ভূমির পরিমাণ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় দলিলাদি লিখন, সরকারি হিসাব ও অফিসের কাজ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে ভূমির পরিমাপ হলো:
Table of Contents
ভূমির পরিমাণ পদ্ধতি
ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় দলিলাদি লিখন, সরকারি হিসাব ও অফিসের কাজ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে ভূমির পরিমাপ হলো:
(১) ডেসিমেল বা শতাংশ বা শতক
(২) কাঠা,
(৩) বিঘা এবং
(৪) একর
এই পরিমাপ সর্ব এলাকায় সর্বজন গৃহীত। এটা “সরকারি মান”( Standerd Measurement) বলে পরিচিত।
উক্ত পরিমাপের কতিপয় নিম্নে প্রদান করা হলোঃ
ইঞ্চি, ফুট ও গজঃ
১২” ইঞ্চি = ১ ফুট
৩ ফুট= ১ গজ
(৩) ভূমি যে কোন সাইজের কেন ভূমির দের্ঘ্য ও প্রস্থে যদি ৪৮৪০ বর্গগজ হয় তাহলে এটা ১.০০ একর (এক একর) হবে।
যেমনঃ ভূমির দৈর্ঘ্য ২২০ গজ এবং প্রস্থ ২২ গজ সুতরাং ২২০ গজ×২২ গজ= ৪৮৪০ বর্গগজ।
গান্টার শিকল জরীপঃ
ভূমির পরিমাপ পদ্ধতি সঠিক এবং সহজ করার জন্য ফরাসী বিজ্ঞানী এডমন্ড গান্টা এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তিনি ভূমি পরিমাপের জন্যে ইস্পাত দ্বারা এক ধরণের শিকল আবিষ্কার করেন। তিনি ভূমি পরিমাপের জন্য ইস্পাত দ্বারা এক ধরণের শিকল আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে তার নাম অনুসারেই এই শিকলের নামকরণ করা হয় গান্টার শিকল। আমাদের দেশে গান্টার শিকল দ্বারা জমি জরিপ অত্যন্ত জনপ্রিয়। একর, শতক এবং মাইলষ্টোন বসানোর জন্য গান্টার শিকল অত্যন্ত উপযোগী। এই শিকলের দৈর্ঘ্য ২০.৩১ মিটার (প্রায়) বা ৬৬ ফুট।
গান্টার শিকল ভূমি পরিমাপের সুবিধার্থে একে ১০০ ভাগে ভাগ করা হয় থাকে। এর প্রতিটি ভাগকে লিঙ্ক বা জরীপ বা কড়ি বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।
প্রতি এক লিঙ্ক = ৭.৯২ ইঞ্চি
দৈর্ঘ্য ১০ চেইন ×প্রস্থে ১ চেইন = ১০ বর্গ চেইন = ১ একর
গান্টার শিকলে ১০ লিঙ্ক বা ৭৯.২ ইঞ্চি পর পর নস বা ফুলি স্থাপন করা হয় (নস ফুলি)
২০ লিঙ্ক বা ১৫৮.৪ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়-
৩০ লিঙ্ক বা ২৩৭.৩ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়-
আমাদের দেশে জমি-জমা মাপ ঝোকের সময় চেইনের সাথে ফিতাও ব্যবহার করা হয় সরকারি ভাবে ভূমি মাপার সময় চেইন ব্যবহার করা হয় এবং আমিন সার্ভেয়ার ইত্যাদি ব্যাক্তিগণ ভূমি মাপার সময় ফিতা ব্যবহার করেন ভূমির পরিমান বেশি হলে চেইন এবং কম হলে ফিতা ব্যবহার করাই বেশি সুবিধাজনকবিভিন্ন প্রকারের আঞ্চলিক পরিমাপ।
কানি-গন্ডা, বিঘা-কাঠা ইত্যাদি অঞ্চলে ভেদে পরিমাপ:
আমাদের দেশে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন প্রকারের মাপ ঝোক প্রচলিত রয়েছে এগুলো হলো কানি-গন্ডা, বিঘা-কাঠা ইত্যাদি অঞ্চলে ভেদে এই পরিমাপগুলো আয়তন বিভিন্ন রকমের হয়ে তাকে বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমির পরিমাপ বিভিন্ন পদ্ধতিতে হলেও সরকারি ভাবে ভূমির পরিমাপ একর, শতক পদ্ধতিতে করা হয় সারাদেশে একর শতকের হিসাব সমান
কানিঃ
কানি দুই প্রকার যথা-
(ক) কাচ্চা কানি
(খ) সাই কানি
মৌজা:
ভূমি জরিপের ভৌগলিক ইউনিটকে মৌজা রাজস্ব নির্ধারণ এবং রাজস্ব আদায়ের জন্য এক ইউনিট জমির ভৌগোলিক আভিব্যক্তি হলো মৌজা একটি মৌজা আনুমানিক ভাবে একটি গ্রামের সমান বা এর চেয়ে কিছুটা ছোট-বড় হয় ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভের(CS) সময়ে এক একটি মৌজা এলাকাকে পৃথকভাবে পরিচিতি নম্বর নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশে মোট মৌজার সংখ্যা হচ্ছে ৬৯,৯৯০ টিদাগ নম্বর।
একটি মৌজার বিভিন্ন মালিকের বা একই মালিকের বিভিন্ন শ্রেণিভূক্ত জমিকে নকশায় যে পৃথক পরিচিতি নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করা হয় তাকে দাগ বলে মৌজা মাপের উত্তর-পশ্চিম কোন থেকে দাগ নম্বর প্রদান শুরু হয় এব দক্ষিন-পূর্ব কোনে এসে শেষ হয়।
দাখিলা:
ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের পর তহসিল অফিস হতে ভূমি মালিককে যে রশিদ দেয়া হয় তাকে দাখিলা বলে।
পর্চা:
জরিপের খানাপুরি স্তর পযন্ত কাজ শেষ করে খসড়া খতিয়ান প্রস্তুত করে এর অনুলিপি মালিকের নিকট বিলি করা হয় খতিয়ানের এই অনুরিপি ‘পর্চা’ নামে পরিচিত।
খতিয়ান:
একটি মৌজায় এক বা একাধিক ভূমি মালিকানার বিবরণ তথা ভূমির পরিমান, শ্রেণি,হিস্যা ইত্যাদি যে পৃথক পরিচিতি নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে।
হাল খতিয়ান:
কোন এলাকার সর্বশেষ জরিপে খতিয়ানের রেকর্ড প্রস্তুত হওয়ার পর সরকার দ্বারা বিঙ্গপ্তির মাধ্যমে ঘোষিত হয়ে বর্তমানে চালু আছে এমন খতিয়ানকে হাল খতিয়ান বলে
সাবেক খতিয়ান:
হাল খতিয়ানের পূর্ব পযন্ত চালু খতিয়ানকে সাবেক খতিয়ান বলে,যা বর্তমানে চালু নেই তবে এর গুরুত্ব অনেক বিধায় এর সংরক্ষন দরকার
সিএস খতিয়ান: সিএস খতিয়ানের পূর্ণরুপ Cadastral Survey (দেশব্যাপি জরিপ) খতিয়ান ১৯১০-১৯২০ সালে জরিপ করে এই খতিয়ান তৈরী করা হয়েছিল।
এস এ খতিয়ান:
এসএ খতিয়ান এর পূর্নরুপ State Acquisition (রাষ্ট্রকতৃক অর্জন) খতিয়ান টেস্ট একুইজিশন এন্ড টেনেন্সি আইন প্রণয়ন করে ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত করা হয় জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পর যে খতিয়ান তৈরী করা হয় তাকে বলে এসএ খতিয়ান ১৯৫৬ সালের জরিপে এ খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়।
আরএস খতিয়ান:
আরএস-এর অর্থ হলো Revisional Settlement বা সংশোধণী জরিপ এসএ খতিয়ানের পর ঐ আইনের ১৪৪ ধারা অনুসারে যে খতিয়ান প্রকাশিত হয় (বা হবে) তাকে আর এস খাতয়য়ান বলে।
হোল্ডিং নম্বার:
খতিয়ান শব্দের অর্থ যা হোল্ডিং শব্দের অর্থ তাই ১৯৫০ সালে State Acquisition(SA) আইন অনুসারে ‘হোল্ডিং’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
ভূমি অধিগ্রহন:
কোন স্থবর সম্পত্তি সরকারী প্রয়োজনে বা জনস্বার্থে আবশ্যক হলে উক্ত সম্পত্তি জেলা প্রসাসক কতৃক বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহনের বিধান ভূমি অধিগ্রহন নামে পরিচিত।
অর্পিত সম্পত্তি:
১৯৫৬ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় যেসব পাকিস্থনি নাগরিক দেশ ছেড়ে ভারকে গমন করে পাকিস্থান প্রতিরক্ষা সার্ভিস কতৃক বিধি মোতাবেক তাদের শত্রু বলে ঘোসণা করা হয় এবং তাদের এদেশে রেখে যাওযা সম্পত্তিকে শত্রু সম্পত্তি বলে ১৯৭৪ সালে উক্ত সম্পুত্তিকে অর্পিত সম্পত্তি নামকরণ করা হয়
জমির পরিমাপ:-কোন অজানা কারনে বাংলাদেশে ভূমি সংক্রান্ত যে কোন কাজই কঠিন ও পেঁচানো এক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যা হল দেশের একেক জাইগায় একেক পরিমানগত ভিত্তির উপর নির্ভর করে ভূমি পরিমাপ করা হয় তবে সর্বজজৱনগ্রাহ এ সরকার ঘোষিত পরিমান পদ্ধাতি নিচে উটস্থাপন করা হয়।
ভূমি পরিমপ করা হয়:
ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় দলিলাদি লিখন, সরকারি হিসাব ও অফিসের কাজ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে ভূমির পরিমাপ হলো:
ক. ডেসিমেল বা শতাংশ বা শতক,
খ. কাঠা,
গ. বিঘা ও
ঘ. এককের ভিত্তিতেভূমি যদি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ৪৮৪০ বর্গগজ হয়, তাহলে ১ একর হবে যেমন: দৈর্ঘ্য ২২০ গজ এবং প্রস্থ ২২ গজ সুতরাং ২২০*২২ গজ=৪৮৪০ বর্গগজ বা এক একর। একরএই পরিমাপ সর্ব এলাকায় সর্বজন গৃহীত। এটা “সরকারি মান” ( Standard Measurement) বলে পরিচিত।
একর শতকে ভূমির পরিমাপ:
(১) ডেসিমেল বা শতাংশ বা শতক
(২) কাঠা,
(৩) বিঘা এবং
(৪) ডেসিমেল বা শতাংশ বা শতক।
ডেসিমেল বা শতাংশ বা শতক:
১ শতাংশ = ৪৩৫.৬০ বর্গফুট
১ শতাংশ =১০০০ বর্গ লিঙ্ক
১ শতাংশ = ৪৮.৪০ বর্গগজ
৫ শতাংশ = ৩ কাঠা = ২১৭৮ বর্গফুট
১০ শতাংশ = ৬ কাঠা = ৪৩৫৬ বর্গফুট
১০০ শতাংশ = ১ একর =৪৩৫৬০ বর্গফুট
কাঠা পরিমাপঃ
১ কাঠা = ৭২০ বর্গফুট/৭২১.৪৬ বর্গফুট
১ কাঠা = ৮০ বর্গগজ/৮০.১৬ বর্গগজ
১ কাঠা = ১.৬৫ শতাংশ
২০ কাঠা = ১ বিঘা
৬০.৫ কাঠা =১ একর।
একরের পরিমাপঃ
১ একর = ১০০ শতক
১ একর = ৪৩,৫৬০ বর্গফুট
১ একর = ১,০০,০০০ বর্গ লিঙ্ক
১ একর = ৪,৮৪০ বর্গগজ
১ একর = ৬০.৫ কাঠা
১ একর = ৩ বিঘা ৮ ছটাক
১ একর = ১০ বর্গ চেইন = ১,০০,০০০ বর্গ লিঙ্ক
১ একর = ৪,০৪৭ বর্গমিটার
১ শতক = ১ গন্ডা বা ৪৩৫.৬০ বর্গফুট
বিঘা পরিমাপঃ
১ বিঘা = ১৪,৪০০ বর্গফুট /১৪৫২০বর্গফুট
১ বিঘা = ৩৩,০০০ বর্গলিঙ্ক
১ বিঘা = ৩৩ শতাংশ
১ বিঘা = ১৬০০ বর্গগজ/১৬১৩ বর্গগজ
১ বিঘা = ২০ কাঠা
৩ বিঘা ৮ ছটাক = ১.০০ একর।
লিঙ্ক পরিমাপঃ
১লিঙ্ক = ৭.৯ ইঞ্চি /৭.৯২ ইঞ্চি
১লিঙ্ক =০.৬৬ ফুট
১০০ লিঙ্ক = ৬৬ ফুট
১০০ লিঙ্ক = ১ গান্টার শিকল
১০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ শতক
১,০০,০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ একর
কানি একর শতকে ভূমির পরিমাপ:
১ কানি = ২০ গন্ডা
১ গন্ডা = ২ শতক
১ শতক =২ কড়া
১ কড়া = ৩ কন্ট
১ কন্ট = ২০ তিল
ফুট এর হিসাব:
১ কানি = ১৭২৮০ বগফুট
১ গন্ডা = ৮৬৪ বফু
১ শতক= ৪৩২ বফু
১ কড়া = ২১৬ বফু
১ কন্ট = ৭২ বফু
১ তিল= ৩.৬ বফুবর্গগজ
বর্গফুট অনুযায়ী শতাংশ ও একরের পরিমাণঃ
৪৮৪০ বর্গগজ = ১ একর
৪৩৫৬০ বর্গফুট= ১ একর
১৬১৩ বর্গগজ= ১ বিঘা
১৪৫২০বর্গফুট = ১ বিঘা
৪৮.৪০ বর্গগজ = ০১ শতাংশ
৪৩৫.৬০ বর্গফুট= ০১ শতাংশ
৮০.১৬ বর্গগজ= ১ কাঠা
৭২১.৪৬ বর্গফুট = ১ কাঠা
৫.০১ বর্গগজ = ১ ছটাক
৪৫.০৯ বর্গফুট= ১ কাঠা
২০ বর্গহাত = ১ ছটাকা
১৮ ইঞ্চি ফুট= ১ হাত (প্রামাণ সাই)
এবার আপনি নিজেই হিসাব করে দেখুন আপনার ক্রয়কৃত বা পৈত্রিক জায়গা-জমি বা ফ্ল্যাটের আয়তন কত?
নিন্মে কিছু সব সময় আলোচনা হয় এমন জমি বা ফ্ল্যাটের আয়তন বা পরিমাপ সর্ম্পকে ধারনা দেওয়া হলোঃ-
১. একটি ৩ কাঠার প্লটে মোট জমির পরিমাপ হয়= ২১৬০ স্কয়ার বর্গফুট
২. একটি ৫ কাঠার প্লটে মোট জমির পরিমাপ হয়= ৩৬০০ স্কয়ার বর্গফুট
৩. একটি ১০ কাঠার প্লটে মোট জমির পরিমাপ হয়= ৭২০০ স্কয়ার বর্গফুটএখন আপনি ভেবে দেখুন আপনি কত স্কয়ার বর্গফুটের বাসা তৈরী করবেন বর্তমানে রাজউক ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরের ইমারত নিমার্ণ আইনে প্রায় এক তৃতীয়াংশ জায়গা খালি রাখতে হয় তাহলে এই এক তৃতীয়াংশ জায়গা খালি রেখে আপনি যে প্লট কিনেছেন তাতে কত স্কয়ার বর্গফুটের একটি বাড়ী তৈরী করা যাবে তা ভেবে দেখুন অর্থাৎ আপনি ৩ কাঠার প্লটে ১৪৪০ স্কয়ার বর্গফুটের বাড়ী করে বাকী ৭২০ স্কয়ার বর্গফুট জায়গা খালি রাখতে হবে বাড়ীর চারপাশে ড্রেন ও আলো বাতাসের জন্যধরুন বর্তমানে যারা ফ্ল্যাট কেনেন তাদের ক্ষেত্রে-
যেমন:-
১. ৯০০ স্কয়ার বর্গফুটের ফ্ল্যাটে সিড়ি, ফ্ল্যাটের সামানে, সাইডে, পিছনের জায়গা বাদ দিয়ে টিকবে ৬০০ থেকে ৬৫০ স্কয়ার বর্গফুট
২. ১২০০ স্কয়ার বর্গফুটের ফ্ল্যাটে সিড়ি, ফ্ল্যাটের সামানে, সাইডে, পিছনের জায়গা বাদ দিয়ে টিকবে ৭৮০ থেকে ৮৫০ স্কয়ার বর্গফুট৩. ১৬০০ স্কয়ার বর্গফুটের ফ্ল্যাটে সিড়ি, ফ্ল্যাটের সামানে, সাইডে, পিছনের জায়গা বাদ দিয়ে টিকবে ১২০০ থেকে ১২৫০ স্কয়ার বর্গফুট।
সরকারি ভূমি সেবা বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান:
– রেকর্ডরুম হতে কি কি সেবা প্রদান করা হয় ?
উত্তরঃ রেকর্ডরুম হতে সি.এস, পেটি, এস.এ , আর.এস পর্চার সত্যায়িত অনুলিপি, নক্শার মুদ্রিত কপি এবং নির্বাহী কোর্টের অবিকল সত্যায়িত অনুলিপি প্রদান করা হয়
– সাধারণ ও জরুরী পর্চা/নক্শা কত দিনে সরবরাহ করা হয় ?
উত্তরঃ সাধারণ ও জরুরী পর্চা/নক্শা ৭ কার্য দিবস এবং জরুরী নক্শা/পর্চা ৩ কার্য দিবসে সরবরাহ করা হয়।
– প্রশ্নঃ জরুরী পর্চা/নক্শা ও সাধারণ পর্চা/নক্শায় কত টাকার কোর্ট ফি জমা দিতে হয় ?
উত্তরঃ জরুরী পর্চার ক্ষেত্রে খতিয়ান প্রতি (১৬+২)= ১৮/- টাকার কোর্ট ফি এবং সাধারণ পর্চার ক্ষেত্রে খতিয়ান প্রতি (৮+১)= ৯/- টাকার কোর্ট ফি জমা দিতে হয়। মুদ্রিত নক্শা জরুরী ১০/- টাকার কোর্ট ফি এবং সাধারণ ৫/- টাকার কোর্ট ফি আবেদনের সাথে জমাসহ চালানের মাধ্যমে নক্শা প্রতি ৩৫০/- টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়কালেক্টরেট রেকর্ডরুম থেকে পর্চার (খতিয়ান) জাবেদা নকল/অন্যান্য সার্টিফাইড কপি ও মৌজা ম্যাপ সরবরাহের নিয়মাবলীঃ
০১. প্রতিদিন (বৃহস্পতিবার বাদে) সকাল ১১.০০ টা থেকে দুপুর ১২.০০ টা পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, রেকর্ডরুম এর কক্ষের সামনে আবেদন গ্রহণ করা হয়। সাথে সাথে পর্চা (খতিয়ান)/অন্যান্য সার্টিফাইড কপি/মৌজা নকশা (ম্যাপ) সরবরাহের তারিখ আবেদনকারীকে সীল মোহরকৃত রশিদে জানিয়ে দেয়া হয়।
০২. প্রস্ত্তুতকৃত পর্চা (খতিয়ান) অন্যান্য সার্টিফাইড কপি/মৌজা নকশা (ম্যাপ) নির্ধারিত তারিখে সকাল ৯.০০ টা থেকে বিকেল ৫.০০ টা পর্যন্ত একই স্থানে আবেদনকারীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। কোন কারণে আবেদন বাতিল হলে বা বিবেচনা করা না গেলে তা বিতরণের সময় আবেদনকারীকে জানিয়ে দেয়া হয়:
ক)সাধারণ সময়ে অর্থা আবেদন প্রাপ্তির পরদিন থেকে ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে পেতে চাইলেঃ
# আবেদনে কোর্ট ফি লাগবে ৮ (আট) টাকা
# প্রতি খতিয়ানের জন্য কোর্ট ফি লাগবে ১ (এক) টাকা
খ)জরুরী ভিত্তিতে অর্থাৎ আবেদন প্রাপ্তির পরদিন থেকে ০৩ (তিন) দিনের মধ্যে পেতে চাইলেঃ
# আবেদনে কোর্ট ফি লাগবে ১৬ (ষোল) টাকা
# প্রতি খতিয়ানের জন্য কোর্ট ফি লাগবে ২ (দুই) টাকা
গ)হাল (মুদ্রিত) পর্চা পেতে যা লাগবে
আবেদনে কোর্ট ফি লাগবে, জরুরী ১৬/- টাকার কোর্ট ফি, প্রতিটি পর্চার জন্য ৬০/- টাকার কোর্ট ফি।
০৩ মৌজা নকশার (ম্যাপ) জন্য সাধারণ আবেদনের ক্ষেত্রে ০৫(পাঁচ) টাকা, জরুরী আবেদনের ক্ষেত্রে ১০/-(দশ) টাকার কোর্ট ফি দিয়ে আবেদন করতে হয়। আবেদন বিবেচনা করা গেলে ম্যাপের জন্য যা খরচ লাগবেঃ-
মৌজা নক্সা প্রতিটি ৩৫০/- টাকা, জেলা ম্যাপ প্রতিটি (সাদা) ৫০০-টাকা, (রঙ্গিন) ৭৫০/- টাকা, বাংলাদেশ ম্যাপ প্রতিটি ১২৫০/- টাকা চালান জমা দিতে হয়। সরবরাহের নির্দিষ্ট তারিখে নকশা সরবরাহ করা হয় বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
# রেকর্ড রুমে কোন নগদ টাকা পয়সার বিনিময়ে পর্চা/সার্টিফাইড কপি দেয়া হয় না। শুধু কোর্ট ফি দিয়ে নকল নিতে হয়
# কেউ টাকা পয়সা চাইলে বা দালাল চক্র উৎপাত করলে নিম্ন বর্ণিত কর্মকর্তাগণকে সরাসরি অবহিত করুনস ং ক্ষি প্ত ত থ্য
খতিয়ান হলো জরিপ শেষে প্রস্তুতকৃত জমির লিখিত হিসাবের দলিল এখানে জমির পরিমাণ, মালিক ইত্যাদি তথ্য সংরক্ষিত থাকে
– সিএস (CS)-এর পূর্ণরূপ- Cadastral Survey.
– CS জরিপ সম্পন্ন হয়- ১৯১০-১৯২০.
– SA খতিয়ান-এর পূর্ণরূপ- State Acquisition খতিয়ান
– SA খতিয়ান প্রস্তুত হয় ১৯৫৬ সালে
– ২০ বছর পর পর ভূমি জরিপ (ভূমিশুমারি) করা হয়
– বাংলাদেশে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ আইন পাস হয় ১৯৫০ সালে
– আরএস খতিয়ান মানে হলো Revisional Survey.
– RS খতিয়ান তৈরি হয় এসএ খতিয়ানের অধীনে
– নামজারি অর্থ হলো জমির সর্বশেষ মালিকের নামে দলিলপত্র হালনাগাদ করা
– কোনো পরিবার বা সংস্থা ১০০ বিঘার বেশি জমি দখলে রাখতে পারবে না
– ১০০ বিঘা সমান ৩৩.৩৩ একর
– ভূমির পরিমাপ হলো ডেসিমেল বা শতাংশ বা শতক, কাঠা, বিঘা ও একর
– ভূমির যদি দৈর্ঘ্য প্রস্থে ৪৮৪০ বর্গগজ হয় তাহলে ১ একর হবে
– ৪৮৪০ বর্গগজে ১০০ শতাংশ বা ১ একর
সার্টিফিকেট কেস:
ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়ার দায়ে আপনার বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট কেস হতে পারে। এতে আপনার বাপ দাদার ভোগ দখলকৃত জমি নিলাম হয়ে যেতে পারে। সুতরাং এ দুর্ঘটনা এড়াতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করুন। প্রয়োজনে সার্টিফিকেট অফিসার/সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর সাথে যোগাযোগ করুন।
২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষিজমির খাজনা মওকুফ
হাল নাগাদ জমির বিবরণী দাখিল করেছেন, শুধুমাত্র কৃষিজমি যদি ২৫ বিঘা বা তার নিচে হয় তাহলে খাজনা মওকুফের সুযোগ নিন। আর এ কাজে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর ৫ (পাঁচ) টাকার কোর্ট ফি দিয়ে আবেদন করুন।
খতিয়ানে (Record of Rights) খতিয়ান নম্বর, জেলা ও মৌজার নাম লিপিবদ্ধ থাকে। এছাড়া একাধিক কলামে জমির মালিকের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, দাগ নং (Plot Number), জমির শ্রেণী, পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। খতিয়ানে কোন এক মৌজায় কোন একজন মালিকের জমির বিবরণ থাকে। আবার একটি খতিয়ানে একাধিক মালিকের জমির বিবরণও থাকতে পারে। এ খতিয়ানগুলো সাধারণত মৌজা ওয়ারী তৈরী করা হয়। অর্থাৎ কোন একটি মৌজার সকল খতিয়ান একসাথে বাধাই করা হয়। এজন্য রেকর্ড বইকে অনেকে সাধারণ বা প্রচলিতভাবে Volume- ও বলে থাকেন।
পরচাযখন পৃথক একটি কাগজে খতিয়ানের অনুলিপি তৈরী করা হয় তখন তাকে পরচা বলা হয়। এই অনুলিপি সাধারণত হাতে লিখে বা কম্পোজ করে তৈরী হয়ে থাকে। অনুলিপি যখন রেকর্ড রুমের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষরিত হয় তখন তাকে নকল বা Certified Copy বলে। সহজ কথায় পরচা হল হাতে লিখিত বা Compose কৃত খতিয়ানের কপি বা খসড়ার রূপ।আমরা সিএস, এসএ এবং আরএস পরচা’র নাম শুনে থাকি। এগুলো কী?
পরচা কী, সে সম্বন্ধে আমরা একটি ধারণা ইতোমধ্যেই পেয়েছি। সিএস, এসএ এবং আরএস পরচা হল আসলে বিভিন্ন রেকর্ডের খসড়া বা অনুলিপি বা কপি। কাজেই পরচা সিএস, এসএ, আরএস বা মহানগরে জরিপ এই ৪ প্রকার হতে পারে। এছাড়া জরিপ চলা কালে প্রাথমিকভাবে হাতে লেখা একটি খসড়া বিবরণ যাচাইয়ের জন্য জমির মালিককে দেওয়া হয়। একে মাঠ পরচা বা হাত পরচা বলে।
পরচা কোথায় পাওয়া যায়?
পরচা বা রেকর্ডের সহি মুহুরী নকল (Certified Copy) পাওয়া যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (DC office)- এর রেকর্ডরুমে। নির্ধারিত ফী সহ আবেদন করলে রেকর্ড রুম থেকে পরচা সরবরাহ করা হয়। পরচা কখনো কোন দালালের কাছ থেকে নেওয়া যৌক্তিক নয়। এতে ভুল থাকতে পারে। কেবলমাত্র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষরসহ পরচা-ই আসল বা Authentic.পরচা কেন প্রয়োজন?
জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিবরণ, জমির খতিয়ান-দাগ, অংশ, হিসসা, শ্রেণী ইত্যাদি জানার জন্য পরচা প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে জমি কেনাবেচার সময় পরচা যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়। পরচা যাচাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস, এসি (ল্যান্ড) অফিস বা রের্কডরুমে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
ওয়ারিশ সনদ
উত্তরাধিকার মুসলিম আইনের গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পরেই তার সম্পদের উপর উত্তরাধিকার প্রাপ্তি/ অপ্রাপ্তির প্রশ্ন আসে। তখন ওয়ারিশ সনদের গুরুত্বও মুখ্য হয়ে ওঠে।ওয়ারিশ সনদ সাধারণত দেওয়ানী আদালত প্রেরিত যা একজন মৃত ব্যক্তির আইনী উত্তরাধিকারগণ পেয়ে থাকে। যদি উইল না করেই কোন ব্যক্তি মারা যান, কোর্ট ওয়ারিশ সনদ প্রদান পূর্বক মৃত ব্যক্তির ঋণ/কর্জ নির্ধারণ করতে পারে।কেন দরকার?
সনদটি উত্তরাধিকারগণকে তাদের নামে কোন সম্পত্তি হস্তান্তরিত আছে কিনা, বা উত্তরাধিকার যোগ্য কতটুকু সম্পদ আছে তা সত্যায়ন করে থাকে। উত্তরাধিকারী/সুবিধাভোগীর আবেদনের প্রেক্ষিতে উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী সনদটি ইস্যু করা হয়। ওয়ারিশ সনদ কার্যকরী, কিন্তু সব সময় এর বলে মৃতের সম্পদে উত্তরাধিকার নাও পাওয়া যেতে পারে। সাথে প্রয়োজন, একটি মৃত্যু সনদ এবং অনাপত্তি সনদ। যে আদালতের এখতিয়ারে সম্পত্তি রয়েছে, সেখানে আবেদন জারি করতে হয়। ওয়ারিশ সনদের নিয়ম-কানুন উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫ (The Succession Act, 1925) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
পাওয়ার অব এটর্নি কী?
হাবিব সাহেব চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবেন। কিন্তু দেশে কিছু জরুরী কাজ রয়েছে যেখানে তাকে প্রয়োজন হতে পারে। কী করবেন কী করবেন ভাবতে ভাবতে মাথায় এলো পাওয়ার অব এটর্নির চিন্তা। এর মাধ্যমে হতে পারে তার সমস্যার সমাধান। পাওয়ার অব এটর্নি এমন এক ধরণের দলিল যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে কোন কাজ করার ক্ষমতা দিতে পারে তার পক্ষ থেকে।
সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, ভাড়া আদায় করা, আইনগত কাজ পরিচালনা করা সহ আরো নানা ক্ষমতা এর মাধ্যমে দেয়া যায়। পাওয়ার অব এটর্নিতে মূল মালিকের মতো প্রায় একই ক্ষমতা পাওয়ার গ্রহীতার থাকতে পারে।সবাই এই ক্ষমতা নিতে পারেনা। চুক্তি করার যোগ্যতা ( নির্দিষ্ট বয়স, সুস্থতা ) থাকলেই শুধুমাত্র এই ক্ষমতা নেয়া সম্ভব।
মৃত্যু, উদ্দেশ্য সাধন, মেয়াদের অবসান প্রভৃতি কারণে পাওয়ার অব এটর্নির অবসান হতে পারে।তফসিল (Schedule)।
তফসিল (Schedule):
জমিজমার ক্ষেত্রে তফসিল বলতে আসলে ভূমির পরিচয়কে বুঝায়। অর্থাৎ জমিটি কোথায়, এর মালিক কে ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। তফসিলে জেলার নাম, উপজেলা বা থানার নাম, মৌজার নাম, জমির দাগ-খতিয়ান নম্বর উল্লেখ করা হয়।এতে অনেক সময় জমির পরিমাণ, শ্রেণী এবং মালিকানার বর্ণনাও থাকে।
দাগনম্বর :
এটি আসলে কোন সরলরেখা বা বক্ররেখা নয়। দাগ হচ্ছে আসলে জমির Plot Number। আমরা জানি সাধারণত মাপজোকের মাধ্যমে জমিকে একাধিক অংশে বিভক্ত করা হয়। এর প্রতিটি খন্ডকে দাগ বা Plot বলে। জরিপের সময় এরকম প্রত্যেক খন্ড জমিকে একটি নম্বর দ্বারা সূচিত করা হয়। এই নম্বরকেই দাগ নম্বর বলে।
আরও দেখুন: