্পত্তির বিক্রয়ের বায়নাপত্র লিখিত ও রেজিস্ট্রি হতে হবে এবং উক্ত বায়না সম্পাদনের ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে তা রেজিস্ট্রেশনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে এবং দলিলাদি রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত বিধানাবলী উক্ত বায়না রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। নতুন ধারা 17B অনুযায়ী সংশোধিত বিধান কার্যকর (তথা ২০০৫ সনের ১ জুলাইয়ের পূর্বে) হওয়ার পূর্বে যেক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের বায়নাপত্র হয়েছিল কিন্তু রেজিস্ট্রেশন হয়নি, সেক্ষেত্রে-

(ক) বায়নাভুক্ত জমির বিক্রয় দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য এই আইন কার্যকর হওয়ার ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে উপস্থাপন করতে হবে; বা

(খ) উক্ত বায়নাপত্রটি রেজিস্ট্রেশনের জন্য এই আইন কার্যকর হওয়ার ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে উপস্থাপন করতে হবে। উপরোক্ত বিধান মান্য না করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, অন্য আইনে তামাদি সংক্রান্ত যা কিছুই থাকুক না কেন, দফা (ক) ও (খ) তে উল্লিখিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে চুক্তি প্রবলের বা চুক্তি বাতিলের মামলা করতে পারবে। তর অন্যথা হলে চুক্তিটি বাতিল বলে গণ্য হবে।

স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত যে সকল বায়নার ভিত্তিতে ধারা ১৭ক বলবৎ হওয়ার পূর্বে দেওয়ানী আদালতে মামলা ইতোমধ্যে দায়ের হয়েছে সে সকল বায়না চুক্তির ক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) এর বিধান প্রযোজ্য হবে না।

(ঙ) হস্তান্তর দলিল সংক্ষিপ্তকরণ- বিদ্যমান আইনে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে মালিকানার বিষয়টি নির্ভরযোগ্য, সুস্পষ্ট ও আস্থাভাজন করার লক্ষ্যে Registration Act-এর অধীন হস্তান্তর দলিলাদি নির্ধারিত ফরমেট (Format) এ সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন করার বিধান সন্নিবেশের প্রয়োজন রয়েছে। এ উদ্দেশ্যে Registration Act-এ নতুন section 220 সন্নিবেশ করা হয়েছে ।

(চ) রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা- বর্তমানে কোন স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে হস্তান্তর দলিল সম্পাদনের পরবর্তী চার মাসের মধ্যে দলিল রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। বিগত শতাব্দীতে অর্জিত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আর্থ- সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই সময়সীমা সংকুচিত করতঃ দলিল সম্পাদনের পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে উক্ত দলিলের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করে Registration Act -এ বিদ্যমান section 23 সংশোধন করা হয়েছে।

(ছ) রেজিস্ট্রেশনের পূর্বে সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক কতিপয় বিষয় নিশ্চিতকরণ- বিদ্যমান ব্যবস্থায় স্থাবর সম্পত্তির হস্তান্তর রেজিস্ট্রেশন করা হলেও অনেক বিক্রেতা মালিকানা ও দখলহীন জমি বিক্রয় করে সহজ সরল ক্রেতা সাধারণকে প্রতারণা করে থাকেন। এরূপ প্রতারণা নিরসনের জন্য স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরে ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ স্বত্ব ও নির্ভেজাল দখলের বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রেজিস্ট্রেশনের পূর্বে সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক উক্ত সম্পত্তি সংক্রান্ত কতিপয় বিষয় নিশ্চিতকরণের বিধান প্রবর্তন করে Registration Act- এ নতুন section 52A সন্নিবেশ করা হয়েছে।

বিষয় The Transfer of Property (Amendment)

Act, 2004-এর বিধানের সার-সংক্ষেপ।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

সম্পত্তি হস্তান্তর আইন-এর সংশোধনী

১। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিকগণ প্রথমে জমি বিক্রয়ের বায়না করে পরবর্তীতে প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণের মাধ্যমে বেশী দামে অন্য তৃতীয় পক্ষের নিকট বায়নাকৃত জমি বিক্রয় করে লাভবান হয়। এ প্রতারণা রোধকল্পে নতুন বিধান 53B সন্নিবেশ করা হয়েছে। উক্ত বিধান অনুযায়ী আগামী ১ জুলাই হতে স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে কোন বায়না করা হলে বায়না বলবৎ থাকাকালে উক্ত জমি অন্য কোন তৃতীয় পক্ষের নিকট বিক্রয় করা যাবে না। যদি বিক্রয় করা হয়, তাহলে উক্ত বিক্রয় বাতিল বলে গণ্য হবে।

২। বিদ্যমান আইনে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দাতার নামে খতিয়ান থাকার কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। এক্ষেত্রে প্রতারণার সুযোগ হয়। এ সমস্যার নিরসনকল্পে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উক্ত সম্পত্তির খতিয়ান দলিলদাতার নামে
থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ জন্য নতুন বিধান section 53C সংযোজন করে Transfer of Property Act-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়েছে।

৩। অনেক ক্ষেত্রে জমি বন্ধক রেখে পরবর্তীতে প্রতারণামূলকভাবে উক্ত জমি তৃতীয় পক্ষের নিকট পুনঃবন্ধক বা বিক্রয় করা হয়। এতে বন্ধকদাতা লাভবান হয় এবং বন্ধকগ্রহীতা প্রতারণার স্বীকার হয়। এ সমস্যা নিরসনে নতুন বিধান 53D সন্নিবেশ করা হয়েছে। এ বিধানানুযায়ী স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক দেয়া হলে উক্ত সম্পত্তি বন্ধবগ্রহীতার সম্মতি ব্যতীত অন্য কোন তৃতীয় পক্ষের নিকট বিক্রয় করা বা বন্ধক দেয়া যাবে না। যদি বন্ধক দেয়া বা বিক্রয় করা হয় তবে উক্ত বিক্রয় বা বন্ধক বাতিল বলে গণ্য হবে।

৪। স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়, বন্ধক ও দানপত্র দলিলের সাথে স্বত্ত্ব সংক্রান্ত নিশ্চিতকরণের জন্য কোন এফিডেভিট সংযুক্ত করার বাধ্যবাধকতা না থাকার কারণে স্বত্ব নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ সমস্যার নিরসনকল্পে নতুন বিধান 53E সন্নিবেশ করা হয়েছে। উক্ত বিধানানুযায়ী প্রত্যেক বিক্রয়, বন্ধক ও হেবা দলিলের সাথে দলিলদাতা কর্তৃক স্বত্ব সংক্রান্ত এফিডেভিট সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

৫। স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর সম্পর্কিত বায়নাপত্র (Contract for sale ) আইনগতভাবে কার্যকর করার বিধান Transfer of Property Act, 1882-তে বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু এরূপ বায়নাপত্র বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশনের কোন বিধান নেই। বায়নাপত্র রেজিস্ট্রিকৃত না হওয়ায় বিভিন্নরকম প্রতারণা ও জটিলতার সৃষ্টি হয়। একই কারণে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির নির্ভরযোগ্য রেকর্ডও থাকে না। এমতাবস্থায় এরূপ বায়নাপত্র বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রেশনের উদ্দেশ্যে Transfer of Property Act-এর section 54A সংযোজন করা হয়েছে।

৬। বিদ্যমান আইনে বন্ধকী দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক না হওয়ার কারণে স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে কোন ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ নিলে, উক্ত ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বন্ধকী দলিল মূলে কোন ঋণ প্রদান করার পর তা আদায় করার কোন আইনগত ও ফলপ্রসূ উপায় থাকে না। এমতাবস্থায়, বন্ধকী দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করার জন্য Transfer of Property Act-এ প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়েছে।

৭। বিদ্যমান আইনে দান সংক্রান্ত বিধানাবলী (Chapter-VI OF GIFTS) মুসলিম আইনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সম্পাদিত হেবা দলিলের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করার লক্ষ্যে Registration Act-এর section 17 সংশোধন করা হয়েছে। উক্ত বিধানের সাথে সঙ্গতি সাধনের লক্ষ্যে Transfer of property Act-এর section 123 এবং 129-এ প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়েছে।

বিষয় The Specific Relief (Amendment) Act, 2004-এর বিধানের সার-সংক্ষেপ।

রেজিস্ট্রিবিহীন বায়না চুক্তি বলবৎ করার সুযোগ রহিতঃ প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তি মৌখিক চুক্তি বা রেজিস্ট্রিবিহীন বায়নাপত্রের ভিত্তিতে দেওয়ানী আদালতে চুক্তি বলবৎকরণের মামলা করতে পারে। এরূপ মৌখিক বা অরেজিস্ট্রিকৃত বায়নার ভিত্তিতে চুক্তি প্রবলের মামলায় প্রতারণার আশায় গ্রহণ ও সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ সমস্যার সমাধানকল্পে Specific Relief Act 1877 সংশোধন করে একটি নতুন section 21A সন্নিবেশ করা হয়েছে। প্রবর্তিত নতুন বিধান অনুযায়ী চুক্তি প্রবলের মামলা আদালতে দায়েরের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত দুটি শর্ত প্রযোজ্য হবে, যথা

(ক) লিখিত এবং রেজিস্ট্রিকৃত বায়না ব্যতীত চুক্তি প্রবলের মামলা দায়ের করা যাবে না; এবং

(খ) বায়নার অবশিষ্ট টাকা আদালতে জমা না করলে মামলা দায়ের করা যাবে না।

তামাদি আইন-এর সংশোধনী

বিষয়: The Limitation (Amendment) Act, 2004-এর বিধানের সার-সংক্ষেপ।

তামাদি আইনে মামলা দায়ের সম্পর্কিত দীর্ঘ মেয়াদ হ্রাস বর্তমানে চুক্তি বলবৎকরণের জন্য তামাদি আইনের First Schedule এর Article 113-এর নির্ধারিত মেয়াদ হচ্ছে তিন বছর। প্রায় একশত বছর পূর্বে প্রণীত উক্ত আইনে যে প্রেক্ষাপটে তিন বছরের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল, আজকের প্রেক্ষাপট তা হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইতোমধ্যে যোগাযোগ ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোর প্রভূত উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ হয়েছে।

বর্তমানে এ মেয়াদের অপব্যবহারের কারণে তৃতীয় ব্যক্তি বায়নাদাতার নিকট থেকে সংশ্লিষ্ট ভূমির ত্রুটিপূর্ণ স্বত্ব খরিদ করে প্রতারিত ও বিপন্ন হন। এ অবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে Limitation Act-এর First Schedule-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন করে চুক্তি প্রবলের ও চুক্তি রদের মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে তামাদির মেয়াদ তিন বছরের স্থলে এক বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version