ভূমি ক্রয় বিক্রয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য কয়েকটি মূল্যবান পরামর্শ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ ভূমি ক্রয় বিক্রয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য কয়েকটি মূল্যবান পরামর্শ

 

ভূমি ক্রয় বিক্রয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য কয়েকটি মূল্যবান পরামর্শ
ভূমি ক্রয় বিক্রয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য কয়েকটি মূল্যবান পরামর্শ

 

ভূমি ক্রয় বিক্রয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য কয়েকটি মূল্যবান পরামর্শ

কথা আছে “পয়সা দিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ কিনতে চায় কে?’ তাই ভূমি ক্রয়ের সময় সম্ভাব্য সকল যুক্তিসঙ্গত সতর্কতা অবলম্বন ও অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে।

ভূমি ক্রয়ের পূর্বে যে যে প্রধান বিষয়গুলো জানার ও দেখার তা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

কেবল ভূমির মালিকই তার ভূমি যে কোনভাবে হস্তান্তর করতে পারেন। তাই হস্তান্তরকারীর মালিকানা ও দলীয় স্বত্ত্ব এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বৈধ কাগজপত্র সাপেক্ষে ভাল করে দেখার প্রয়োজন।

(১) বিক্রিত ভূমির সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে বিক্রেতার নাম আছে কিনা?

(২) যদি বিক্রেতার নাম খতিয়ানে না থাকে তবে ভূমিতে বিক্রেতার স্বত্ব বৈধ কাগজপত্র দ্বারা প্রমাণ করতে হবে।

(৩) বিক্রিত ভূমি (১) কোন মৌজায় অবস্থিত, (২) কোন খতিয়ান ও (৩) কোন দাগভুক্ত, (৪) ইহার পরিমাণ এবং (৫) উক্ত খতিয়ানের ভূমিতে বিক্রেতার অংশ বা হিস্যা অনুযায়ী পরিমাণ ইত্যাদি ক্রয়ের পূর্বে কাগজপত্র ভালভাবে যাচাই করে দেখতে হবে।

 

ভূমি ক্রয় বিক্রয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য কয়েকটি মূল্যবান পরামর্শ
ভূমি ক্রয় বিক্রয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য কয়েকটি মূল্যবান পরামর্শ

 

ক্রয় দলিল দৃষ্টে ভূমি ক্রয় করতে চাইলে দেখতে হবে

(ক) দলিলে উল্লিখিত (১) দলিলদাতা বা দাতাদের নাম ও (২) ভূমির বিবরণ ও পরিমাণ সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে লেখনভুক্ত রয়েছে কিনা, যদি তার বা তাদের নাম সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে লেখনভুক্ত না হয়ে থাকে তবে খতিয়ানে লেখনভুক্ত মালিকের কাছ হতে কিভাবে তারা পেয়েছেন তা অবশ্যই কাগজপত্রের মাধ্যমে দেখাতে হবে।

এরূপ খতিয়ানে লেখনভুক্ত মালিক কর্তৃক বিক্রি হবার পর উক্ত ভূমি যতবার বিক্রি হয়েছে এবং এর দরুন যতটি দলিল সম্পাদিত হয়েছে ততটি দলিল (পিট দলিল বা ধারাবাহিক দলিল) পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

অন্য কোন ব্যতিক্রম না থাকলে কেবল সংশ্লিষ্ট খতিয়ানভুক্ত মালিক বা তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীগণ ভূমি হস্তান্তর করতে পারেন। সুতরাং বিক্রি বা মালিকানা স্বত্ব অর্জনের ধারাবাহিকতা অবশ্যই দেখতে হবে।

(খ) হাল খতিয়ান ও হাল দাগ চালু হওয়ার পূর্বেকার সম্পাদিত দলিলে উল্লিখিত খতিয়ান ও দাগ নম্বর সাবেক দাগ ও খতিয়ান নম্বরে পরিণত হয়েছে।

সুতরাং দলিলে উল্লিখিত খতিয়ান, দাগ যাহা সাবেক খতিয়ান ও দাগ নম্বরে পরিণত হয়েছে এর সাথে বর্তমান চালু (হাল) খতিয়ান, দাগ ও জমির পরিমাণের মিল আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।

(গ) বিক্রেতার নামজারী খতিয়ান হালনাগাদ সঠিক আছে কি-না পরখ করতে হবে, অপরদিকে বিক্রির পর ক্রেতার নামজারী না হওয়ায় কিংবা ক্রেতা নাম নাম জারী না করার দরুন এই সুযোগে বিক্রেতা প্রতারণামূলকভাবে অন্যের বা ২/৩ জনের কাছে গোপনে বিক্রি করে থাকতে পারে। সুতরাং ক্রয়ের পূর্বে এই বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে এবং অনুসন্ধান করতে হবে। এরূপ ঘটনা কখনো কখনো ঘটে থাকে।

 

ভূমি ক্রয় বিক্রয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য কয়েকটি মূল্যবান পরামর্শ
ভূমি ক্রয় বিক্রয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য কয়েকটি মূল্যবান পরামর্শ

 

(ঘ) বিক্রিত ভূমি বিক্রেতার দখলে আছে কিনা তাও দেখতে হবে।

(ঙ) বকেয়া ভূমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন করের জন্য ভূমি নিলামের বিক্রি হয়েছে। কিনা অথবা নিলামে সরকার ক্রয় করে খাস করেছেন কিনা তাও দেখতে হবে।

(চ) যে সকল হিন্দু নাগরিক তাদের জমি-জমা পরিত্যাগ করে বাস্তু ত্যাগ করে ভারতে চলে গেছেন এবং সেখানে নাগরিকত্ব লাভ করে বসবাস করছেন তাদের অনেকের ভূমি অর্পিত ও অনাবাসী সম্পত্তি ( Vested and Non Resident Property) হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে – এগুলো সরকারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

সুতরাং এরূপ হিন্দু মালিকদের ভূমি পরিত্যক্ত হওয়ার দরুন খাস বা অর্পিত ও নাবাসী সম্পত্তি হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে কিনা তাও দেখতে হবে।

(জ) যে সকল মালিক ১৯৭১ সানের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতা করেছিল এবং তাদের ভূমি ও বাড়ী-ঘর ত্যাগ করে বাংলাদেশ হতে চলে গিয়েছিল তাদের ভূমি পিও ১৬/৭২ বলে পরিত্যক্ত (Abandoned) ভূমি হিসাবে ঘোষণা করা হয় এবং সেগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন হয় ।

এই শ্রেণীর মালিকদের ভূমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান করে দেখতে হবে ।

(ঝ) যে সকল ভূমি খাজনা বা ভূমি খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর দীর্ঘদিন যাবৎ অনাদায় রয়েছে অথবা মারফতদার কর্তৃক খাজনা বা কর পরিশোধ হয় তহশীল অফিসে এর কারণ অনুসন্ধান করলে ভূমির প্রকৃত স্বত্বাধিকারীকে এবং এর অবস্থা কি তা সহজেই জানা যাবে।

(ঞ) তাছাড়া ভূমির খাজনা বা উন্নয়ন কর অপরিশোধিত থাকলে নিলামে বাস হওয়ার সন্দেহের অবকাশ থাকে। সুতরাং তহশীলে খোঁজ নিয়ে দেখা যেতে পারে।

(ট) স্টেট একুইজিশন এ০ টেনান্সি এ্যাক্টের ১৭ ধারা অনুযায়ী কোন আদিবাসীর ভূমি অনুরূপ আদিবাসী ব্যতিত অন্য কেউ ক্রয় করতে চাইলে বা অন্যের নিকট হস্তান্তর করতে চাইলে দলিল রেজিস্ট্রি করার পূর্বে রেভেনিউ অফিসারের লিখিত সম্মতি নিতে হবে যা দলিলে উল্লেখ করতে হবে। এই বিধান লংঘন করে ভূমি ক্রয় করা হলে সে ক্রয় বা হস্তাস্তর বাতিল হয়ে যাবে।

 

google news logo
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

(ঠ) প্রেসিডেন্ট আদেশ নং ৯৮/৭২ অনুযায়ী, ১৩-৪-৮৪ তারিখ পর্যন্ত কোন পরিবার ১০০ বিঘার অতিরিক্ত ভূমি এবং (অধ্যাদেশ ১০/৯৪) ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ৪ ধারা অনুযায়ী যে সকল মালিক বা পরিবারের ৬০ বিঘার নিম্নে অথবা ৬০ বিঘা পর্যন্ত ভূমি ছিল তারা উক্ত অধ্যাদেশ জারীর তারিখ হতে (অধ্যাদেশ ১০/৮৪ জারীর তারিখ ১৪-৪-৮৪ ইং, বাং ১ বৈশাখ ১৩৯১) ৬০ বিঘার অতিরিক্ত ভূমি ক্রয় বা অন্যবিধ উপায়ে অর্জন করতে পারবেন না ।

উক্ত আদেশ ও অধ্যাদেশ লংঘন করে যদি কোন মালিক বা পরিবার উপরোক্ত সীমার অতিরিক্ত ভূমি ক্রয় করেন তাহলে এরূপ অতিরিক্ত ভূমি সরকারের বরাবরে বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। en five

(ড) দলিলে খতিয়ানের মালিকের নাম ভায়া দলিল থাকলে তার নম্বর দাতা, গ্রহীতা ইত্যাদির বৃত্তান্ত দলিলে উল্লেখ থাকা একান্ত আবশ্যক।

(ঢ) দলিলের তফসিলে জেলা, থানা, মৌজা, খতিয়ান, দাগ, ভূমির মোট পরিমাণ। এবং কাত যদি থাকে এবং চৌহদ্দি শহরের ভূমি হলে রাস্তা পৌর নম্বর থাকলে তা সহ তদস্থিত দালান-কোঠা যদি থাকে তবে সঠিকভাবে উল্লেখ করা একান্ত প্রয়োজন।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment