আজকের আলোচনার বিষয়ঃ কৃষিভূমি প্রি এমশনের আইন (অগ্রক্রয়াধিকার)

Table of Contents
কৃষিভূমি প্রি এমশনের আইন (অগ্রক্রয়াধিকার)
‘প্রি এমশন’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো, অন্যদের চেয়ে একজনের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্রয় করার অধিকার। ‘প্রি’ (Pre) অর্থ আগে এবং এমশন’ (emption) অর্থ ক্রয়।
মুসলিম আইনে প্রি এমশনকে’ ‘সাফা’ বলে।
‘প্রি এমশন’ শব্দের শাব্দিক অর্থ হল অগ্রক্রয়াধিকার”।
প্রি এমশনের সংজ্ঞাঃ
কোন ক্রেতা যে মূল্যে বিক্রীত ভূমি ক্রয় করেছেন সেই একই মূল্যে অন্য কোন ব্যক্তির উক্ত ভূমি ক্রয় করার অগ্রাধিকারকে প্রি এমশন (Pre- emption) বলে।
বেলীর (Baillie) মতে “কোন ক্রেতার কাছ হতে তার ক্রীত ভূমিখণ্ড সমমূল্য প্রদান করে দখল করার অধিকারকে প্রি এমশন বলে।
(ইস্ট বেঙ্গল এ্যাক্ট নং ২৮/১৯৫১) স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী এ্যাক্ট, ১৯৫০- এর ৯৬ ধারায় কৃষি ভূমির প্রি এমশনের আইন রয়েছে।

স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী এ্যাক্টের ৯৬ ধারার (১) উপ-ধারা কোন রায়তের হোল্ডিং (খতিয়ান) এর কোন খণ্ড বা অংশ হস্তান্তরিত হলে উক্ত হোল্ডিং এর এক বা একাধিক সহ-অংশীদার টেন্যান্টগণ ৮৯ ধারা মোতাবেক নোটিস জারীর চার মাসের মধ্যে কিংবা যদি কোন নোটিস জারী না হয়ে থাকলে, হস্তান্তরের বিষয় অবগত হওয়ার তারিখ হতে চার মাসের মধ্যে তার বা তাদের কাছে উক্ত ভূমিখণ্ড বা অংশ হস্তান্তরের জন্য আদালতে আবেদন করতে পারবেন এবং যদি কোন হোল্ডিং বা খণ্ড কিংবা কোন অংশ হস্তান্তরিত হয়ে থাকলে হস্তান্তরিত ভূমির চিহ্নিত (লাগ) ভূমির দখলকার মালিক বা মালিকগণ (টেন্যান্ট বা টেন্যান্টগণ) এরূপ হস্তান্তরের বিষয় আত হওয়ার তারিখ হতে চার মাসের মধ্যে তার বা তাদের কাছে উক্ত হোল্ডিং বা খণ্ড কিংবা অংশ হস্তান্তরের জন্য আদালতে আবেদন করতে পারবেন।
শর্ত হলো যে, কোন সহ-অংশীদার টেন্যান্টের (মালিক) অথবা হস্তান্তরিত ভূমির লাগ ভূমির দখলকার টেন্যান্টের (মালিক) এই ধারাবলে ক্রয় করার অধিকার থাকবে না। যদি না তিনি এমন ব্যক্তি হন যার নিকট হোল্ডিং বা এর খণ্ড কিংবা অংশ, অবস্থাভেদে যেরূপ হবে ৯০ ধারা মোতাবেক হস্তান্তর করা যেতে পারে।
(এখানে উল্লেখ্য, স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেনান্সি এ্যাক্টের ১০ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি তার পরিবারের সদস্যসহ সর্বমোট ৩৭৫ ট্যাণ্ডার্ড বিঘার অতিরিক্ত ভূমি ক্রয় অথবা অন্যবিধ উপায়ে অর্জন করতে পারতেন না। কিন্তু ১৯৭২ সনের প্রেসিডেন্টের আদেশ নং ৯৮-৭২ বলে উক্ত ৩৭৫ বিঘার সর্বোচ্চ সীমাকে ১০০ বিঘায়, পরে অধ্যাদেশ ১০/১৯৮৪ বলে কৃষি ভূমির সর্বোচ্চ সীমা ৬০ বিঘায় হ্রাস করা হয়। সুতরাং ১৪-৪-৮৪ তারিখ হতে কোন মালিক, পরিবার অথবা সংস্থা উল্লিখিত সর্বোচ্চ সীমা ৬০ বিঘার অতিরিক্ত কৃষি ভূমি ক্রয়সহ অন্যবিধ উপায়ে অর্জন বা দখল করতে পারবে না। মালিক, পরিবার ও সংস্থার সংজ্ঞা ৩৫-৩৭ পৃষ্ঠার সংজ্ঞা অনুযায়ী এবং ভূমির সিলিং ৪৯-৫৫ পৃষ্ঠা।

৯৬ ধারা (২) উপ-ধারাঃ একজন সহ-অংশীদার টেন্যান্ট বা সহ-অংশীদার টেন্যান্টগণ কর্তৃক (১) উপ-ধারা মোতাবেক দায়েরকৃত দরখাস্তে হোল্ডিং এর অন্য সব সহ-অংশীদার টেন্যান্টগণকে এবং হস্তান্তরগ্রহীতাকে পক্ষ করতে হবে এবং হস্তান্তরিত ভূমির সহ্নিহিত (লাগ) ভূমির দখলকার টেন্যান্ট কর্তৃক এরূপ আবেদনে হস্তান্তরিত হোল্ডিং-এর সকল সহ-অংশীদার এবং হস্তান্তরিত ভূমির লাগ ভূমির দখলকার সব টেন্যান্টগণকে এবং গ্রহীতাকে পক্ষ করতে হবে।
(৩) উপ-ধারা (এ) অনুচ্ছেদ :(১) উপ-ধারা অনুসারে পেশকৃত দরখাস্তটি বাতিল (Dismiss) হয়ে যাবে যদি দরখাস্তকারী বা দরখাস্তকারীগণ এটি পেশ করার সময় হস্তান্তরিত হোল্ডিং অথবা হোল্ডিং-এর খণ্ড বা অংশের হস্তান্তরের দলিলে অথবা ৮১ ধারা অনুযায়ী নোটিসে অবস্থাভেদে যেরূপ হবে উল্লিখিত পণের টাকা (Consideration money) কিংবা মূল্য তৎসহ এরূপ টাকার শতকরা ১০ ভাগ হারে ক্ষতিপূরণ আদালতে জমা প্রদান না করেন ।
(বি) অনুচ্ছেদ : এরূপ জমাসহ দরখাস্ত গ্রহণের পর আদালত হস্তান্তরগ্রহীতা এবং (২) উপ-ধারা অনুসারে এতে পক্ষভুক্ত অন্যান্য ব্যক্তিগণকে, আদালত যে সময় নির্ধারণ করবেন সে সময়ের মধ্যে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেবেন এবং হস্তান্তর বাবদ যে পণের টাকা (Consideration money) কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করা হয়েছে তা বলার জন্য এরূপ ব্যক্তিকে তলব করবেন এবং হস্তান্তরের তারিখ হতে খাজনা বাবদ তিনি আরও কত টাকা পরিশোধ করেছেন এবং হস্তান্তরিত হোল্ডিং বা খণ্ডের বা অংশের “দায় মুক্ত” করতে কিংবা কোন উন্নয়ন বাবদ কি খরচাদি করেছেন তার বিবরণ প্রদানের জন্য হস্তান্তরগ্রহীতাকে তলব করবেন এবং আদালত তখন, সকল পক্ষসমূহকে শুনানীর জন্য সুযোগ প্রদানান্তে প্রকৃত পণের টাকা (Consideration money)।
খাজনা পরিশোধ এবং হস্তান্তরিত ভূমির “দায় মুক্ত”, অথবা উন্নয়নের জন্য হস্তান্তরগ্রহীতার ব্যয় সম্পর্কে অনুসন্ধান (Enquiry) করবেন, আদালত যেমন সঙ্গত মনে করবেন সে সময়ের মধ্যে আরও টাকা যদি প্রয়োজনীয় হয় জমা প্রদানের জন্য আবেদনকারীকে অথবা আবেদনকারীগণকে নির্দেশ দেবেন।
শর্ত থাকে যে, হস্তান্তাহা দলিলে উল্লিখিত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত পণের টাকা কোন অবস্থাতেই দাবি করতে পারবেন না।

৪ উপ-ধারা (১) উপ-ধারা অনুসারে কোন দরখাস্ত পেশ করা হলে, হস্তান্তগ্রহীতা, তাদের মধ্যে যদি কেউ থাকেন, তাকে সহ যে কোন অবশিষ্ট সহ- অংশীদার টেন্যান্ট এবং হস্তান্তরিত ভূমির লাগ ভূমির দখলকার টেন্যান্টগণের (১) উপ- ধারায় উল্লিখিত সময়ের মধ্যে অথবা (৩) উপ-ধারা (বি) অনুচ্ছেদ অনুসারে দরখাস্তের নোটিস জারীর তারিখ হতে দুই মাসের মধ্যে যা আগে হবে, উক্ত দরখাস্তে শরীক হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন, কোন সহ-অংশীদার অথবা হস্তান্তরিত ভূমির সংলগ্ন ভূমির দখলকার টেন্যান্ট যিনি (১) উপ-ধারা অথবা এই উপ-ধারা মতে আবেদন করেন নাই, এই ধারা অনুসারে তাদের ক্রয় করার আর কোন অধিকার থাকবে না।
উপ-ধারা ৫ অনুচ্ছেদ (এ)ঃ (1) যদি কোন সহ-অংশীদার টেন্যান্ট যার স্বত্ব উত্তরাধিকার সূত্রে উদ্ভব হয়েছে এবং (11) কোন সহ-অংশীদার টেন্যান্ট যার স্বত্ত্ব ক্রয়সূত্রে উদ্ভব হয়েছে এবং (III) হস্তান্তরিত ভূমির লাগ ভূমির দখলকার টেন্যান্ট, এই ধারা অনুসারে দরখাস্ত করেন এবং এর শর্তাবলী পালন করেন, তাহলে দরখাস্তকারী বা দরখাস্তকারীগণ এই ধারায় উপরোল্লিখিত ক্রমানুসারে ক্রয় করার অগ্রাধিকার পাবেন।
(বি) অনুচ্ছেদঃ যদি হস্তান্তরিত ভূমির লাগ ভূমির একাধিক দখলকার টেন্যান্ট এই ধারা অনুসারে দরখাস্ত করেন, আদালত এরূপ টেন্যান্টগণের মধ্যে ক্রমিক অনুসারে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করবেন এই বিবেচনায়
(i) আবেদনকারী টেন্যান্টগণের প্রত্যেকের দখলে মোট ভূমির পরিমাণ,
(ii) টেন্যান্টের লাগ ভূমি বসতবাটির ভূমি বা অন্য শ্রেণীর ভূমি কিনা,
(ii) (Contiguity) সংলগ্নতার বিস্তৃতি,
(iv) দরখাস্তকারীর লাগ ভূমির দখল পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, এবং
(v) দরখাস্তকারীর ব্যবহার্য অধিকার (Easement right) যদি কিছু থাকে।
(৬) উপ-ধারা (এ) অনুচ্ছেদঃ (৩) উপ-ধারা অনুসারে যে ‘সময়ের মধ্যে দরখাস্ত পেশ করা যেতে পারে সে ‘সময়’ অতিক্রান্ত হওয়ার পর আদালত এই ধারার শর্তাবলী অনুযায়ী স্থির করবেন (১) উপ-ধারা অথবা (৪) উপ-ধারা অনুসারে পেশকৃত দরখাস্তগুলোর মধ্যে কোনটা মঞ্জুর করবেন।
(বি) অনুচ্ছেদ : যদি আদালত দেখতে পান যে, এই ধারা অনুসারে পেশকৃত আবেদনগুলোর অনুমতির আদেশ একাধিক আবেদনকারীর অনুকূলে প্রদান করতে হবে, তাহলে আদালত এরূপ প্রত্যেক আবেদনকারী কর্তৃক যে পরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হবে তা নির্ধারণ করবেন এবং টাকা ন্যায্যভাবে ভাগ করার পর আদেশ দেবেন যে আবেদনকারী বা আবেদনকারীগণ যারা
(৪) উপ-ধারা অনুসারে মূল দরখাস্তে যোগদান করেছেন, আদালত যেরূপ সঙ্গত মনে করবেন সেরূপ সময়ের মধ্যে তার বা তাদের কর্তৃক পরিশোধযোগা টাকা জমা প্রদানের জন্য এবং এরূপ কোন আবেদনকারী কর্তৃক সে সময়ের মধ্যে যদি (টাকা) জমা প্রদান না করা হয় তাহলে তার আবেদন ডিসমিস হয়ে যাবে।
(৭) উপ-ধারার (এ) অনুচ্ছেদঃ (৬) উপ-ধারার (বি) অনুচ্ছেদ অনুসারে যে সময়ের মধ্যে জমা, যদি কিছু থাকে, প্রদান করতে হবে, সে সময় অতিক্রান্ত হলে, আদালত এই ধারা অনুসারে ক্রয় করার অধিকারী এবং এর শর্তাবলী পালন করেছেন এমন দরখাস্তকারী বা দরখাস্তকারীগণ কর্তৃক দরখাস্ত বা দরখাস্তগুলো অনুমোদনের আদেশ পাশ করবেন এবং যখন এরূপ আদেশ একাধিক দরখাস্তকারীর অনুকূলে পাশ করতে হয় তখন হোল্ডিংখানা বা হোল্ডিং এর খণ্ড বা অংশকে তাদের মধ্যে এরূপভাবে ভাগ করবেন যা আদালতের নিকট ন্যায় বলে গণ্য হয় এবং (১) নং উপ-ধারা অনুসারে দরখাস্তকারী বা দরখাস্তকারীগণ যদি কোন টাকা ফেরৎ পাওয়ার অধিকারী বলে দৃষ্ট হয়। তাহলে (৬) উপ-ধারা (বি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দরখাস্তকারী বা দরখাস্তকারীগণ কর্তৃক প্রদত্ত জমার টাকা হতে ফেরৎ পাবেন।

(বি) অনুচ্ছেদঃ আদালত একই সময়, (৩) উপ-ধারা অনুসারে প্রদত্ত জমা হতে, হস্তান্তরের জন্য হস্তান্তরগ্রহীতা কর্তৃক পরিশোধিত পণের টাকা (Consideration money}, এরূপ টাকার উপর শতকরা ১০ ভাগ হারে ক্ষতিপূরণসহ হস্তান্তরের তারিখ হতে হস্তান্তরিত হোল্ডিং এর বা খণ্ডের কিংবা অংশের খাজনা বাবদ টাকা, যদি কিছু তার কর্তৃক পরিশোধ করা হয়ে থাকে এবং এরূপ হোল্ডিং বা খণ্ডের কিংবা অংশের দায়মুক্তি অথবা উন্নয়নের জন্য ব্যয়ের টাকা যদি কিছু তার কর্তৃক ব্যয় করা হয়ে থাকে তা হস্তান্তরগ্রহিতাকে পরিশোধ করার জন্য নির্দেশ করে একটি আদেশ পাশ করবেন।
(৮) উপ-ধারা (৭) উপ-ধারা অনুসারে কোন বিভাগের আদেশ হোল্ডিং এর বিভাগ হিসাবে কার্যকরী হবে না।
(৯) উপ-ধারা (৭) উপ-ধারা অনুসারে আদেশ পাশ হওয়ার তারিখ হতে- (এ) অনুচ্ছেদ হস্তান্তরের ফলে হোল্ডিং বা খণ্ডের কিংবা অংশে হস্তান্তগ্রহীতার উদ্ধৃত অধিকার স্বত্ব, স্বার্থ উক্ত উপ-ধারা অনুসারে পাশকৃত যে কোন আদেশের সাপেক্ষে সকল দায় যা হস্তান্তরের তারিখের পরে সৃষ্ট হয়েছে তা মুক্ত হয়ে, অবস্থাভেদে সহ-অংশীদার টেন্যান্ট অথবা হস্তান্তরিত ভূমির লাগ ভূমির দখলকার টেন্যান্টগণের, যাদের ক্রয় করার দরখাস্ত (৭) উপ-ধারা অনুসারে অনুমোদিত হয়েছে তাদের হাতে অর্পিত হয়েছে বলে গণ্য হবে।
(বি) অনুচ্ছেদ হস্তান্তরাহীতার হোল্ডিং বা খণ্ডের কিংবা অংশের খাজনা বাবন “দায়” হস্তান্তরের তারিখ হতে রহিত হয়ে যাবে এবং সহ-অংশীদার টেন্যান্টগণ বা হস্তান্তরিত ভূমির দখলকার টেন্যান্টগণের মানের জয় করার দরখাস্ত এরূপে অনুমোদিত হয়েছে, তারা হস্তান্তরগ্রহীতার নিকট প্রাপ্য এরূপ যে কোন খাজনার জন্য দায়ী থাকবেন, এবং
(সি) অনুচ্ছেদঃ আদালত এরূপ দরখাস্তকারী বা দরখাস্তকারীগণের আরও আবেদনের ভিত্তিতে তার বা তাদের হস্তে নাস্ত সম্পত্তির দখলে তাকে বা তাদেরকে, অবস্থাভেদে বহাল করে দিতে পারেন।
(১০) উপ-ধারাঃ এই ধারার কোন কিছুই প্রয়োগ করা যাবে না-
(এ) অনুচ্ছেদেঃ খতিয়ান বা জোতের (Tenancy) কোন অংশীদার যার স্বত্ব ক্রয় সূত্র ব্যতিত অন্যবিধ উপায়ে উদ্ভব হয়েছে, এরূপ অংশীদারের নিকট ভূমি হস্তান্তর করা হলে, কিংবা
(বি) অনুচ্ছেদঃ বিনিময় বা বাটোয়ারা সূত্রে হস্তান্তরিত হলে; বা
(সি) অনুচ্ছেদঃ উইল দাতা (Testator) বা দাতা (Donar) কর্তৃক তার স্বামী বা স্ত্রীকে অথবা কোন উইল দাতা বা দাতা কর্তৃক তার তিন ডিগ্রীর (বা তিন পুরুষের) মধ্যে কোন পুরুষানুক্রমিক নিকটতম আত্মীয়কে দান বা হেবা মূলে (আর্থিক বিনিময় হেবা বিল এওয়াজ ব্যতীত) হস্তান্তরিত করলে; অথবা
(ডি) অনুচ্ছেদঃ সরল (Simple) অথবা সম্পূর্ণ খাইখালাসী মর্গেজ (Complete Usufructuary Mortgage) অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত মর্গেজ মুক্ত করার অধিকার রহিতকরণের জন্য (Foreclosure) চূড়ান্ত আদেশ বা ডিক্রী করা না হয় অথবা কোন মর্গেজ দ্বারা শতাধীন বিক্রী করা হলে; কিংবা
(ই) অনুচ্ছেদঃ মুসলিম আইন (Mohammadan Law) অনুযায়ী গঠিত ওয়াকফ; বা
(এফ) অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তির জন্য আর্থিক সুবিধা সংরক্ষণ (Reservation) ব্যতিত কোন ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত বা দান করা হলে ।

ব্যাখ্যাঃ এই ধারার উদ্দেশ্যে, নিকট আত্মীয় (By Consanguinity বা পুরুষানুক্রমিক নিকট আত্মীয়), হিন্দু আইনে দত্তক পুত্রকেও বুঝাবে ।
(১১) উপ-ধারাঃ এই ধারার কোন কিছুই মুসলিম আইনে প্রদত্ত কোন ব্যক্তির প্রি এমশনের অধিকার হতে তাকে বঞ্চিত করতে পারবে না।
(১২) উপ-ধারাঃ এই ধারার অধীন যে কোন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল আদালতে আপীল করা যাবে এবং প্রচলিত কোন আইনে অন্য কিছু থাকা সত্ত্বেও প্রথম আপীলের আদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আপীল করা যাবে না।
কৃষি ভূমির প্রি এমশনের ৯৬ ধারার (১) উপ-ধারা হতে (১২) উপ-ধারা পর্যন্ত বিধি ব্যবস্থার সার-সংক্ষেপ নিম্নে প্রদান করা হলো।
প্রি এমশনের অধিকার পাবার যোগ্যতা
৯৬ ধারা (১) উপ-ধারা অনুযায়ী, হস্তান্তরিত ভূমির খতিয়ান বা জোতের (হোল্ডিং) অপরাপর সহ-অংশীদারগণ এবং সহ-অংশীদারগণের মধ্যে কেউ দরখাস্তকারী না। থাকলে উক্ত হোল্ডিং এর লাগ ভূমির মালিকগণ প্রি এমশনের অধিকার পাবার যোগ্য ।
আদালতে আবেদনের সময় সীমা
হোল্ডিং এর সহ-অংশীদারের বেলায়— (ক) হস্তান্তরিত ভূমির হোল্ডিং এর বা খতিয়ানের সহ-অংশীদার বা সহ-অংশীদারগণের উপর রেজিস্ট্রি অফিস হতে স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেনান্সি এ্যাক্টের ৮৯ ধারা মোতাবেক নোটিশ জারী হওয়ার চার মাসের মধ্যে, অথবা
(খ) উপরোক্ত নোটিশ জারী না হয়ে থাকলে, ভূমি হস্তান্তর হওয়ার বিষয় অবগত হওয়ার বিষয় অবগত হওয়ার তারিখ হতে চার মাসের মধ্যে আদালতে প্রি এমশনের আবেদন করতে হবে।
হোল্ডিং এর লাগ ভূমির মালিকদের বেলায় — (গ) হস্তান্তরিত ভূমির লাগ ভূমির মালিকগণকে হস্তান্তরের বিষয় অবগত হওয়ার ৪ মাসের মধ্যে আদালতে প্রি এমশনের আবেদন করতে হবে।
পক্ষকরণ
৯৬ ধারায় (২) উপ-ধারায় বলা হয়েছে, যদি হোল্ডিং এর সহ-অংশীদার বা সহ- অংশীদারগণ প্রি এমশনের জন্য ৯৬ ধারার (১) উপ-ধারা মোতাবেক দরখাস্ত করেন তাহলে হস্তান্তরগ্রহীতাসহ অবশিষ্ট সকল সহ-অংশীদার মালিকগণকে পার্টি করতে হবে এবং যদি লাগ ভূমির মালিকগণ দরখাস্ত করেন তাহলে হস্তান্তরগ্রহীতাসহ হোল্ডিং এর অবশিষ্ট সকল সহ-অংশীদার মালিকগণকে এবং লাগ ভূমির সকল মালিকগণকে পার্টি করতে হবে।
আদালতে ভূমির মূল্য জমা প্রদান প্রসঙ্গে
(৩) উপ-ধারা (এ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, দলিলে বা ৮৯ ধারা অনুযায়ী। জারীকৃত নোটিশে হস্তান্তরিত হোল্ডিং-এর কিংবা খণ্ডের বা অংশের উল্লিখিত মূল্য তৎসহ উক্ত টাকার উপর শতকরা ১০ ভাগ হারে ক্ষতিপূরণ আবেদনকারীগণ যদি দরখাস্তের সঙ্গে আদালতে জমা প্রদান না করেন তাহলে দরখাস্ত খারিজ হয়ে যাবে এবং (বি) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যে, আদালত ভূমির প্রকৃত পণের টাকা কত প্রদান করা হয়েছে এবং ভূমি হস্তান্তরের পর হতে খাজনা বাবদ আরও কত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে ও ভূমিকে দায়মুক্ত এবং উন্নয়ন বাবদ কত টাকা ব্যয় করা হয়েছে তার বিবরণ প্রদানের জন্য আদালত হস্তান্তরগ্রহীতাসহ অন্যান্য ব্যক্তিগণকে নির্দেশ দিবেন।
আদালত হস্তান্তরগ্রহীতার বক্তব্য শ্রবণ সাপেক্ষে তার কর্তৃক এ সকল বাবদ প্রকৃত ব্যয় কত হয়েছে তা তদন্তের পর যদি প্রয়োজন হয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আরও টাকা জমা প্রদানের জন্য আবেদনকারীকে বা আবেদনকারীগণকে নির্দেশ দিবেন।
কিন্তু শর্ত হলো যে হস্তান্তরগ্রহীতা কোনমতেই দলিলে উল্লিখিত ভূমির মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্য দাবী করতে পারবেন না ।

অন্যান্য যোগ্য প্রার্থীদের প্রি এমশনের আবেদন সামিল হওয়ার সময় সীমা
৯৬ ধারার (৪) উপ-ধারায় বলা হয়েছে যে, (১) উপ-ধারা মতে দরখাস্ত করা হলে হস্তান্তরগ্রহীতার মধ্যে যদি কেউ থাকেন তাকে সহ হস্তান্তরিত হোল্ডিং এর অবশিষ্ট সহ- অংশীদার এবং লাগ ভূমির মালিকগণ (১) উপ-ধারার উল্লিখিত সময় (৪ মাস) অথবা (৩) উপ-ধারার (বি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নোটিশ জারীর তারিখ হতে ২ মাসের মধ্যে, যা আগে হবে, উপরোক্ত (১) উপ-ধারা অনুসারে দরখাস্তে যোগদানের জন্য আবেদন করতে পারেন। তারা যদি (১) উপ-ধারা বা এই উপ-ধারা মতে আবেদন না করেন তাহলে তাদের এই ধারায় অর্থাৎ প্রি এমশনের অধিকার প্রয়োগ করে উক্ত ভূমি ক্রয় করার আর কোন অধিকার তাদের থাকবে না।
ক্রমিক অনুসারে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্যতা
(৫) উপ-ধারা (এ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, প্রি এমশনের অগ্রাধিকার পাওয়ার অধিকারীদের ক্রমিক অনুসারে উল্লেখ করা হয়েছে | পৃষ্ঠায় (1) হতে (11) দেখুন) এবং (বি) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, লাগ ভূমির একাধিক দরখাস্তকারী মালিকদের মধ্যে প্রি- এমশনের অধিকার বলে ভূমি ক্রয় করার দাবী, কে অগ্রগণ্য তা আদালত (বি) অনুচ্ছেদে উল্লেখিত ৫টি অবস্থার দিকে লক্ষ রেখে স্থির করবেন।
পরে যোগদানকারীদের টাকা জমা প্রদান প্রসঙ্গে
(৬) উপ-ধারার (এ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যে সময়ের মধ্যে (৪) উপ-ধারা অনুসারে আবেদন করতে হবে সে সময় অতিক্রান্ত হলে আদালত (১) উপ-ধারা অথবা (৪) উপ-ধারার আবেদনসমূহের মধ্যে কোনটা অনুমোদন করবেন তা স্থির করবেন এবং (বি) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, যদি আদালত দেখতে পান, অনুমোদনের আদেশ একাধিক আবেদনকারীর অনুকূলে করতে হবে তবে প্রত্যেক আবেদনকারীকে কত টাকা দিতে হবে তা আদালত স্থির করবেন এবং যে সকল আবেদনকারী (৪) উপ-ধারা মোতাবেক দরখাস্ত করে মূল দরখাস্তে শরীক হয়েছেন তাদেরকে আদালতের নির্ধারিত তারিখে টাকা জমা দিতে নির্দেশ দিবেন। যদি উক্ত সময়ের মধ্যে টাকা জমা না দেওয়া হয় তাহলে তাদের দরখাস্ত বাতিল হয়ে যাবে
প্রি এমশনের বলে ক্রীত ভূমি ক্রেতাদের মধ্যে বণ্টন ও টাকা ফেরৎ প্রসঙ্গে
(৭) উপ-ধারা (এ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, (৬) উপ-ধারার (বি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী টাকা জমা দেওয়ার সময় অতিক্রান্ত হলে দরখাস্তকারীদের মধ্যে যারা উক্ত ৯৬ ধারার বিধি-ব্যবস্থাসমূহ পালন করেছেন, আদালত তার বা তাদের দরখাস্ত বা দরখাস্তসমূহ মঞ্জুর করার আদেশ দিবেন। যদি আদেশ একাধিক দরখাস্তকারীর অনুকূলে প্রদান করতে হয় তাহলে আদালত (হোল্ডিংটি) তাদের মধ্যে এমনভাবে ভাগ করবেন যেন ন্যায়ভিত্তিক হয় এবং (১) উপ-ধারার আবেদনকারীগণ যদি আরও টাকা ফেরৎ পাওয়ার যোগ্য হন তাহলে তারা (৬) উপ-ধারার (বি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জমাকৃত টাকা হতে উক্ত টাকা ফেরৎ পাবেন।
হস্তান্তরগ্রহীতাকে টাকা ফেরৎ প্রদান প্রসঙ্গে
(৭) উপ-ধারার (বি) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, হস্তান্তরগ্রহীতাকে (৩) উপ-ধারা অনুযায়ী জমাকৃত টাকা হতে শতকরা ১০ ভাগ হারে ক্ষতিপূরণসহ পণের টাকা এবং খাজনা, ভূমি উন্নয়ন ও দায় মুক্তি বাবদ বায়ের টাকা, যদি কিছু থাকে, তা পরিশোধ করতে হবে।
(৮) উপ-ধারায় বলা হয়েছে, (৭) উপ-ধারা মোতাবেক কোন বিভক্তির আদেশ হোল্ডিং বিভাগের আদেশ হিসেবে কার্যকরী হবে না।
হস্তান্তরগ্রহীতার স্বত্বলোপ এবং প্রি এমশন বলে ক্রেতাদের স্বত্ব প্রসঙ্গে
(৯) উপ-ধারায় বলা হয়েছে যে, (৭) উপ-ধারা মোতাবেক আদেশ হওয়ার তারিখ হতে—
(এ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, হোল্ডিং-এ হস্তান্তগ্রহীতার সকল অধিকার, স্বত্ব ও স্বার্থ লোপ হয়ে যাবে এবং (৭) উপ-ধারার কোন আদেশের সাপেক্ষে হস্তান্তরিত হোল্ডিং, খণ্ড বা অংশ দায়মুক্ত হয়ে সহ-অংশীদারগণের অথবা লাগ ভূমির মালিকগণের যাদের দরখাস্ত (৭) উপ-ধারা অনুযায়ী মঞ্জুর হয়েছে তাদের হস্তে ন্যস্ত হবে ।
(বি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, উক্ত তারিখ হতে হস্তান্তরগ্রহীতার জোতের দায় লোপ হয়ে যাবে এবং হস্তান্তরগ্রহীতার নিকট প্রাপ্য এরূপ যে কোন খাজনার জন্য সহ- অংশীদারগণ বা লাগ ভূমির মালিকগণ দায়ী থাকবেন।
(সি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আদালত আরও আবেদনের ভিত্তিতে তাদেরকে উক্ত অর্পিত সম্পত্তির দখলে বহাল করে দিতে পারবেন।
আরও দেখুনঃ