আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইনের প্রারম্ভিক সম্পর্কে

Table of Contents
ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইনের প্রারম্ভিক
গ্রাম, মৌজা, খতিয়ান, দাগ, ভূমি, হোল্ডিং ইত্যাদি শব্দগুলোর পরিচিতি ও সংজ্ঞা নিম্নে প্রদান করা হলো । আইন আদালতসহ সর্বত্র এই সংজ্ঞাগুলো গৃহীত ও বিবেচিত হয়ে থাকে।
১। গ্রাম (Village):
স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী এ্যাক্ট, ১৯৫০ এর ২ ধারার (২৯) ক্লজ, গ্রাম এর অর্থ— “সরকার দ্বারা বা কর্তৃত্বাধীনে অনুষ্ঠিত কোন জরীপে যে এলাকা জেলা এবং স্বতন্ত্র গ্রাম হিসেবে সীমানা চিহ্নিত, জরীপকৃত এবং রেকর্ডভুক্ত হয়েছে এবং যেখানে জরীপ হয়নি এরূপ এলাকা ভূমি প্রশাসন বোর্ডের অনুমোদনক্রমে কালেক্টরের সাধারণ বা বিশেষ আদেশ বলে গ্রাম গঠিত হয়ে থাকে।
২। মৌজা (Mouja)ঃ
গ্রাম বা শহরকে এতদউদ্দেশ্যে মৌজা বলা হয়। যেমন- ঢাকা শহর মৌজা, ময়মনসিংহ শহর মৌজা, রাজশাহী শহর মৌজা ইত্যাদি। গ্রাম শুভাঢ্যা মৌজা, জিঞ্জিরা মৌজা ইত্যাদি। শহরের একাধিক মৌজা রয়েছে। যেমন ঢাকা শহর মৌজা, সূত্রাপুর মৌজা, মিরপুর মৌজা ইত্যাদি ।
উপরোক্ত জরীপে হাট-বাজারগুলো নিজ নিজ নামে মৌজা হিসেবে রেকর্ডভুক্ত না হয়ে থাকলে এরা যে মৌজায় অবস্থিত সেই মৌজার নামে পরিচিত হবে।
৩। ভূমি (Land)ঃ
স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী এ্যাক্ট, ১৯৫০-এর ২ ধারার (১৬) দফা (Clause) ভূমির অর্থ, যে ভূমি আবাদী, অনাবাদী অথবা বৎসরের যে কোন সময় জল দ্বারা নিমজ্জিত থাকে এবং (ভূমি হতে উৎপন্ন সুবিধাদিসহ) বাড়ি ঘর, দালান-কোঠা, ভূমির সাথে সংযুক্ত বস্তুসমূহ অথবা ভূমির সাথে সংযুক্ত কোন বস্তুর সাথে স্থায়ীভাবে আবদ্ধ রয়েছে এমন বস্তু বা বস্তুসমূহ ভূমির অন্তর্ভুক্ত বা ভূমি বলে গণ্য ।
সাধারণভাবে সকল আবাদী ও অনাবাদী ভূমি এবং নদ-নদী, খাল-বিল, নালা, পুকুর, ডোবা, বাড়িঘর, দালান-কোঠাসহ যা ভূমির সঙ্গে স্থায়ীভাবে যুক্ত রয়েছে ইত্যাদি ভূমি বলে গণ্য করা হয় । কিন্তু সাগর বা উপসাগরকে ভূমি বলে গণ্য করা হয় না।
(১৬-এ) আপাততঃ বলবৎ অন্য যে কোন আইনে অথবা যে কোন দলিলে কিংবা যে কোন আদালতের রায়ে, ডিক্রীতে বা আদেশে অন্য কিছু থাকা সত্ত্বেও স্বতন্ত্র বা আঞ্চলিক সকল জলমহাল (ফিশারী) ১৬ নং অনুচ্ছেদের ভূমির সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত এবং অন্তর্ভুক্ত বলে সর্বদা গণ্য হবে।
[ (১৬-ই) ই. পি. ১৯৬০ সনের ১২নং ই. পি. অর্ডিন্যান্সের ৩নং ধারাবলে সংযোজিত হয়েছে।]

৪ । দাগ (Plot)ঃ
ভূমির বিবরণ, হিসাব সংরক্ষণ ও পরিচিতির জন্য জরীপ বিভাগ দেশের সমুদয় ভূমিকে বিভিন্ন আকারে ও পরিমাণে খণ্ডে খণ্ডে বা অংশে বিভক্ত করেছে। এ সব ভূমির খণ্ডাংশ প্রত্যেকটিকে ‘দাগ’ এবং ইংরেজিতে প্লট (Plot) বলা হয়।
বিভিন্ন দাগের ভূমির পরিমাণ বিভিন্ন পরিমাণের হয়ে থাকে। কোন কোন দাগে এক শতাংশের কম বা কোন কোনটিতে একশত একরের ঊর্ধ্বে হয়ে থাকে। এই দাগগুলো প্রতিটি ক্রম অনুসারে ১, ২, ৩, ৪, ৫ ইত্যাদি সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত। প্রতি মৌজার দাগ ১ নং হতে শুরু করে উক্ত মৌজার এলাকার সমুদয় ভূমি যতটি দাগ বা ভূমি খণ্ডে বিভক্ত করা হয়েছে ঠিক ততটি নম্বর থাকবে।
কোন মৌজার এক হাজার দাগ থাকলে ক্রমিক সংখ্যা অনুসারে এক (১) হতে এক হাজার (১০০০) দাগ থাকবে। তাছাড়া বাটা দাগও থাকতে পারে। এ সব দাগ বা ভূমি খণ্ড এবং এদের নম্বর ও সীমানা সরেজমিনে দৃষ্ট হবে না। জরীপ বিভাগ কর্তৃক প্রস্তুত মৌজার ম্যাপ বা নক্সাতে দৃষ্ট হবে। প্রত্যেক মৌজার নক্সা রয়েছে। এটা জেলা প্রশাসকের অফিসে কিনতে পাওয়া যায়। নক্সার দাগগুলো কিছু ব্যতিক্রম ব্যতিত সর্বক্ষেত্রে ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী পাশাপাশি সন্নিহিত বা সংলগ্ন (দাগ) থাকবে।
মৌজা-নক্সার উত্তর পশ্চিম হতে ১ নং দাগ শুরু হয়ে দক্ষিণ-পূর্বে গিয়ে শেষ হবে। একটি মৌজায় কতগুলো দাগ আছে এবং প্রতিটি দাগের মোট ভূমির পরিমাণ ও এর সমুদয় ভূমি কোন্ কোন খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তা স্বত্ত্বের বহির (ROR) প্রথমে প্লট ইনডেক্স বা দাগের সূচিতে পাওয়া যাবে। নির্দিষ্ট দাগটি কোন কোন খতিয়ানভুক্ত হয়েছে তা সূচির উক্ত দাগের ভূমির বিপরীতে উল্লেখ রয়েছে এবং ভেতরে উক্ত খতিয়ানগুলোতে দাগের কি পরিমাণ ভূমি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তা দেখতে পাওয়া যাবে। পৃষ্ঠা-৬ প্লট ইনডেক্স বা দাগের সূচির একটি নমুনা প্রদান করা হল।
এই দাগগুলো হলো ভূমির প্রাথমিক পরিচয়। ‘আর ও আর’ এ দাগের ভূমির শ্রেণী যথা- কৃষি, চান্দিনা, বিল, ডোবা, পুকুর, নদী ইত্যাদি শ্রেণী হিসেবে উল্লেখ থাকে। ভূমি খণ্ডটি মৌজার কোন এলাকায় অবস্থিত দাগ নম্বর ধরে নক্সা দেখে ধারণা করা যায়।
৫। মৌজা-নক্সা (Map)ঃ
মৌজা বা গ্রামের কিংবা শহরের সীমাবদ্ধ এলাকার মানচিত্র বা ম্যাপকে নক্সা বলা হয়। এতে মৌজাস্থ ভূমির দাগ নম্বরসহ ভূমি খণ্ডের আকারের চিত্র পাওয়া যায়। এটা ছাড়া এতে সাধারণ পরিচিত স্থান যথা — বিল্ডিং, রাস্তা, নদী, কৃষ্ণা, হালট ইত্যাদি চিহ্নিত থাকে যাতে একে কেন্দ্র করে এর পার্শ্ববর্তী দাগগুলোর অবস্থান সহজে বের করা যায়।
দৃষ্টান্ত স্বরূপ, ঢাকা শহর মৌজার নক্সায় ‘গুলিস্তান’, ‘স্টেডিয়াম’ বা ‘সচিবালয়’ হিসেবে চিহ্নিত স্থান হতে প্রয়োজনীয় দাগের অবস্থানের দিক নির্ণয় করে অনুসন্ধান করলে এটা বের করা যাবে অথবা প্রয়োজনীয় দাগটির সংলগ্ন দাগের কোন মালিকের কাছ হতে উক্ত প্রয়োজনীয় দাগের ভূমির অবস্থান জেনে নেওয়া যায় অথবা উক্ত মালিকের নিজ ভূমির অবস্থান জেনে তা হতে অনুসন্ধান করলে প্রয়োজনীয় দাগ নম্বরের ভূমি খণ্ডটি পাওয়া যায়।
এস. এ. আর ও আর বহির
প্লট-ইন্ডেক্স বা দাগের সূচির নমুনা
জেলা- | থানা- | মৌজা- | জে. এল. নং |
দাগের নম্বর | দাগের মোট ভূমির পরিমাণ | দাগের ভূমি কোন কোন খতিয়ানভুক্ত হয়েছে | |
১ | ০.১০ | ১,২,৩ | |
২ | ১.০০ | ১,২,৩ | |
৩ | ৫০.০০ | ১,৩ | |
৪ | ১০০.০০ | ১ | |
৫ | ২০.০০ | ১ | |
৬ | ১২.০০ | ২,৩ |
১ নং দাগের ১০ শতাংশ ভূমি বিভক্ত হয়ে ১, ২, ৩ খতিয়ানে এবং ২ নং দাগের ১.০০ ভূমি বিভক্ত হয়ে ১, ২, ৩ নং খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে । অনুরূপ অন্যান্য দাগের ভূমি ওদের বিপরীত খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত।
এস. এ. দাগের ভূমি
বিভিন্ন খতিয়ানে বণ্টনের নমুনা
জেলা- থানা- মৌজা- জে. এল. নং
খতিয়ান নম্বর | মালিকের নাম ও ঠিকানা | অংশ | দাগ নং | জমির শ্রেণী | দাগের পরিমান এঃ | মোট
শঃ |
দাগের মধ্যে অত্র খতিয়ানের হিস্যা | দাগের মধ্যে অত্র
খতিয়ানের জমির পরিমাণ |
রাজস্ব | মন্তব্য |
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ |
১ | বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কালেক্টর | ২ | ১
২ ৩ ৪ ৫ |
চান্দিনা
কান্দা বিল নদী খাল |
০
১ ৫০ ১০০ ২০ |
১০
০০ ০০ ০০ ০০ |
০.০৪
০.৫০ ৪৩.৫০ ১০০.০০ ২.০.০০/১৬৪.০৪ |
|||
২ | মোঃ রফিক উদ্দিন
পিতা- আব্দুল করিম সাং-নিজ |
২ | ১
২ ৬ |
চান্দিনা
কান্দা নাল |
০
১ ১২ |
১০
০০ ০০ |
০.০৪
০.২০ ৭.০০/৭.২৪ |
|||
৩ | আব্দুল জলিল
পিতা- আব্দুল বেপারী মালেকা খাতুন জং আব্দুল জলিল এখলাছ উদ্দিন আব্দুল করিম পিতা-মহিউদ্দিন সাং-নিজ |
1.
1. 1. 1./2 |
১
২ ৩ ৬ |
চান্দিনা
কান্দা বিল নাল |
০
১ ৫০ ১২ |
১০
০০ ০০ ০০ |
০.০২
০.৩০ ৬.৫০ ৫.০০/১১.৮২ |

৬। খতিয়ান (Khatian)ঃ
খতিয়ানের অর্থ হলো ‘হিসাব’। সাধারণভাবে স্বত্ত্ব সংরক্ষণ ও রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে জরীপ বিভাগ কর্তৃক প্রত্যেক মৌজার ভূমির মালিক বা মালিকগণের নাম, পিতা অথবা স্বামীর নাম, ঠিকানা, হিস্যা (অংশ) এবং তাদের স্বত্বাধীন দাগসমূহের নম্বরসহ ভূমির পরিমাণ, শ্রেণী, এদের জন্য দেয় খাজনা ইত্যাদি বিবরণসহ ক্রমিক সংখ্যা অনুসারে যে স্বত্ব তালিকা বা স্বত্বের রেকর্ড প্রস্তুত করা হয়, তাদের প্রত্যেকটিকে খতিয়ান বলা হয় এবং উক্ত রেকর্ডকে স্বত্ত্বের রেকর্ড বা রেকর্ড অব রাইট্স (ROR) বলা হয়।
“এক বা একাধিক দাগের সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিমাণ ভূমি নিয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে সরকার বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যে ভূমি-স্বত্ব প্রস্তুত করা হয় তাকে ‘খতিয়ান’ বলে ।
খতিয়ানগুলো ১, ২, ৩, ৪, ৫ ইত্যাদি ক্রমিক সংখ্যা দ্বারা সাজানো হয়ে থাকে। প্রত্যেক খতিয়ানের একটি সংখ্যা রয়েছে। এদেরকে ‘খতিয়ান নম্বর’ বলা হয়। প্রত্যেক মৌজার খতিয়ান এক (১) হতে শুরু হয়। কোন কোন মৌজার একশত ( ১০০ ) খতিয়ানের কম থাকতে পারে আবার কোন কোন মৌজার কয়েক হাজারের বেশি থাকতে পারে। কোন মৌজায় কতটি খতিয়ান রয়েছে তা উক্ত স্বত্ত্বের রেকর্ডে (ROR) পাওয়া যাবে।
প্রত্যেক মৌজার ১নং খতিয়ানটিকে খাস খতিয়ান বলা হয়। বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্বত্বাধীন ভূমি যথা— হাট-বাজার, খাল-বিল, রাস্তা-ঘাট এবং অন্যান্য কৃষি ও অকৃষি ভূমি উক্ত ১নং খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে এবং সরকারের পক্ষে “কালেক্টর’ হিসেবে উক্ত ১নং খতিয়ানে লিখনভুক্ত হয়ে থাকে।
৭। হাল খতিয়ান নম্বরঃ
কোন এলাকায় সর্বশেষ জরীপে খতিয়ানের রেকর্ড প্রস্তুত হওয়ার পর সরকার কর্তৃক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়ে বর্তমানে চালু আছে এরূপ খতিয়ানসমূহকে ‘হাল খতিয়ান’ বলা হয়।
খতিয়ানে যে সব বিবরণ লেখা হয়ে থাকে তা নিম্নে দেওয়া হলোঃ
১। জেলার নাম।
২। থানার নাম।
৩। মৌজার নাম
8। জে. এল. নং (Jurisdiction level number)
৫। খতিয়ানের নম্বর।
৬। মালিক বা মালিকগণের নাম ও তাদের পিতা কিংবা স্বামীর নাম এবং ঠিকানা
৭। মালিক বা মালিকগণের অংশ
৮। দাগ নম্বর
৯। দাগের ভূমির শ্রেণী।
১০। দাগের ভূমির মোট পরিমাণ ।
১১। দাগের মধ্যে অত্র খতিয়ানের হিস্যা।
১২। দাগের মধ্যে অত্র খতিয়ানের জমির পরিমাণ
১৩। রাজস্ব।
১৪। মন্তব্য।
৮। সাবেক খতিয়ান নম্বর (Old Khatian No.)
যে সব খতিয়ান, হাল খতিয়ান চালু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চালু ছিল এবং বর্তমানে চালু নেই একপ খতিয়ানসমূহকে সাবেক খতিয়ান বলা হয়। এই সাবেক খতিয়ানগুলো ভূমির ধারাবাহিক পরিচিতির জন্য প্রয়োজন। এ ছাড়া সাবেক খতিয়ানগুলো হাল খতিয়ান হিসেবে চালু থাকাকালে সম্পাদিত সকল দলিল, মামলা-মোকদ্দমার রায়ে, ডিক্রিতে এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে এই খতিয়ানগুলো লেখা হয়েছিল। হাল খতিয়ান চালু হওয়ার পূর্বেকার সম্পাদিত দলিল দস্তাবেজ ও রায়ে উল্লিখিত খতিয়ানগুলো যা সাবেক খতিয়ানে পরিণত হয়েছে, তা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট দলিল-দস্তাবেজে সাবেক খতিয়ান নং বহাল থাকায় এগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।
সি. এস. খতিয়ান (Cadastral Survey Khatian)ঃ এই খতিয়ানগুলো ১৯১০-২০ সনের মধ্যে প্রস্তুত হয়েছিল। বাস্তবে মাঠ জরীপ করে সি এস খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়েছিল। একে এখন সাবেক খতিয়ান বলে।
এস. এ. খতিয়ান (State Acquisition Khatian} : স্টেট একুইজিশন এর টেন্যান্সী অ্যাক্টের ৩ ধারার আওতাধীনে ৪৮২৬-এল, আর-৪৮৩৬ এল. আর. নং তারিখ ২/৪/১৯৬৫ বিজ্ঞপ্তির মূলে সরকার কর্তৃক সকল জমিদারি দখল (State Acquisition) নেওয়ার পর উক্ত অ্যাক্টের ১৭ ধারা মোতাবেক যে খতিয়ান প্রযু করা হয় তা এস. এ. খতিয়ান বলে পরিচিত। সরকার কর্তৃক জমিদারী দখল একটা স্মরণীয় ঘটনা বিধায় এই নামেই সর্বসাধারণের নিকট পরিচিত। উল্লেখ্য যে, অ্যাক্ট অনুযায়ী এদের আইনগত পরিচিতি হল রিভিশনাল সেটেলমেন্ট খতিয়ান। যতবার পরিবর্তিত হবে এই নামেই অভিহিত হবে। এই খতিয়ানগুলো উক্ত অ্যাক্টের ১৯(৩) ধারা অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হয়।
আর, এস খতিয়ান (Revisional Settlement Khatian)ঃ এস. এ. খতিয়ানের পর স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী অ্যাক্টের ১৪৪ ধারা মোতাবেক যে সব খতিয়ান প্রস্তুত হয়ে উক্ত ধারার (৭) উপ-ধারা মোতাবেক চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হবে সেগুলোকে আর এস খতিয়ান বলে।
৯। সাবেক দাগ নং (Old Plot No.)ঃ
উল্লেখ্য যে দাগসমূহের ক্ষেত্রে সাবেক ও হাল দাগ হয়ে থাকে। ১৯৫৬ সালের জরীপে যা এখনও চালু রয়েছে এতে গ্রাম অঞ্চলের অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাবেক দাগগুলো হাল দাগ হিসাবে বহাল রয়েছে। উক্ত জরীপে শহরের সাবেক দাগ নম্বরগুলো পরিবর্তন করে নতুন দাগ নম্বর করা হয়েছে। এরূপ নতুন নক্সা পুরাতন নক্সার উপরে রেখে যাচাই করলে পরিবর্তিত দাগ নম্বরটি সহজে ধরা যাবে এবং এর ভূমি সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

১০। হোল্ডিং নং (Holding)ঃ
স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী অ্যাক্ট (২) ধারার (১৩) ক্লজ — ‘হোল্ডিং’-এর অর্থ, কোন রায়ত বা অধীনস্ত রায়তের স্বত্বাধীন দখলীয় কোন ভূমিখণ্ড বা ভূমিখণ্ডসমূহ অথবা এর অবিভক্ত হিস্যা এবং কোন স্বতন্ত্র প্রজাস্বত্বের পঠিত বিষয়।
উপরে বর্ণিত ‘হোল্ডিং’ শব্দটি ‘খতিয়ান’ শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে গণ্য করতে হবে। স্টেঃ এঃ এণ্ড টেঃ অ্যাক্টের সর্বত্র ‘হোল্ডিং’ শব্দটি উল্লেখ রয়েছে, ‘খতিয়ান’ শব্দটির উল্লেখ নেই। কিন্তু ‘ROR’ সহ সকল কাজে ও বাস্তবে খতিয়ান’ শব্দের ব্যবহার দৃষ্ট হয়। অতএব এরা সমার্থক বোধক।
(অন্য এক ধরনের হোল্ডিং-এর উল্লেখ পাওয়া যাবে খাজনার দাখিলায়। এই শ্রেণীর হোল্ডিংগুলো খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন করা আদায়ের বহি (২ নং বহিতে) অর্থাৎ তলব বাকি বহিতে উল্লেখ রয়েছে। এগুলো খতিয়ান নয় বা খতিয়ানের ন্যায় স্থায়ী নয়। যা হোক, এ জাতীয় হোল্ডিং নম্বর ও খতিয়ান নং কোথাও কোথাও একই হয়ে থাকে অথবা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
এই শ্রেণীর হোল্ডিংগুলো খাজনার দাখিলার নির্দিষ্ট ঘরে উল্লেখ রয়েছে এবং কেবল ভূমির খাজনা বা কর আদায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে থাকে। অন্য সব ক্ষেত্রে এদের প্রয়োজন নেই কেবল খতিয়ানই যথেষ্ট।
১১। বৎসর বা কৃষি সন (Year of Agricultural Year)ঃ
স্টেঃ এঃ এণ্ড টেঃ অ্যাক্টের ২ ধারার (৩০) ক্লজ বাংলা সন ১ বৈশাখ হতে শুরু হয় ।
১২। চাষী রায়ত (Cultivating Raiyat)ঃ
অথবা ‘অধিনস্ত চাষী রায়ত” (Under Cultivating Ralyat) এর অর্থ কোন রায়ত বা অধীনস্ত রায়ত, ক্ষেত্রভেদে, যিনি হয় নিজে অথবা পরিবারের সদস্যগণ দ্বারা বা ভৃত্য দ্বারা কিংবা বর্গাদার দ্বারা অথবা ভৃত্য বা শ্রমিকদের সাহায্যে বা দ্বারা অথবা অংশীদারদের সাহায্যে কৃষিকার্যের জন্য ভূমি দখল করেন, তাকে রায়ত বা অধীনস্ত রায়ত বলা হয়।
উক্ত অ্যাক্টের ৮২ ধারায় (২) উপ-ধারা অনুযায়ী, ‘রায়ত’ শব্দের অর্থ, কোন ব্যক্তি যিনি ৪৪ ধারা অথবা অন্যভাবে সরকারের প্রত্যক্ষধীনে নিজে কিংবা পরিবারের সদস্য। দ্বারা অথবা ভৃত্য বা শ্রমিকের সাহায্যে অথবা বর্গাদার বা অংশীদারদের সাহায্যে প্রধানত কৃষিকার্যের উদ্দেশ্যে ভূমি দখল করার অধিকার অর্জন করেন এরূপ ব্যক্তি বা তার উত্তরাধিকারীগণ (Successors in Interest) অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবেন।
১৩। টেন্যান্ট (Tenant. প্রজা)ঃ
স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী অ্যাক্ট, ১৯৫০- এর ২ ধারার (২৭) ক্লজ ‘টেন্যান্ট’ বা প্রজার অর্থ, কোন ব্যক্তি যিনি অন্য একজনের অধীনে ভূমি দখল (Hold) করেন অথবা বিশেষ কোন চুক্তি ব্যতিত ঐ ভূমির জন্য ঐ ব্যক্তিকে খাজনা (রেন্ট) প্রদানের জন্য দায়বদ্ধ থাকেন।
শর্ত হলো যে, কোন ব্যক্তি যিনি আধি, বর্গা, অথবা ভাগ বলে সাধারণভাবে পরিচিত রীতিতে অন্যের ভূমি চাষ করেন, ফসলের একটা অংশ ঐ ব্যক্তিকে প্রদানের শর্তে তিনি টেন্যান্ট নন, যতক্ষণ না—
(i) এরূপ ব্যক্তি তার ভূমির মালিক (Land Lord) কর্তৃক সম্পাদিত বা তার অনুকূলে সম্পাদিত এবং তার কর্তৃক গ্রহীত কোন দলিলে তার টেন্যান্ট হিসেবে প্রকাশ্যভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন; অথবা
(ii) তিনি কোন দেওয়ানী আদালত কর্তৃক টেন্যান্ট হিসেবে ঘোষিত হন বা হলে।
১৪ । মালিক ও ভূমি রাজস্বঃ
স্টেট একুইজিশন এন্ড টেন্যান্সী অ্যাক্টের ৮২ ধারার (৮) উপ-ধারা অনুসারে, কোন এলাকায় এই অ্যাক্টের এই অংশ (Part-V) সম্পূর্ণভাবে বলবৎ হওয়ার তারিখ হতে ‘রায়ত’ অথবা ‘টেন্যান্ট’ শব্দের পরিবর্তে ‘মালিক’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে বলে গণ্য করা হবে এবং এরূপ এলাকায় এই অংশের বিধানসমূহ প্রয়োগের উদ্দেশ্যে কৃষিভূমি সম্পর্কীয় এই অংশের যেখানে ‘রেন্ট’ শব্দ আছে সেখানে এর পরিবর্তে ‘ভূমি রাজস্ব’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং যেখানে কোন লীজ, কবুলীয়ত, চুক্তি (Contract) অথবা অন্যান্য চুক্তি (Agreement) দ্বারা নিরূপিত, সেখানে গভর্নমেন্টকে দেয় খাজনা ভূমি রাজস্ব হিসেবে আদায়যোগ্য।
ব্যাখ্যা ঃ যেখানে কোন ভূমির প্রজা, একে চাষাবাদের অধীনে আনয়নের অধিকার অর্জন করে থাকেন, সেখানে তিনি এটা কৃষিকার্যের উদ্দেশ্যে দখল করার অধিকার অর্জন করেছেন বলে গণ্য হবে, যদিও তিনি একে উৎপন্ন ফসল জড় করা অথবা গোচারণের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকেন। (উল্লেখ্য যে, উক্ত অ্যাক্টের পঞ্চম অংশ বহু পূর্বেই দেশের সর্বত্র বলবৎ রয়েছে।)
আরও উল্লেখ্য যে, ৪2 / 96 ( XLII / 1976) অধ্যাদেশ মূলে ‘খাজনা’ শিক্ষা কর, উন্নয়ন কর, স্থানীয় কর ইত্যাদির পরিবর্তে ভূমি উন্নয়ন কর নামে সমন্বিত কর, ১৯৬৭ ইংরেজি সনের ১৪ এপ্রিল মোতাবেক ১৩৮৩ বাংলা সনের ১ বৈশাখ হতে চালু হয়েছে। এটা ভূমি রাজস্ব হিসেবে গণ্য হবে ।
১৫। আবাস ভূমি, বাস্তু ভূমি (Homestead)ঃ
ষ্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী অ্যাক্ট ১৯৫০-এর ২ ধারার (১৪) রুজ, আবাসভূমি (homestead)-এর অর্থ, বাসগৃহ ও এর অধীনস্ত ভূমিসহ এবং তৎসংলগ্ন দখলভুক্ত কোন প্রাঙ্গন, পুকুর, প্রার্থনার স্থান, প্রাইভেট কবরস্থান কিংবা শ্মশান ভূমিসহ এবং বসতবাড়ি কিংবা কৃষি অথবা হর্টিকালচারের সাথে সংশ্লিষ্ট সুবিধা ভোগের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত বাহির বাড়ি বা গৃহ এবং সুনির্দিষ্ট চৌহদ্দিভুক্ত ভূমি পতিত থাকুক বা না থাকুক এর আবাস ভূমির অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
১৬। অকৃষি প্রজা (Non Agricultural tenant)ঃ
স্টেট একুইজিশন এ টেন্যান্সী অ্যাক্ট, ১৯৫০-এর ২ ধারার (১৭) ক্লজ অনুযায়ী, অকৃষি টেন্যান্ট বা প্রজা এর অর্থ, কোন টেন্যান্ট, যিনি কৃষি বা হর্টিকালচারের সংগে সংশ্লিষ্ট নয় এমন ভূমি দখ ভোগ (hold) করেন, তিনি অকৃষি প্রজা বলে গণ্য হবেন। কিন্তু চিরস্থায়ী ইজারা (A lease in perpetuity) ব্যতিত ইজারাভুক্ত কোন ভূমি তৎসহ এতে অবস্থিত গৃহ, তৎসংলগ্ন প্রাঙ্গনের ভোগ দখলকারী ব্যক্তি এর অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবেন না। (অকুমি প্রজা হিসেবে গণ্য হবেন না)।
১৭। হাট/বাজার (Hat or Bazar)ঃ
স্টেট একুইজিশন এর টেন্যান্সী অ্যাক্ট, ১৯৫০-এর ২ ধারার (১২) দফা (Clause), হাট কিংবা বাজারের অর্থ, এমন স্থান যেখানে প্রত্যেক দিন অথবা সপ্তাহের বিশেষ দিনগুলোতে প্রধানত গৃহপালিত পত (Livestock), হাঁস-মুরগি ইত্যাদি গৃহপালিত পাখি (Poultry), কাঁচা-পাকা পতর চামড়া, মাছ, ডিম, দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য কিংবা খাদ্য, পানীয় অথবা জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেচা-কেনার উদ্দেশ্যে লোক সমাগম হয় এবং উক্ত স্থানের এলাকাধীনে এরূপ পণ্যের অথবা তৈরি মালামালের সকল দোকানপাটসমূহ (হাট / বাজারের সংজ্ঞার) অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
১৮। পরিত্যাক্ত চা বাগান (Derelict tea garden)ঃ
স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী এ্যাক্ট, ১৯৫০-এর ২ ধারার (৯৩) ক্লজ অনুযায়ী, পরিত্যক্ত চা বাগান (derelict tea garden) এর অর্থ, একক ব্যবস্থাপনার অধীনে দখলীয় কোন ভূমিখণ্ড বা ভূমি খণ্ডসমূহের সমষ্টি যা চা চাষের কিংবা প্রস্তুত বা তৈরির উদ্দেশ্যে দখল করা হয়েছিল কিংবা যাতে চা এর ঝোপঝাড় বিদ্যমান ছিল কিংবা আছে এবং গভর্নমেন্ট যেগুলোকে পরিত্যক্ত চা বাগান হিসাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন এবং এরূপ ভূমির উপর যাবতীয় বিল্ডিংসও (এর) অন্তর্ভুক্ত। শর্ত হলো যে, ভূমিখণ্ড ও ভূমি খণ্ডসমূহ পরিত্যক্ত চা বাগান হিসাবে বিজ্ঞপ্তি প্রদানে গভর্নমেন্টের নিম্নোক্ত বিষয়ের প্রতি বিবেচনা থাকা আবশ্যক-
(i) এরূপ ভূমি যা এর মোট পরিমাণের ১৫ ভাগের কম চা রোপণ করা হত কিনা এবং যার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পূর্বেকার ৫ বছর যাবৎ কোন চা রোপণ করা হত না ।

১৯। হস্তাস্তর (Transfer)ঃ
স্টেট এর এও টেঃ এ্যাক্টের ৮২ ধারার (৭) উপ-ধারা অনুযায়ী, যখন স্পষ্টরূপে অন্য কোনরূপ ব্যবস্থা থাকা ব্যতিত, ব্যক্তিগত বিক্রি (Private Sale), বন্ধক (Mortgage), দান (Gift) অথবা কোন চুক্তি (Contract or Agreement) ‘হস্তান্তর’ এর অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী এ্যাক্টের ৮৯ ধারার (৬) উপ-ধারার (বি) অনুচ্ছেদ বন্টননামা (Partition) অথবা ‘বন্ধকী সম্পত্তি উদ্ধারের অধিকার বঞ্চিতকরণের আদেশ বা ডিক্রী না হওয়া পর্যন্ত (Decree of order absolute for foreclosure), সরল অথবা উপস্বত্ত্ব খাইখালাসী ( Usufructuary Mortgage) অথবা শর্তাধীন বিক্রী দ্বারা বন্ধক (by conditional sale Mortgage) ‘হস্তান্তর’ এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
২০। কালেক্টরঃ
স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী এ্যাক্ট, ১৯৫০-এর ২ ধারার (৩) ক্লজ, কালেক্টর এর অর্থ, কোন জেলার কালেক্টর এবং ডেপুটি কমিশনার (জেলা প্রশাসক) এবং এই এ্যাক্ট অনুসারে কালেক্টরের সমুদয় বা যে কোন দায়িত্ব পালন করার জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত এরূপ অন্যান্য কর্মকর্তাগণও অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
২১। রেভিনিউ অফিসারঃ
স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী অ্যাক্ট, ১৯৫০-এর ২ ধারার (২৪) ক্লজ. ‘রেভিনিউ অফিসার’ এর অর্থ, যে কোন অফিসার যাকে গভর্নমেন্ট এই এ্যাক্ট অথবা এর আওতাধীনে প্রণীত কোন বিধিসমূহ অনুসারে রেভিনিউ অফিসারের সমুদয় অথবা যে কোন দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য নিয়োগ করেন।
২২। ‘রেন্ট’ (Rent, খাজনা)ঃ
স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী এ্যাক্টের ২ ধারার (২২) ক্লজ, ‘রেন্ট’ বা ‘খাজনার’ অর্থ ‘প্রজা কর্তৃক দখলীয় ভূমি ব্যবহারের জন্য অথবা দখলের জন্য কোন প্রজা কর্তৃক তার ল্যাণ্ড লর্ডকে যা কিছু টাকায় বা দ্রব্যে দেয় বা প্রদেয়
২৩। ‘দায়’ (Encumbrance)ঃ
স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী এ্যাক্টে ১৯৫০-এর ২ (১০) ধারা ‘দায়’ এর অর্থ ‘কোন এস্টেট, টেনিউর হোল্ডিং, টেন্যান্সী অথবা ভূমি সম্পৰ্কীয় দায়, (Encumbrance) বলতে বুঝায় দখলকার কর্তৃক উক্ত এস্টেট, টেনিউর, হোল্ডিং, টেন্যান্সী কিংবা ভূমি এর উপর যে কোন বন্ধক, চার্জ, লিয়েন, সাব-টেন্যান্সী, ইজমেন্ট অথবা সৃষ্ট অন্যান্য অধিকার কিংবা স্বত্ব অথবা তথায় তার নিজ স্বার্থ সীমিতকরণ।
২৪। ল্যাণ্ড লর্ড (Land Lord)ঃ
নন-এগ্রিকালচারাল টেন্যান্সী এ্যাক্ট, ১৯৪৯ এর ২ ধারার (৩) ক্লজ, ‘ল্যাণ্ড লর্ড” এর অর্থ কোন ব্যক্তি যার অধীনে কোন অকৃষি প্রজা (টেন্যান্ট) রয়েছে ।
২৫। অকৃষি ভূমি (Non Agricultural Land)ঃ
গ্রিকালচারাল টেন্যান্সী এ্যাক্ট, ১৯৪৯ এর ২ ধারার (৪) ক্লজ অকৃষি ভূমির অর্থ, যে ভূমি ব্যবহারের উদ্দেশ্য’ কৃষি বা হর্টিকালচারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় এবং অন্তর্ভুক্ত হবে, এরূপ যে কোন ভূমি যা লিজের (ইজারা) ভিত্তিতে দখলের উদ্দেশ্য’ কৃষি বা হর্টিকালচারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় এরূপ কোন উদ্দেশ্যে এটা ব্যবহৃত হোক বা না হোক কিন্তু অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে না-
(এ) কোন বাস্তুভূমি (আবাস ভূমি) যার ক্ষেত্রে বেঙ্গল টেন্যান্সী এ্যাক্ট, ১৮৮৫ এর ১৮২ ধারার বিধি বিধানগুলো প্রয়োগ হয়,
(বি) যে ভূমি মূলতঃ কৃষি বা হর্টিকালচারের উদ্দেশ্যে লিজ প্রদান করা হয়েছিল কিন্তু ল্যাণ্ড লর্ডের সুস্পষ্ট বা linplied সম্মতি ব্যতিত কৃষি বা হর্টিকালচারের সঙ্গে সম্পর্কহীন উদ্দেশ্যে’ ব্যবহৃত হয়, যদি যে সময়ের জন্য এই ভূমি ব্যবহৃত হয় তা ১২ বৎসরের কম হয়ে থাকে, এবং
(সি) যে, ভূমি দখলের উদ্দেশ্য’ চা আবাদ বা প্রস্তুতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্তঃ
শর্ত থাকে যে, অকৃষি ভূমি নয় এরূপ ভূমি খণ্ড, ৭২ ধারায় প্রদত্ত আদেশের বলে পরিবর্তিত টেন্যান্সী যে ক্ষেত্রে এই এ্যাক্টের (নন-এগ্রিকালচারাল এই বিধিবিধান প্রযোজ্য হয়, এরূপ ভূমিকে অকৃষি ভূমি হিসেবে গণ্য করা হবে।
সংক্ষেপে ‘অকৃষি ভূমির অর্থ, যে ভূমি ব্যবহারের উদ্দেশ্যে কৃষি বা হর্টিকালচারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় এরূপ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য ইজারার ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। এরূপ ভূমিকে অকৃষি ভূমি হিসেবে গণ্য করা হবে। কিন্তু নিম্নবর্ণিত ভূমিকে অকৃষি ভূমি হিসেবে গণ্য করা হবে না, যেমন-
(১) যে বাস্তুভূমির ক্ষেত্রে বেঙ্গল টেন্যান্সী এ্যাক্ট, ১৯৯৫ এর ১৮২ ধারা প্রযোজ্য হয়।
(২) যে ভূমি মূলতঃ কৃষি বা হর্টিকালচারের উদ্দেশ্যে লিজ প্রদান করা হয়েছিল কিন্তু ল্যাণ্ড লর্ডের সুস্পষ্ট বা Implied সম্মতি ব্যতিত ১২ বৎসরের কম সময় ধরে উপরোক্ত ভূমি কৃষি বা হর্টিকালচারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্তহীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলে, এবং
(৩) যে ভূমি ‘চা চাষাবাদ’ বা ‘চা তৈরি’-এর জন্য ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু শর্ত হলো এই যে, ভূমি অকৃষি ভূমি এরূপ ভূমিখণ্ডকে ৭২ ধারার আদেশের বলে পরিবর্তিত ভূমিকে অকৃষি ভূমি হিসেবে গণ্য করা হবে।
২৬। অকৃষি প্রজা (Non-Agricultural tenant)ঃ
নন-এগ্রিকালচারাল টেন্যান্সী এ্যাক্ট, ১৯৪৯-এর ২ ধারার (৫) ক্লজ ‘অকৃষি প্রজা’ এর অর্থ, এমন ব্যক্তি যিনি অন্য কোন বক্তির অধীনে উক্ত ব্যক্তির সম্মতিক্রমে অকৃষি ভূমি দখল করেন এবং বিশেষ চুক্তি ব্যতিত ঐ ভূমির জন্য উক্ত ব্যক্তিকে খাজনা (Rent) প্রদানের জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন এবং পূর্বোক্ত ব্যক্তির উত্তরাধীকারীগণও (Successors-in-interest) অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু অন্তর্ভুক্ত হবে না এমন কোন ব্যক্তি যিনি এরূপ কোন ভূমি দখল করেন। যার উপর অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক দখলকৃত কোন গৃহ বা গৃহাঙ্গন অবস্থিত রয়েছে, যদি এরূপ গৃহ এমন কোন ব্যক্তি কর্তৃক নির্মিত হয় অথবা স্বত্বাধীন হয় যার নিকট এরূপ দখলকারী বিশেষ কোন চুক্তি ব্যতিত দখলের জন্য ভাড়া (Rent) প্রদানের জন্য দায়ী বা দায়ী থাকেন।
ব্যাখ্যাঃ এই ক্লজে ‘গৃহ ও প্রাঙ্গন’ (Premises) এর অর্থ, যে কোন বিল্ডিং যেমন- বাড়ি, ফ্যাক্টরী, গুদাম, আস্তাবল, দোকান অথবা কুটির, যা রাজমিস্ত্রী দ্বারা নির্মিত ইট, কংক্রীট, কাঠ, কাদা, ধাতু বা অন্য যে কোন প্রকার উপাদন দ্বারাই নির্মিত হোক এবং এরূপ বিল্ডিং এর সংলগ্ন ভূমিও অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
অর্থাৎ কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির অকৃষি ভূমি তার সম্মতিক্রমে তার অধীনে দখল করেন এই শর্তে যে উক্ত ভূমির জন্য খাজনা প্রদান করা হবে, এরূপ ব্যক্তিকে ও তার উত্তরাধিকারীগণ (Successors in interest) কেও অকৃষি প্রজা বলে গণ্য করা হবে। কিন্তু উক্ত ব্যক্তির ভূমির উপর যদি কোন বাড়িঘর, দালান-কোঠা দোকান ইত্যাদিসহ সংলগ্ন ভূমি থাকে এবং এর দখলদার ভাড়া প্রদানের শর্তে এটা দখল করেন। তাহলে তিনি অকৃষি প্রজা হিসেবে গণ্য হবেন না। অর্থাৎ বাড়িঘর, কুটির, দোকান ইত্যাদির ভাড়াটিয়াদেরকে অকৃষি প্রজা হিসেবে গণ্য করা হয় না।

হোল্ডিং সাব-লেট প্রদান নিষিদ্ধ
এখানে উল্লেখ্য যে, স্টেট একুজিশন এণ্ড টেন্যান্সী এ্যাক্ট-১৯৫০-এর ৯৩ ধারার (১) ও (২) উপ-ধারা অনুসারে, কোন রায়ত তার হোল্ডিং বা এর খত কিংবা অংশকে দরপত্তনী (Sub-let) দিতে পারবেন না, যদি দেন তাহলে হোল্ডিং-এ বা খণ্ডে কিংবা অংশে তার স্বত্ব লোপ পাবে এবং নন-এগ্রিকালচারাল টেন্যান্সী এ্যাক্ট, ১৯৪৯ এবং ২৬ (এ) ধারার (১) ও (২) উপ-ধারা অনুসারে, কোন অকৃষি প্রজা তার টেন্যান্সীর বা টেন্যান্সীর কোন অংশ দরপত্তনী (Sub let) দিতে পারবেন না, যদি দরপত্তনী দেন তা হলে উক্ত টেন্যান্সী বা টেন্যান্সীর অংশে তার স্বত্ব বিলুপ্ত হবে।
সরকার কর্তৃক জমিদারী দখলের প্রতিক্রিয়া
বেঙ্গল টেন্যান্সী-অ্যাক্ট, ১৮৮৫ (বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন, ১৮৮৫) বলে জমিদারগণ এদেশের ভূমির প্রকৃত মালিক ছিলেন এবং প্রজাগণ খাজনা প্রদান পূর্বক জমি দখল ভোগ করতেন। স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী অ্যাক্ট, ১৯৫০ (জমিদারী দখল ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০) এর ৩(১) ধারা বলে সরকার দেশের সকল জমিদারী দখল গ্রহণ করেন এবং ৩(৪) (ই) ধারা মোতাবেক, জামিদারগণের সরাসরি অধীনস্ত এস্টেট, ভালুক, টেনিউর, হোল্ডিং কিংবা টেন্যান্সী এর ভূমি দখলকারী প্রজাগণ (tenant ) সরকারের সরাসরি অধীনে প্রজা হিসাবে পরিগণিত হবেন এবং তাদের দখলীয় খাজনাযোগ্য ভূমির জন্য প্রচলিত হারে সরকার ছাড়া আর কাউকে খাজনা প্রদান। করবেন না।
বেঙ্গল টেন্যান্সী অ্যাক্ট, ১৮৮৫ (বি. টি অ্যাক্ট) মোতাবেক প্রস্তুত খতিয়ানগুলোর (C. S. Khatian) বিশুদ্ধতা সম্পর্কিত উক্ত অ্যাক্টের ১০৩ বি (৫) ধারার ইংরেজীর এবং তার বাংলা অনুবাদ নিম্নে প্রদান করা হলো- Section 103 B, Sub- Section (5): Every entry in a record of rights finally published shall be evidence of the matter referred to in such entry, and shall be presumed to be correct until it is proved by evidence to be incorrect.
১০৩ বি ধারার (৫) উপ-ধারা চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ড অব রাইটস-এর প্রতিটি এন্ট্রি (entry) উক্ত এন্ট্রি সম্পর্কিত বিষয়ের সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে এবং সাক্ষা দ্বারা অশুদ্ধ বলে প্রমাণিত হওয়া পর্যন্ত এটা শুদ্ধ বলে ধরে নিতে হবে।
স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী অ্যাক্ট, ১৯৫০-এর অধীনে খতিয়ানগুলোর বিশুদ্ধতা সম্পর্কে উক্ত এ্যাক্টের ১৯(৩) ধারাটির ইংরেজি উদ্ধৃতি নিম্নে প্রদান করা হলোঃ
এস. এ. খতিয়ানের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে স্টেট একুইজিশন এণ্ড টেন্যান্সী এ্যাক্ট, ১৯৫০-এর ১৯(৩) ধারাঃ
Section 19(3) When all such objections and appeals have been considered and disposed of according to such rules as the [Government] may make in this behalf the Revenue Officer shall finally frame the record and shall cause such record to be finally published in the prescribed manner and the publication shall be conclusive evidence that the record has been duly prepared or revised under this Chapter.
বাংলা অনুবাদ ১৯ ধারার (৩) উপ-ধারা- সরকার এই উদ্দেশ্যে যে বিধান প্রণয়ন। করবেন সে মোতাবেক, যখন এরূপ সকল আপত্তি ও আপীলসমূহ বিবেচিত ও নিষ্পত্তি হবে তখন রেভিনিউ অফিসার রেকর্ডকে চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করবেন এবং নির্ধারিত পস্থায় উক্ত রেকর্ডগুলো চূড়ান্তভাবে প্রকাশ (প্রচার) করবেন এবং উক্ত প্রচার এই মর্মে চূড়ান্ত (Conclusive) সাক্ষ্য বলে গণ্য হবে যে এই অধ্যায়ের অধীনে উক্ত রেকর্ড যথার্থভাবে প্রস্তুত এবং সংশোধিত (revised) হয়েছে।
আরও দেখুনঃ