আজকের আলচনার বিষয় খ্রিস্টান উত্তরাধিকার আইন। “ভারতীয় উত্তরাধিকার আইন ১৯২৫ এর ২৪-৪৯ ধারার বিধানসমূহ খ্রিস্টান উত্তরাধিকার আইন হিসেবে অভিহিত যা পি. ও. ৪৮/৭২ মূলে বাংলাদেশে বলবৎ করা হয়েছে। বাংলাদেশে বসবাসকারী ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট উভয় শ্রেণীর খ্রিস্টানদেরই আইনের উল্লিখিত ধারাসমূহ প্রযোজ্য হয়েছে।
Table of Contents
খ্রিস্টান উত্তরাধিকার আইন
খ্রিস্টান উত্তরাধিকার দু’প্রকার :
(১) সগোত্র এবং (২) সমগোত্র
সগোত্রঃ
একজন পুরুষ যে সম্পর্কের দ্বারা অন্যজনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত (একজন হতে অন্যজন জাত) হয় সে সম্পর্ককে বলে সগোত্র। কোন ব্যক্তির উর্ধ্বগামী সগোত্র হল তার পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ নিম্নগামী সগোত্র হল পুত্র পৌত্র, প্রপৌত্র।
সমগোত্রঃ
একই পূর্বপুরুষ হতে আগত কিন্তু একজন অন্যজন হতে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত না হলে তাকে বলে সমগোত্র। যেমন- ভাই, চাচা, চাচাত ভাই ইত্যাদি ।

সম্পর্কের ডিগ্রীঃ
খ্রিস্টান আইনে উত্তরাধিকার নির্ণয়ের ভিত্তি হলো ডিগ্রী। এ ডিগ্রী দ্বারা সম্পর্কের দূরত্ব নির্ণয় করা হয়। এ ডিগ্রীর মান যত বেশি হবে উত্তরাধিকারের অগ্রাধিকার তত কম হবে। যেমন-
- মৃত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক পিতা-পুত্র = এক ডিগ্রী
- মৃত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক পিতা-ভাই = দুই ডিগ্রী
- মৃত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক চাচা-ভ্রাতুষ্পুত্র = তিন ডিগ্রী
- মৃত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক চাচাত ভাই-চাচাত ভাই = চার ডিগ্রী ।

খ্রিস্টান উত্তরাধিকার আইনে সম্পদ বণ্টনের নীতি:
(১) সমপর্যায়ের নারী, পুরুষের সমান অংশ পাবে।
(২) সরাসরি নিম্নবর্তী ওয়ারিশ থাকলে উবর্তী কেউ সম্পদ পাবে না।
(৩) সম্পদ বণ্টনে স্বামী/স্ত্রী অগ্রাধিকার পাবে।
(৪) সরাসরি নিম্নবর্তী সন্তান থাকলে স্বামী/স্ত্রী ১/৩ অংশ পাবে, নিম্নবর্তী না থাকলে ১/২ অংশ পাবে।
নিম্নবর্তী/উর্ধ্ববর্তী আত্মীয় না থাকলে স্বামী/স্ত্রী সম্পূর্ণ অংশ পাবে।
(৫) স্বামী/স্ত্রী বা সগোত্রের কেউ না থাকলে সমগোত্রের আত্মীয় সম্পত্তি পাবে।
(৬) মৃতের স্বামী/স্ত্রী, সমগোত্রীয় কেউই না থাকলে তার সম্পত্তি সরকার বরাবরে বাজেয়াপ্ত হবে।
(৭) স্বামী/স্ত্রীকে দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি সন্তান সমান ভাগে পাবে ।
(৮) মৃতের সন্তান জীবিত না থেকে থাকলে এবং সন্তানের সস্তান বেঁচে থেকে থাকলে তারা প্রত্যেকে সমান অংশ পাবে।
(৯) মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকলে স্বামী বা স্ত্রীকে দেওয়ার পর বাকি সম্পত্তি মৃতের পিতা পাবে। এক্ষেত্রে পিতাও জীবিত না থাকলে মাতা এবং ভাই বোন সমান অংশে সম্পদ পাবে।
(১০) ভাই বোন বেঁচে না থাকলে তাদের সন্তানগণ অংশ পাবে।
(১১) পিতা, ভাই-বোন বা ভাই-বোনের সন্তানও না থাকলে মাতা সম্পূর্ণ অংশ পাবে। অনুরূপভাবে কেবল পিতা থাকলে সেই সম্পূর্ণ অংশ পাবে ।
(১২) ধর্মান্তরের জন্য উত্তরাধিকত্ব থেকে কেউ বঞ্চিত হবে না ।
(১৩) অবৈধ সন্তান উত্তরাধিকারিত্ব থেকে বঞ্চিত হবে।
(১৪) জীবিত ও গর্ভস্থ সন্তান সমান অংশ পাবে।
(১৫) সৎ মাতার সাথে মৃতের রক্ত সম্পর্ক না থাকায় সে অংশ পাবে না।
(১৬) দত্তক সন্তান দত্তকি পিতার সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে না।
(১৭) কোন হিন্দু ব্যক্তি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করলে তার সম্পত্তি খ্রিস্টান উত্তরাধিকারী আইন অনুযায়ী বণ্টিত হবে।

খ্রিস্টান উত্তরাধিকারের কতিপয় উদাহরণ:
১। ওয়ারিশ = স্ত্রী + পুত্র/কন্যা
= (১/৩) + (২/৩)
২। ওয়ারিশ = স্ত্রী + পুত্র + কন্যা
= (১/৩) + (১/৩) + (১/৩)
৩। ওয়ারিশ = স্বামী + পিতা
= (১/২) + (১/২)
৪। ওয়ারিশ = স্ত্রী+ভাই+বোন
= (১/২) + (১/৪) + (১/৪)
৫। ওয়ারিশ = স্ত্রী + মাতা + ভাই + বৈপিত্রেয় বোন/বোন
= (১/২) + (১/৪) + (১/৮) + (১/৮)
৬। ওয়ারিশ = স্ত্রী + মাতা + ভাই + বোন + ভাইয়ের ছেলে
= (১/২) + (১/৪) + (১/১২) + (১/১২) + (১/১২)
মৃত ব্যক্তি = স্ত্রী + পুত্র + পিতা + পুত্র (মৃত) + কন্যা + কন্যা (মৃত)
পুত্র (মৃত) = পুত্র + কন্যা
= (১/১২) + (১/১২)
কন্যা = (১/৬)
কন্যা (মৃত) = পুত্র + কন্যা
= (১/১২) + (১/১২)
(নিম্নবর্তী সগোত্র থাকায় পিতা বঞ্চিত )
আরও দেখুনঃ