চুক্তির বিবেচনা | চুক্তি আইন

চুক্তির বিবেচনা আজকের ভিডিও এর আলোচনার বিষয়। “চুক্তি আইন – চুক্তির বিবেচনা [ Law of Contracts on Consideration of Contracts ]” ক্লাসটিতে “চুক্তি আইন” সম্পর্কিত সকল তথ্য তুলে ধরা হবে। চুক্তি আইন নিয়ে সকল তথ্য তুলে ধরার জন্য “আইন শিক্ষা গুরুকুল” নিয়ে এসেছে “চুক্তি আইন [ Contract Law ]” সিরিজ। “চুক্তি আইন [ Contract Law ]” সিরিজটির মাধ্যমে আপনারা খুব সহজেই “চুক্তি আইন” সংক্রান্ত সকল বিষয়বস্তু খুব সহজেই বুঝতে পারবেন।

 

চুক্তির বিবেচনা

চুক্তির অপরিহার্য উপাদানসমূহ

Essential elements of Contract

প্রতিটি সম্মতি আইন দ্বারা বলবৎযোগ্য হবে যখন নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করা হবে। এ শর্তগুলিকে চুক্তির অপরিহার্য উপাদান বলা হয়। উপাদানসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১। একাধিক পক্ষ (More than one party) একটি বৈধ চুক্তিতে একাধিক পক্ষ থাকতে হবে। যেমন একটি পক্ষ কিছু বিক্রয় করে আর অন্য পক্ষ তা ক্রয় করে। অর্থাৎ একটি চুক্তিতে দুই বা ততোধিক পক্ষ থাকে।

২। বৈধ প্রস্তাব (Lawful offer): চুক্তি আইন অনুসারে যখন এক বা এাধিক পক্ষ অন্য পক্ষ বা পক্ষগণের নিকট কোনো কাজ করা বা কাজ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায় তখন তাকে প্রস্তাব বলা হয়। প্রস্তাব অবশ্যই সুস্পষ্ট এবং আইন সম্মত হতে হবে।

 

চুক্তির বিবেচনা

 

৩। বৈধ স্বীকৃতি (Lawful acceptance): চুক্তি সম্পূর্ণ করতে হলে শুধুমাত্র প্রস্তাব পেশ করলে হবে না তা অপর পক্ষকে গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ যে পক্ষের কাছে প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে সে পক্ষ যদি শর্তহীনভাবে তা গ্রহণ করে তবে তাকে প্রস্তাব গ্রহণ বা স্বীকৃতি বলা হয়। এই গ্রহণ বা স্বীকৃতি অবশ্যই সুস্পষ্ট এবং আইন সম্মত হতে হবে।

৪। বৈধ প্রতিদান (Lawful consideration): সাধারনত প্রতিদান ছাড়া চুক্তি আইন বলবৎ যোগ্য নয়। অবশ্য এর কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। অর্থাৎ চুক্তি তখনই বলবৎযোগ্য যখন চুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট এক পক্ষ কিছু পায় আর অন্য পক্ষ কিছু দেয় বা প্রদান করে। এ ‘কিছু’ দেওয়া অথবা অর্জনকে প্রতিদান বলা হয়। কোনো কিছুর বিনিময় ব্যতিত কোনো কাজ করার সম্মতি সাধারনত আইনে বলবৎযোগ্য নয়। প্রতিদান অতীত, বর্তমান এবং ভবিষৎ হতে পারে। তবে শুধুমাত্র সে সকল প্রতিদান বৈধ যা আইন সম্মত।

৫। আইন সম্মত উদ্দেশ্য (Lawful object): চুক্তির উদ্দেশ্য অবশ্যই আইন সম্মত অর্থাৎ বৈধ হতে হবে। যদি চুক্তির উদ্দেশ্য অবৈধ হয় তা হলে সেই চুক্তি অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।

৬। পক্ষসমূহের যোগ্যতা (Capacity of parties): সম্মতিতে অংশগ্রহণ সকল পক্ষের চুক্তিতে অংশগ্রহনে আইনগত যোগ্যতা থাকতে হবে অন্যথায় চুক্তি আইনে বলবৎ করা যাবে না। উদাহরণ স্বরুপ নাবালক, মদ্যপ, পাগল বা এ প্রকৃতির ব্যক্তিগন সাধারনত চুক্তিতে অংশ গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। কিছু ব্যতিক্রম ব্যতিত এ প্রকৃতির ব্যাক্তিরা যদি চুক্তিতে অংশগ্রহণ করেন তা হলে চুক্তিটি আইনে বলবৎযোগ্য হবে না।

৭। স্বাধীন মতামত (Free consent): সম্মতির পক্ষদ্বয়ের মধ্যে ঐক্যমত অবশ্যই স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে হতে হবে নতুবা চুক্তি আইন কার্যকর হবে না। যদি সম্মতি জোরপূর্বক, অনধিকার চর্চা বা ত্রুটিপূর্ণ তথ্যের মাধ্যমে মতামতকে প্রভাবিত করা হয় তবে সে চুক্তি বৈধ বলে গণ্য করা হবে না।

৮। নিশ্চয়তা (Certainty): সম্মতি অবশ্যই অস্পষ্ট হওয়া যাবে না। সম্মতির অর্থ সকল পক্ষের নিকট স্পষ্ট হতে হবে অন্যথায় আইন দ্বারা তা বলবৎ করা যাবে না।

৯। কার্যকর করার সম্ভাবনা (Possibility of performance): সম্মতি বাস্তবায়ন যোগ্য হতে হবে। একটি অসম্ভব বা অসাধ্য কার্য সম্পাদনের প্রতিশ্রুতি আইনে কার্যকর করা যাবে না। অতএব সম্মতি এমন হতে হবে যা বাস্তবায়ন সম্ভব।

১০। বাতিল চুক্তি (Void agreement): চুক্তি আইনে উল্লেখ করা আছে কিছু সম্মতি আইন দ্বারা বলবৎ করা যাবে না, যেমন-

ক) বিবাহ থেকে বিরত থাকার সম্মতি।
খ) ব্যবসা থেকে বিরত থাকার সম্মতি।
গ) আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে বিরত থাকার সম্মতি।
ঘ) বাজী ধরা বা রাখা সম্মতি।

১১। আইনি বাধ্যবাধকতা (legal formalities): চুক্তি আইনে চুক্তি কার্যকর করতে হলে অবশ্যই আইনি বাধ্যবাধকতা অনুসরন করতে হবে। যেমন মৌখিক চুক্তি গ্রহণযোগ্য তবে সকল ক্ষেত্রে নয়। অনেক ক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী চুক্তি লিখিত এবং/অথবা নিবন্ধিত হওয়া প্রয়োজন। যে সকল ক্ষেত্রে চুক্তি বিধি মোতাবেক সম্পাদনের প্রয়োজন, যেমন লীজ, বিক্রয় এবং সম্পত্তি বন্ধক ইত্যাদির ক্ষেত্রে চুক্তি লিখিত হওয়া প্রয়োজন। নিবন্ধন আইনে যে সকল ক্ষেত্রে চুক্তি নিবন্ধন বাধ্যতামূলক সে সকল ক্ষেত্রে চুক্তি অবশ্যই নিবন্ধিত করতে হবে। অনেক সময় মৌখিক চুক্তি প্রমান করা কষ্টকর হয়ে থাকে, ফলে বাধ্যবাধকতা না থকলেও গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিসমূহ লিখিত হয়ে থাকে।

উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রতিয়মান হয় যে, সকল সম্মতি বা মতৈক্য চুক্তি হিসেবে গন্য হয় না। সম্মতির জন্য তিনটি উপাদান প্রয়োজন: প্রস্তাব, তা গ্রহণ এবং প্রতিদান। কিন্তু সম্মতির তিনটি উপাদান থাকলেই চুক্তি বলা যাবে না। বৈধ চুক্তি হতে হলে সম্মতিতে উপরোক্ত অপরিহার্য উপাদানসমূহের উপস্থিতি থাকতে হবে। সেই কারণে বলা হয় “সকল চুক্তিই সম্মতি, কিন্তু সকল সম্মতিই চুক্তি নয়”। (All contracts are agreement but all agreements are not contracts).

 

চুক্তির জামিন

 

চুক্তির বিবেচনা নিয়ে বিস্তারিত ঃ

 

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment