আজকের আলোচনার বিষয়ঃ নামজারী-জমাখারিজ সংক্রান্ত বিধানাবলী, ১৯৯০
Table of Contents
নামজারী-জমাখারিজ সংক্রান্ত বিধানাবলী, ১৯৯০
The Government Estate Manual. 1958 বাতিলক্রমে তার পরিবর্তে “বাংলাদেশ ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল” জারী হয়েছে। উক্ত ম্যানুয়াল-এ নামজারী জমাখারিজ সংক্রান্ত বিধানাবলী বর্ণিত আছে তা নিম্নে উপস্থাপিত হল
ভূমি ব্যবস্থাপনা অনুচ্ছেদ ৩০৯ বিনিময় কেইস দ্রুত নিষ্পত্তিকরণ
১৯৫৬ সালের ১৪ এপ্রিল একই সাথে সকল জমিদারী ও মধ্যস্বত্ব বিলোপ করে জমিদারগণকে ক্ষতিপূরণ তালিকা প্রণয়ন এবং ভূমি মালিকগণকে সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আনয়ন করার উদ্দেশ্যে একটি সংক্ষিপ্ত জরিপ ও রেকর্ড সংশোধনী কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৫৬ হতে ১৯৬২ পর্যন্ত সময়ে পরিচালিত এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সর্বনিম্ন ভূমি মালিকের নাম ও তার জমির বিবরণাদি সম্বলিত একটি হস্তলিখিত রেকর্ড প্রস্তুত করা হয়। এটিই এস. এ. খতিয়ান নামে পরিচিত। এর তিন কপি প্রস্তুত করে এক কপি জেলা রেকর্ডরুমে, এক কপি তহসিল (ইউনিয়ন ভূমি অফিস) অফিসে এবং অন্যটি সার্কেল পরিদর্শক (থানা ভূমি) অফিসে প্রদান করা হয় ।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩১০ এস. এ খতিয়ান
প্রয়োজনে কোন জেলায় বা এলাকায় পুনরায় জরিপ করে পূর্ববর্তী জরিপে প্রণীত মৌজা নকশা এবং খতিয়ান সংশোধন ও হালকরণ করার জন্য জমিদারী অধিগ্রহণ প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ১৪৪ ধরায় বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনের ১৪৪ ধারা এবং সার্ভে আইন, ১৮৭৫ এর ৩ ধারা অনুসারে সরকার কোন জেলা বা এলাকায় জরিপ ও রেকর্ড প্রণয়নের জন্য প্রজ্ঞাপন মূলে আদেশ জারী করলে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর সংশোধনী বা পুরাদস্তুর ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকেন। একপ জরিপে প্রণীত রেকর্ড বা খতিয়ান চূড়ান্ত প্রকাশনার পর তা চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়েছে এ মর্মে সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন জারী হওয়ার পর ঐ নতুন খতিয়ান কার্যকর হয় এবং সাবেক জরীপে প্রণীত খতিয়ান এর কার্যকারিতা হারায় ।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩১১
খতিয়ান সংশোধন দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে এ জরিপ রেকর্ড সংশোধন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় বলে দুই জরিপের মধ্যবর্তী সময়ে উত্তরাধিকার, দান, বিক্রয় ইত্যাদি হস্তান্তর প্রক্রিয়ার ফলে ভূমি মালিকানার পরিবর্তন জরিপে প্রণীত খতিয়ানে প্রতিফলিত করার জন্য অর্থাৎ খতিয়ান হালকরণ করার জন্য জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ১৪৩ ধারায় কালেক্টরকে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। জমা খারিজ, একত্রীকরণ ও নামজারীর মাধ্যমে কালেক্টর অন্তর্বর্তীকালীন খতিয়ান সংশোধন ও হালকরণ করে থাকেন।
ভূমি স্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩১২
জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ১৪৩ ধারা মোতাবেক কালেক্টর করণিক প্রাপ্তি সংশোধনসহ নিম্নোক্ত কারণে খতিয়ান সংশোধন করে হালকরণকৃত খতিয়ান সংরক্ষণ করবেন
(ক) উত্তরাধিকার বা মালিকানা পরিবর্তন;
(খ) জমা একত্রীকরণ ও পৃথকীকরণ প্রক্রিয়ার মালিকানা পরিবর্তন,
(গ) সরকার কর্তৃক ক্রয়কৃত বা অন্য খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদান;
(ঘ) পরিত্যক্ত বা পয়স্তিজনিত কারণে ভূমি কর মওকুফ।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩১৩: উত্তরাধিকার সূত্রে নামজারী
লক্ষ করা গেছে যে, ভূমি মালিকের মৃত্যু হওয়ার পর উত্তরাধিকারীগণের প্রায়ই নামজারী হয় না। এতে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে অসুবিধা সৃষ্টি হয় এবং মৃত মালিকের নামে সার্টিফিকেট দায়ের করা হয়ে থাকলে তা অবৈধ বলে বকেয়া কর আদায় করা যায় না। মালিকের মৃত্যুজনিত কারণে নামজারী না হওয়ার প্রধান কারণ এই যে, উত্তরাধিকারগণ স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে নামজারীর জন্য আগ্রহী হন না এবং সত্য গোপন করার প্রবণতাও প্রবল থাকে। জন্ম-মৃত্যুর কোন হিসাব রাজস্ব অফিসে রাখা হয় না।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ – ৩১৪
ইউনিয়ন ভূমি সহকারীর পক্ষে ভূমি মালিকের মৃত্যু সংবাদ প্রায় ক্ষেত্রে অবগত হওয়া সম্ভব। ভূমি মালিকের মৃত্যু সংবাদ পাওয়া মাত্র ইউনিয়ন ভূমি সহকারী ওয়ারিশগণের উপর নোটিস প্রদান করতঃ ভূমি মালিকের ধর্মীয় আইন অনুসারে তাদের স্বীয় অংশ উল্লেখ করে নামজারীর জন্য দরখাস্ত পেশ করতে নির্দেশ প্রদান করবেন। দরখাস্ত পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ভূমি সহকারী সরেজমিনে তদন্ত করে এবং প্রকৃত ওয়ারিশগণ সম্পর্কে অনুসন্ধান করে নামজারীর সুপারিশসহ দরখান্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নিকট প্রেরণ করবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) একটি নামজারীর নথি / কেইস খুলে সংশ্লিষ্ট সকল মালিকগণকে শুনানীর সুযোগ প্রদান করে নামজারীর নির্দেশ দান করবেন এবং খতিয়ান স্বহস্তে সংশোধন করবেন। খতিয়ান সংশোধনী আদেশের নম্বর ও তারিখ উল্লেখ করে সীল-স্বাক্ষর করতে হবে।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩১৫ হস্তান্তর মূলে নামজারী
তুমি হস্তান্তর আইন (Transfer of Property Act) এবং রেজিস্ট্রেশন আইনের বিধান অনুসারে একশত টাকা বেশি মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়, দান, ওয়াকফ ইত্যাদির জন্য হস্তান্তর দলিল রেজিস্ট্রি করা আবশ্যক। প্রচলিত নিয়মানুযায়ী হস্তান্তর দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পর জমি হস্তান্তরের একটি নোটিস সাব-রেজিস্ট্রি অফিস হতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে প্রেরণ করা হয়ে থাকে। দেখা যায় যে, প্রায়শঃ এস্তুপ হস্তান্তর নোটিসের উপর কোন নামজারী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় না।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩১৬ হস্তান্তর নোটিস পাওয়া সত্ত্বেও নামজারী না করার কারণ
হস্তান্তর দলিলের নোটিস পাওয়া সত্ত্বেও তার উপর নামজারী প্রক্রিয়া রুজু না করার কিছু কারণ লক্ষ করা গেছে। এ কারণসমূহ নিম্নরূপ
(ক) নোটিস প্রায়ক্ষেত্রে অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য ।
(খ) দলিল দাতার জমির উপর মালিকানা ও দখল আছে কিনা এবং বর্তমান ক্ষেত্রে তার জমি হস্তান্তর করার অধিকার আছে কিনা দলিল রেজিস্ট্রির সময় তা যাচাই করা হয় না।
(গ) উপরোক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভাবে রেজিস্ট্রি দলিল মূলে ভূমি হস্তান্তরে অনেক জালিয়াতি ও প্রবঞ্চনা সংঘটিত হতে দেখা যায়।
(ঘ) সাব-রেজিস্ট্রি অফিস হতে কয়েক বছরেও মূল দলিল ফেরৎ প্রদান করা হয় না বলে নামজারীতে বিলম্ব হয়।
(ঙ) হস্তান্তর নোটিসসমূহ রেজিস্ট্রি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে না পাঠিয়ে অনেকদিন পর একসঙ্গে কতকগুলো নোটিস প্রেরণ করার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩১৭ হস্তান্তর নোটিস প্রাপ্তির পর নামজারী কেইস সৃজন
রেজিস্ট্রেশন অফিস হতে ভূমি হস্তান্তর নোটিস পাওয়া মাত্র সহকারী কমিশনার (ভূমি) নামজারী কেইস রুজু করবেন। ক্রেতাগণ কাগজপত্র ও দলিলের কপি দাখিল করলে গুগুলো নিরীক্ষা করে এবং প্রয়োজনীয় তদন্ত করে নামজারীর নির্দেশ প্রদান করতে হবে। নামজারীর তদন্ত প্রতিবেদন ফরম পরিশিষ্ট ১৩-তে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩১৮ নামজারী কেইসে সতর্কতা
হস্তান্তরজনিত নামজারীর ক্ষেত্রে সহকারী কমিশনারকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দলিল দাতাকে অবশ্যই খতিয়ানের মালিক হতে হবে। হালকরণকৃত খতিয়ানে মালিক নন এমন কোন ব্যক্তি ভূমি হস্তান্তর করে থাকলে কিংবা খতিয়ানে উল্লিখিত মালিক ব্যতীত অন্য কোন সূত্রে মালিকানার দাবিদার এরূপ কোন ব্যক্তি হস্তান্তর দলিল সম্পাদন করলে তার ভিত্তিতে নামজারী করা ১৪৩ ধারার বিধান পরিপন্থি।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩১৯ জরিপ চলাকালে নামজারী
জরিপ চলাকালীন নামজারী কার্যক্রম তুমি ব্যবস্থাপনা অফিসে চলতে দেয়া হবে কিনা এ সম্পর্কে প্রশ্ন উঠতে পারে। যেহেতু জরিপকালে খতিয়ান প্রণয়নকারী জরিপ কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ সরেজমিনে উপস্থিত থাকবেন এবং নামজারীর আবেদনকারীগণ কাগজপত্রসহ প্রকাশ্যভাবে হাজির থাকেন এবং যেহেতু জরিপ একটি খতিয়ান সংশোধনী কার্যক্রম, সেহেতু জরিপ চলাকালীন ব্যবস্থাপনা অফিসে নামজারী কার্যক্রম বন্ধ রাখাই সমীচীন বলে প্রতীয়মান হয়। অন্যদিকে দেখা যায় যে, নামজারীর প্রধান উদ্দেশ্য খতিয়ান তাৎক্ষণিকভাবে হালকরণ এবং ভূমি কর আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক হয়। যেহেতু জরিপে খতিয়ান সংশোধন ও চূড়ান্তকরণে কয়েক বছর সময় লাগে এবং ভূমি কর নির্ধারণ ও আদায়ের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে নামজারীর প্রয়োজন। সেহেতু ব্যবস্থাপনা অফিসে নিয়মিত নামজারী কার্যক্রম বন্ধ রাখা সমীচীন নয়।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩২০ সেটেলমেন্ট অফিসার কর্তৃক খতিয়ান সৃজন
উত্তরাধিকার বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে নামজারীর সঙ্গে সঙ্গে সংশোধিত খতিয়ানের একটি কপি সহকারী কমিশনার (ভূমি) সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারের নিকট প্রেরণ করবেন এবং তিনি তাৎক্ষণিকভাবে খসড়া রেকর্ড প্রণয়নের সময় সংশোধিত খতিয়ানকেই ভিত্তি করে নতুন খতিয়ান প্রণয়ন করবেন। ভূমি মালিকগণও জরিপ প্রণীত রেকর্ড যথাযথভাবে সংশোধনীর জন্য নামজারীতে সংশোধিত খতিয়ান তসদিক/আপত্তি/আপীল পর্যায়ে সেটেলমেন্ট কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করবেন।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ- ৩২১ আদালতের ডিক্রির ভিত্তিতে নামজারী
আদালতের ডিক্রির ভিত্তিতে নামজারীর আবেদন দু’রকম ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে (১) প্রজাবিলি জমি ও (২) সরকারি খাস জমি। প্রজাবিলি অর্থাৎ ব্যক্তি বা সংস্থার মালিকানাধীন জমির ক্ষেত্রে আদালতের ডিক্রি রেজিস্ট্রিকৃত হস্তান্তর দলিলের অনুরূপ বলে গণ্য করতে হবে। ডিক্রি পরীক্ষা করে নামজারী আদেশ প্রদান করতে হবে।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩২২ খাস জমির ক্ষেত্রে ডিত্রিলাভ ও নামজারীর আবেদন
অনেক সময় দেখা যায় খাস খতিয়ানভুক্ত সরকারি জমির মালিকানা দাবি করে ব্যক্তি বা সংস্থা দেওয়ানী আদালতে স্বত্বের বা স্বত্ব ঘোষণার মামলা দায়ের করে ডিক্রি লাভ করে থাকেন। এরূপ মামলার নোটিস প্রায়শঃ কালেক্টরের উপর জারী করা হয় না। অথবা উপযুক্ত তদবিরের অভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ডিক্রি হয়ে যায়। ডিক্রি লাভের পর আপীল/রিভিশনের সময় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ডিক্রি প্রাপক ভূমি ব্যবস্থাপনা অফিসে নামজারীর জন্য আবেদন করে থাকে।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩২৩ খাস জমিতে প্রজাস্বত্ব
জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ৮১-খ ধারায় বিধান রাখা হয়েছে যে, খাস জমির ক্ষেত্রে কালেক্টর বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক সম্পাদিত ও রেজিস্ট্রিকৃত বন্দোবস্তি দলিল ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে কোন প্রজাস্বত্ব বা ব্যক্তি/সংস্থার মালিকানা সৃষ্টি করা যায় না বা সৃষ্টি হয়েছে বলে গণ্য করা যাবে না।
আইনের এ বিশেষ দিক প্রায় সময় সরকার পক্ষে আদালতে উত্থাপন করা হয় না। তদুপরি দীর্ঘদিনের দখল দেখিয়ে আদালত হতে ডিক্রি লাভের চেষ্টা করা হয়ে থাকে। লক্ষণীয় যে, সরকারি জমির জন্য সরকারের বিরুদ্ধে বেদখলী জমি তামাদির মেয়াদ ৬০ বছর এবং এ বেদখল প্রকাশ্যে বিরুদ্ধাচারমূলক (Openly hostile) হতে হবে। এ কারণে ডিক্রির ভিত্তিতে নামজারী করার সময় অতিশয় সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩২৪ আদালতের ডিক্রির ভিত্তিতে নামজারীর জন্য কালেক্টরের অনুমোদন
আদালতের ডিক্রির ভিত্তিতে খাস খতিয়ানভুক্ত কোন জমির মালিকানা দাবি করে নামজারীর আবেদন পাওয়া গেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাৎক্ষণিকভাবে একটি নামজারী কেইস রুজু করবেন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কপি যুক্ত করে অনুমোদন/সিদ্ধান্ত চেয়ে কালেক্টরের নিকট নথি প্রেরণ করবেন। কালেক্টর সরকারি উকিল বা সরকারের পরামর্শক্রমে ঊর্ধ্বতন আদালত আপীল/রিভিশন দায়ের করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বা নামজারীর অনুমোদন প্রদান করবেন। আদালতের ডিক্রির ভিত্তিতে সরকারি খাস জমির নামজারীর আবেদনের উপর কালেক্টরের সুস্পষ্ট নির্দেশ ব্যতীত সহকারী কমিশনার (ভূমি) কোন নামজারীর আবেদন মঞ্জুর করবেন না।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩২৫ : সমবায় সমিতির জমির ক্ষেত্রে নামজারী
দ্রুত নগরায়ন প্রক্রিয়ার ফলে ঢাকাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর এলাকা বা নিকটবর্তী এলাকায় অনেক সমবায় সমিতি জমি ক্রয় ও উন্নয়ন করে ব্যক্তি বা সংস্থার নিকট আবাসিক ও অন্যান্য কাজে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ/বিক্রয় করছে। বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি/সংস্থা স্বীয় নামজারীর জন্য সহকারী কমিশনার এর নিকট আবেদন করছে। এরূপ সমবায় সমিতি বা আবাসিক হাউজিং কোম্পানি হতে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে নামজারীর কতিপয় অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩২৬ অকৃষকের নিকট কৃষি জমি হস্তাস্তরের বিধি-নিষেধ
জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৯০ (২) ধারার বিধান মোতাবেক কোন কৃষি জমি প্রকৃত কৃষক নয় এরূপ ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর নিষিদ্ধ। প্রকৃত কৃষক নয় এমন ব্যক্তি শিল্প, বাণিজ্যিক বা আবাসিক প্রয়োজনে উপযুক্ত ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদনক্রমে কৃষি জমি ক্রয় করতে পারেন এবং এরূপ জমি ক্রয়ের ৫ বছরের মধ্যে বাড়ি নির্মাণ না করলে সরকারে তা বাজেয়াপ্ত হওয়ার বিধান রয়েছে। অথচ দেখা যায় যে, পৌরসভা বহির্ভূত এলাকায় শত শত একর জমি হাউজিং কোম্পানি বা সমবায় সমিতি ক্রয় করে অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করছে।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩২৭ সমবায় সমিতির নামজারীর আবেদন পরীক্ষা
সমবায় বা হাউজিং কোম্পানি জমি ক্রয় করলে প্রথমে তা সমিতি বা কোম্পানির নামে নামজারী হতে হবে। কোম্পানি বা সমিতি জমি ক্রয় করার পর তার নামজারী করার জন্য নির্দেশ দিতে হবে। নামজারীর আবেদন পাওয়ার পর নামজারী কর্তৃপক্ষ জমি মালিকানার প্রচলিত ঊর্ধ্বসীমা অতিক্রম করা হয়েছে কিনা বা কৃষিজমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণ করা হয়েছে কিনা তা নিরীক্ষা করবেন। মালিকানার ঊর্ধ্বসীমা অতিক্রম করা হয়ে থাকলে বা ক্রয়ের পূর্বানুমোদন না থাকলে সহকারী কমিশনার আইন বিবর্জিত কাজের জন্য জমি বাজেয়াপ্তের কেইস রুজু করবেন এবং কালেক্টরের গোচরীভূত করবেন। কালেক্টরের অনুমোদনক্রমে বাজেয়ান্তি কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। কালেক্টরের সুস্পষ্ট নির্দেশ ব্যতীরেকে এরূপ ক্ষেত্রে কোম্পানি বা সমবায় সমিতির নামে নামজারী করা হবে না।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩২৮ সমবায় সমিতির সদস্যগণের নামে নামজারী
যেক্ষেত্রে সমবায় সমিতি বা হাউজিং কোম্পানির নামে নামজারী করা হবে, কেবল সে সব ক্ষেত্রে সমিতির বা কোম্পানির নামে নামজারী হওয়ার পর বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে নামজারী আবেদন গ্রহণ ও কার্যক্রম রুজু করা যাবে। যথানিয়মে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে নামজারী করা যাবে।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ- ৩২৯ জমা বিভক্তি
নামজারী করার সময় কোন বৃহৎ প্লট বা দাগ বিভক্তির প্রয়োজন দেখা দিলে মৌজার হাল নকশা হতে প্রস্তাবিত পরিবর্তন সূচক একটি ট্রেসম্যাপ নামজারী নথির সাথে প্রণয়ন ও সংরক্ষণ করতে হবে। নতুন প্লটের জন্য একটি পৃথক দাগ নম্বর প্রদান করতে হবে এবং তা মৌজার দাগসূচির ক্রমানুসারে হবে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ যদি মূল দাগ নম্বর ৭২ হয় এবং ঐ মৌজায় মোট ৩৭৫টি দাগে জমি থাকে তবে নতুন দাগ নম্বর হবে ৭২/৩৭৬ ।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩০০ রেজিষ্টার সংশোধন
সহকারী কমিশনার (ভূমি) নামজারী আদেশ প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে নতুন খতিয়ान সৃজন করবেন এবং ১, ২ এবং ৯ নং রেজিস্টারে সংশোধন লিপিবদ্ধ করবেন।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ৩৩১ নথির শ্রেণীবিভাগ
নামজারী সংক্রান্ত নথি ‘খ’ শ্রেণীর রেকর্ড বলে গণ্য হবে এবং ১২ বছর সংরক্ষণ করার পর নষ্ট করে ফেলতে হবে।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুচ্ছেদ ঃ ৩৩২ : নামজারী ফি, ইত্যাদি
নামজারী ও জমা বিভক্তি আবেদনের ফিস প্রচলিত সরকারি বিধি/নির্দেশ অনুসারে আদায় করা হবে। আবেদনের পক্ষগণকে নোটিস প্রদানের ব্যয় আবেনকারীকে বহন করতে হবে এবং প্রচলিত হারে আদায় করতে হবে।
নামজারীর জন্য প্রয়োজনীয় জমিদারী উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০-এর কতিপয় ধারা :
(ক) প্রজাস্বত্ব আইনের ৮৮ ধারা জোতের হস্তান্তরযোগ্যতা
অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তি যে পদ্ধতিতে ও যতটুকু হস্তান্তর করা যায় সেভাবে এ আইনের শর্ত সাপেক্ষে কোন রায়তের বা প্রজার জোত অথবা জোতের অংশবিশেষ হস্তান্তরযোগ্য হবে
তবে শর্ত এই যে, উক্ত আইনের ২০ (২) ধারার আওতায় সংরক্ষিত কোন চা বাগানের খাস জমি বা তার অংশ বিশেষ জেলা প্রশাসকের লিখিত পূর্ব অনুমোদন ব্যতীত হস্তান্তর করা যাবে না এবং প্রস্তাবিত হস্তান্তর কোনভাবেই চা বাগানের অস্তিত্ব বিনষ্ট করবে না বা সংরক্ষিত জমিতে চা চাষের ক্ষতিসাধন করবে না।
আলোচনা :
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫ ধারার বিধান মতে ‘সম্পত্তি হস্তান্তর’ বলতে এমন একটি কাজ বুঝায় যা দ্বারা কোন জীবিত ব্যক্তি বর্তমানে বা ভবিষ্যতে এক বা একাধিক জীবিত ব্যক্তির কাছে, অথবা তার নিজের কাছে অথবা তার নিজের ও এক বা একাধিক অন্য ব্যক্তিগণের কাছে সম্পত্তি অর্পণ করে থাকে। এখানে জীবিত ব্যক্তি বলতে বিধিবদ্ধ বা বিধিবদ্ধ নয় এরূপ কোম্পানি, সমিতি বা ব্যক্তি সমষ্টিকেও বুঝাবে।
আরও দেখুনঃ